ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যথাসময়ে নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

যথাসময়ে নির্বাচন

প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী ইতালি সফর শেষে সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন গণভবনে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ। প্রতিটি বিদেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এসে রাষ্ট্রপতিকেও এ সম্পর্কে অবহিত করেন। এর উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রীয় সফরের ভাল-মন্দ বিশেষ করে দেশের সাফল্য ও অর্জন সম্পর্কে সম্যক জানানো। এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজের মত ও সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন সাংবাদিক সম্মেলনে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ইতালি সফরের অর্জিত সাফল্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার জেলদ-, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সর্বোপরি প্রশ্নফাঁস সম্পর্কে খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছেন। তবে প্রশ্নোত্তর পর্বে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিষয়টি। সবাই জানেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে মামলা দায়ের করেছিল ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দুদক। বর্তমান সরকারের এতে আদৌ কোন দায়ও নেই, দায়িত্বও নেই। বরং খালেদা জিয়া স্বয়ং এবং তাঁর নিয়োজিত আইনজীবীরা ইচ্ছামতো ও মর্জিমাফিক মামলার শুনানি দীর্ঘায়িত করেছেন। কয়েক বছর ধরে মামলা চলার পর আদালত সুচিন্তিত রায়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে খালেদা জিয়া ও সাঙ্গোপাঙ্গদের জেলদ- ও অর্থদ- দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং বয়স ও সামাজিক সুবিধা বিবেচনায় বিএনপি নেত্রীকে কিছু ছাড়ও দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। পরে আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে ডিভিশন ও নিজস্ব গৃহকর্মীসহ সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। আশার কথা এই যে, বিএনপি নেত্রীর জামিন তথা দ- মওকুফের প্রত্যাশায় তার দল ও আইনজীবীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে। অতঃপর যে প্রশ্নটি অনিবার্য সামনে এসেছে তা হলো, দুর্নীতির দায়ে দ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়া অযোগ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না? একই কথা প্রযোজ্য তারেক জিয়ার ক্ষেত্রেও, যিনি একই সঙ্গে পলাতক ও দ-প্রাপ্ত। তিনি এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও বটে, বিএনপি যে কাজটি করেছে মর্জিমাফিক দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে। এ অবস্থায় সর্বত্র যে প্রশ্নটি আলোচিত হচ্ছে তা হলো, খালেদা জিয়া ও তারেককে বাইরে রেখে বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা? এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষার্ধে যথাসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অবস্থায় বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে কিছুই করার নেই। অতীতেও বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট দেশব্যাপী অবরোধ, সহিংস আন্দোলনসহ জ্বালাও পোড়াওয়ের মাধ্যমে মানুষ মেরে নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বানচালের চেষ্টা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। এবারও ব্যর্থ হবে তারা। বরং প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখেছেন, দলটিতে কি কোন ভাল যোগ্য ও সৎ নেতা নেই, যিনি চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব নিতে পারেন! সর্বশেষ যা জানা যায় তা হলো, খালেদা জিয়ার আপীল করার সিদ্ধান্ত ও প্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এক্ষেত্রে অন্তত তিনটি গ্রুপের কথা শোনা যাচ্ছে। আরও যা জানা যায় তা হলো, খালেদা জিয়ার রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতে অন্তত সাতজন আইনজীবী আবেদন করেছিলেন আলাদাভাবে। ইতোপূর্বে তারা নেত্রীর সময় মতো ডিভিশনের জন্য আবেদন জানাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। এ অবস্থায় বিএনপি নেত্রীর জামিনের শুনানি ও কারাবাস হয়ত দীর্ঘায়িত হতে পারে। অন্যদিকে দুর্নীতির দায়ে জেলদ- ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া নির্বাসিত ও পলাতক। এহেন অবস্থা থেকে দলটিকে উদ্ধার করার দায়িত্ব বর্তেছে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতাদের ওপর। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা নিশ্চয়ই এর গুরুত্ব সম্যক উপলব্ধি করবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নেবেন। দেশে উন্নয়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে সেটাই প্রত্যাশিত। অতীতের ভুল থেকে বিএনপি শিক্ষা গ্রহণ করবে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই সদিচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে।
×