ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মুরগি চোরের কাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

তিন মুরগি চোরের কাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইমরান, রাজু ও রাসেল। তিনজনেই মুরগি চোর। আবার মাদকসেবীও। তাদের বিচরণ শাহজালাল বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন কেন্দ্রিক। এদের দু’জন কিশোর একজন তরুণ। পেশায় ও নেশায় একই ধরনের। বিমানবন্দর এলাকা দিয়ে শেষ রাতে মুরগিবাহী গাড়িতেই তাদের উৎপাত। গাড়ি একটু স্লো হলেই পেছন থেকে মুরগি টেনে দৌড়। ছিনতাই ও মাদক বাণিজ্যেও তারা দুর্ধর্ষ। সোমবার রাতে তাদের হাতেনাতে ধরার পর নেয়া হয় শাহজালাল বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। অবনত মস্তকে তারা যখন কাঠগড়ায় দ-ায়মান, তখন বেরিয়ে আসে জীবনে ঘটে যাওয়া বিচিত্র সব কাহিনী। শুনে বিচারক নিজেও বিস্মিত। তার কৌশলী অথচ রসালো জেরার মুখে ওদের পেট থেকে গদগদ বের হতে থাকে অপরাধী হয়ে ওঠার নেপথ্য কথা। প্রথম জন ইমরান, সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ। মুরগি চোর হলেও চুলের কাটিংটা আধুনিক স্টাইলের। বিচারকের পরামর্শ- সত্য কথা বললে সাজা অর্ধেক হবে-মিথ্যার আশ্রয় নিলে দ্বিগুণ। কিন্তু কতোর অর্ধেক বা দ্বিগুণ সেটা তিনি উহ্য রাখেন। কিশোর ইমরান তাতেই যেন অনেকটা সম্বিৎ ফিরে পেল। বিচারক বনসুরি ইউসুফের প্রথম প্রশ্নÑ কেন মুরগি চুরি কর। ইমরানের সরলোক্তি-স্যার গাজা খাই বলে। পরের প্রশ্নÑ গাজা কেন খাও। স্যার, মাথায় টেনশন থাকে বলে। এমন উত্তরে উপস্থিত সবাই কৌতূহলি হয়ে ওঠে। টেনশন কেন কর- জানতে চাওয়া হলে ইমরানের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে- ‘স্যার ঘরে অভাব। ঢাকায় আইচি, ট্যাকা পয়সা কামাইতে, না পারলে তো জীবনডা বরবাদ।’ জীবনটা বরবাদ হওয়ার আশঙ্কায় ইমরানের মুরগি চুরি ও নেশায় জড়ানোর স্বীকারোক্তিতে বিচারক প্রগলিত। বিচারকও নাছোড় বান্দা। জেরার শেষ নেই। ‘আচ্ছা চলন্ত গাড়ি থেকে টান মারার সময় মুরগির যখন অর্ধেক মাথা ছিঁড়ে যায়- তখন সেটা দিয়ে কি কর। জবাবে-নিরুত্তর ইমরান। পরের পালা রাজুর। নেশার ঘোরে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো কঠিন। বিচারকের সামনেই ধপাস করে বসে যায়। এতকিছু থাকতে মুরগি চুরি কেন? আত্মরক্ষার্থে রাজুর কৈফিয়ত- স্যার শরীরটা ভাল লাগছে না। একটু-আধটু খাই। আর কি করুম। তৃতীয়জন রাসেল নিজেকে ৩নং রুটের বাসের একজন হেলপার হিসেবে পরিচয় দিয়ে নির্দোষ দাবি। একটু আগে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে পুলিশ তাকে পাকড়াও করে। বিচারকের জেরা-তাহলে তো পকেটে সারাদিনের পরিশ্রমের টাকা থাকার কথা। আছে? নিরুত্তর রাসেল। পাশেই দ-ায়মান পুলিশের সাক্ষ্য, স্যার এই ছেলে আজ বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় সিভিল ড্রেসের দু’জন পুলিশকে ছিনতাই করতে চেয়েছিল। তখনই পাবলিকে তাকে ধরে পুলিশে দেয়। পুলিশের সাক্ষ্য আর খ-াতে পারেনি সে। সবার যুক্তি-তর্ক শুনে বিচারকের রায়-প্রত্যেককে তিন মাসের সশ্রম কারাদ-। রাতেই তাদের পুলিশে দেয়া হয়। শাহজালাল বিমানবন্দরের মিয়া ভাই হিসেবে পরিচিত ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জানালেন, ওদের টার্গেট ভোর রাতে মুরগিবাহী গাড়ি। তারা এমনভাবে বাজপাখির মতো ছোবল মেরে মুরগি চুরি করে নিয়ে যায় অনেকেই টেরও পায় না। যারা টের পায় তারা এদের ধরতেও পারে না। প্রায়ই এমন অভিযোগ আসে।
×