ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্ন আয়ের দেশে নবজাতকের মৃত্যুহার হাজারে ২৭

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নিম্ন আয়ের দেশে নবজাতকের মৃত্যুহার হাজারে ২৭

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নবজাতকের মৃত্যুহার গড়ে প্রতি হাজারে ২৭। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মারা যায় ৩ শিশু। সবচেয়ে নিরাপদ স্থানগুলোর তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জন্ম দেয়া নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি ৫০ গুণ বেশি। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ইউনিসেফ মঙ্গলবার বিশ্বের নবজাতকদের পক্ষ থেকে দাবি জানাতে ও সমাধান প্রদানে ‘এভরি চাইল্ড এ্যালাইভ’ শীর্ষক বৈশ্বিক প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে। যা ২০১৭ সালের নবেম্বর মাসে শুরু হওয়া বাংলাদেশ জাতীয় নবজাতক ক্যাম্পেনকেও বেগবান করবে। এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, দাতা সংস্থা, বেসরকারী খাত, পরিবার ও ব্যবসায়ী খাতের প্রতি জরুরী আহ্বান জানাচ্ছে ইউনিসেফ। ২০৩০ সালের মধ্যে শিশু ও নবজাতকের সব ধরনের প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঠেকাতে বৈশ্বিক এ আহ্বানে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার এ প্রচার কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিরোধযোগ্য কারণে কোন শিশুর মৃত্যু কাম্য নয় এবং প্রতিটি মা ও শিশুর কাছে আমাদের সাশ্রয়ী, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। এই প্রচারাভিযানের মাধ্যমে ইউনিসেফের লক্ষ্য হচ্ছে নীতিমালা পরিবর্তন ও অর্থায়ন সমস্যার সমাধানকে প্রভাবিত করার জন্য জনসমর্থন সংগঠিত করা এবং এর জন্য ব্যক্তি, ব্যবসা খাত ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া। বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, গিনি-বিসাউ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালাউই, মালি, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তানজানিয়া এই ১০টি দেশকে লক্ষ্য করে প্রচারাভিযানটি চালানো হবে। বিশ্বব্যাপী যত নবজাতকের মৃত্যু হয় সম্মিলিতভাবে এই দেশগুলোতেই হয় তার অর্ধেকেরও বেশি। প্রতিটি মা এবং শিশুরই যে সাশ্রয়ী ও মানসম্পন্ন সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে সেই মূলতত্ত্বের পক্ষে জনমত গড়ে তোলাই এই প্রচারাভিযানের লক্ষ্য। এটি ইউনিসেফ ও সহযোগীদের স্থান; মানুষ: নিয়োগ করা, প্রশিক্ষণ দেয়া, মা ও নবজাতকের যতেœ দক্ষতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও ধাত্রী ধরে রাখা ও তাদের ব্যবস্থাপনা করা; প্রত্যেক মা ও শিশুর হাতের নাগালের মধ্যে পানি, সাবান, বিদ্যুত, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণসহ পরিচ্ছন্ন ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং ক্ষমতা : কিশোরী, মা ও পরিবারগুলো যাতে মানসম্পন্ন যতœ পাওয়ার দাবি জানাতে এবং পেতে পারে সেজন্য তাদের ক্ষমতায়ন করতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, দেশটি এমডিজি-৪ অর্জন করেছে এবং নবজাতকের মৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ দেশে ১৯৯০ সালে ২ লাখ ৪১ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয় এবং ২০১৬ সালে ওই সংখ্যা কমে ৬২ হাজারে নেমে আসে। সরকারী স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলো ভালভাবে চলা সত্ত্বেও বিশ্বের যে ১০টি দেশে সবচেয়ে বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয়, বাংলাদেশ এখনও সেসব দেশের একটি। এখানে ৮৮ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু হয় মূলত তিনটি প্রতিরোধযোগ্য কারণে। নবজাতকের মৃত্যু ছাড়াও বাংলাদেশে এখনও প্রতিবছর ৮৩ হাজার মৃত শিশুর জন্ম হয়। মঙ্গলবার প্রকাশিত নবজাতকের মৃত্যু সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈশ্বিকভাবে নবজাতক মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবেই বেশি। বিশেষ করে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোতে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নবজাতকের মৃত্যুহার গড়ে প্রতি হাজারে ২৭। প্রশিক্ষিত ধাত্রী, পরিষ্কার পানি, জীবাণুনাশক, শিশুর জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেই তাকে বুকের দুধ খাওয়ানো, শিশুকে মায়ের ত্বকের সঙ্গে লেপ্টে রাখা ও ভাল পুষ্টি প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এসব মৃত্যু প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
×