ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিরো লাইন থেকে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জিরো লাইন থেকে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে অনিশ্চয়তার আবর্তে রেখে মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে গণকবরসহ ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন বুলডোজার লাগিয়ে সমান করে দিচ্ছে। এছাড়া নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পাশাপাশি বাঙ্কার নির্মাণ ও সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সীমান্ত এলাকায় ৮টি নতুন ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে সেনা সমাবেশ বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। অপরদিকে, তমব্রু সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশে দুপক্ষের সরকারী পর্যায়ের অনুষ্ঠিত বৈঠকে জিরো লাইনে অবস্থানরত ৬ সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে সে দেশের অভ্যন্তরে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুপুরে এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর তমব্রু সীমান্তের ওপার থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনা শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় বিজিবির টহলকে ফাঁকি দিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে উখিয়া কুতুপালং ও বালুখালি ক্যাম্পমুখী হয়েছে। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছে সীমান্তের ওপার ও এপারের সূত্রগুলো। এর আগে গত দু’দিনে প্রায় তিন শ রোহিঙ্গা জিরো লাইন ছেড়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলেও তথ্য রয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া পয়েন্টে (তমব্রু লেফট) দুদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে জিরো পয়েন্টে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। সঙ্গে ছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন, বিজিবির কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বনিক, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ ১২ সদস্যের একটি দল। বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষেও অনুরূপসংখ্যক প্রতিনিধি অংশ নেন। বৈঠকে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রুর কোনারপাড়ার সীমান্তের নো-ম্যান্সল্যান্ডে আশ্রিত ৬ সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে মিয়ানমারের পদস্থ কর্মকর্তাদের একটি দল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানায়। বৈঠকস্থলে নিয়ে যেতে ঘুমধুম নো-ম্যান্সল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সে দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর গাড়িতে করে নেয়া হয়। অপরদিকে, মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যসংলগ্ন সীমান্ত এলাকার অদূরে নতুন করে সেনা সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে। নতুন আটটি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে সেখানে সৈন্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এছাড়া কাঁটাতারের ভেড়া নির্মাণ ও নতুন করে বাঙ্কার নির্মাণ করা হচ্ছে। মিয়ানমার পক্ষ হঠাৎ করে কেন এসব কর্মকা- শুরু করেছে এর কোন ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে সাধারণ রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছেন, রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি এখনও রোহিঙ্গাদের অনুকূলে আসেনি, আসার কোন লক্ষণও নেই। আগামীতে প্রত্যাবাসন শুরু হলে রোহিঙ্গারা তাদের পূর্বে নিজ বসতবাড়ি ও জমিজমা ফেরত যে পাবে না তাও নিশ্চিত। প্রত্যাবাসন শুরু হলে তাদেরকে ক্যাম্পেই রাখা হবে। এ জন্য ক্যাম্প নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এদিকে, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কাছে স্পর্শকাতর সামগ্রী সরবরাহ হচ্ছে ॥ উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত কতিপয় এনজিও এবার রোহিঙ্গাদের লোহার রড, দা, কুড়ালসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর সামগ্রী সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা সেবার নামে ত্রাণ সামগ্রী লুটপাটকারী ডেনিস নামের একটি এনজিও প্রত্যন্ত এলাকায় গুদাম ভাড়া করে ওইসব লৌহজাত সামগ্রী মজুদ করে তা রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করেছে বলে অভিযোগ আনেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ওইসব এনজিওর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা যদি কোন দিন, কোনভাবে রোহিঙ্গা কর্তৃক আক্রান্ত হয়, তাহলে তার দায়ভার গোপনে রোহিঙ্গাদের লোহার সামগ্রী বিতরণকারী ওই এনজিওকে বহন করতে হবে। প্রত্যাবাসন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনি সরকারের একজন প্রতিনিধি হলেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাই তিনি জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ কোন এনজিওকে উখিয়ায় করতে দেয়া হবে না বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, চিহ্নিত লুটপাটকারী কতিপয় এনজিও বিদেশী টাকা পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিকে তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো ক্যাম্পে কাজ করছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা দিনের পর দিন আসকারা পেয়ে স্থানীয়দের প্রতি অন্যায় অবিচার ও নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া স্থানীয়দের বসতভিটার জায়গা জমি ও সহায় সম্পত্তি অন্যায়ভাবে দখল করে বিভিন্নভাবে ভোগ করছে। কিছু বলতে গেলে এনজিওদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তিনি ওইসব এনজিওদের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নীতিমালা বহির্ভূত বিতরণ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান। বাংলাদেশে আসছেন তিন নোবেলবিজয়ী নারী ॥ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্বচক্ষে দেখতে ৮দিনের সফরে কাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে আসছেন তিন নোবেলবিজয়ী তিন নারী ইরানের শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান ও যুক্তরাজ্যের মেইরিড ম্যাকগুয়ের। নারীপক্ষের আমন্ত্রণে তারা ঢাকায় আসছেন। এছাড়া, বিশ্বখ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী এ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে সরকার। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এ হলিউড তারকা।
×