ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীতে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আগামীতে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে করণীয় নির্ধারণে এবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের (আইটি) নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ওই বৈঠকে থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, বিটিআরসির আইটি (তথ্য প্রযুক্তি) বিশেষজ্ঞ এবং দেশের খ্যাতনামা তথ্য প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে খুব শীঘ্রই এই সভা আহ্বান করা হবে। তবে আগামীতে যেকোন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যেকোন প্রয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী। মঙ্গলবার আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা ও চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষামন্ত্রীর নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপত্বিতে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বক্তব্য রাখেন। অন্যদের মধ্যে সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক চলে সন্ধ্যা নাগাদ। কিন্তু সভা শেষে বৈঠকের ব্যাপারে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কিছুই বলেননি কোন মন্ত্রী। তবে শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী পরীক্ষায় যাতে কোন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সামগ্রিক বিষয়ে কার্যকর যেকোন উদ্যোগ গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুত রয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সব মন্ত্রণালয়কে সম্মিলিতভাবেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সম্মিলিতভাবে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতে হবে। প্রশ্ন প্রণয়ন, মুদ্রণ, বিতরণে কোথায় প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। পরবর্তী পরীক্ষার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন সভায়। এ সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন আপলোডকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না এবং সন্দেহজনক এ্যাকাউন্টগুলোকেও শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়াও সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে করণীয় ও প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরা হয়। সর্বোপরি পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণকে কষ্টসাধ্য উল্লেখ করে বলা হয়, বিজি প্রেস প্রশ্ন কম্পোজ এডিট, প্রিন্ট ও প্যাকেজিং পর্যায়ে প্রায় ২৫০ ব্যক্তির স¤পৃক্ততা রয়েছে। তারা প্রশ্নপত্র কপি করতে না পারলেও তা স্মৃতিতে ধারণ করা সম্ভব। এভাবেও প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব হতে পারে বলে ধারণা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। অতিরিক্ত কেন্দ্রের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অথচ সেখানে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। তাছাড়া ভেন্যুগুলো থেকে মূল কেন্দ্রগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। ফলে ৩০ মিনিটের আগে কেন্দ্র সচিব প্রশ্ন খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখান থেকেও প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। এছাড়াও পরীক্ষার্থী বা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, গুটি কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে মূল প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা তৎপরতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এটা পরীক্ষার শুরুর ১৫ দিন আগে থেকেই শুরু করা হলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। গোয়েন্দা বাহিনীর লোকবল ও অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত স্বল্পতার কারণে কাক্সিক্ষত মাত্রায় নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। দুষ্কৃতকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনতে না পারায় অন্যরাও অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে না। এতে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে চলমান এসএসসি পরীক্ষা। এরপর ২ এপ্রিল শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। প্রশ্ন ফাঁসের যে কারণগুলো চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ॥ >> বিজি প্রেসে প্রশ্ন কম্পোজ এডিট, প্রিন্ট ও প্যাকেজিং পর্যায়ে প্রায় ২৫০ জনের মতে কর্মী প্রশ্ন দেখতে পারে। তারা প্রশ্ন কপি করতে না পারলেও তার স্মৃতিতে ধারণ করা অসম্ভব বিষয় নয়। ৩-৪ জনের একটি পুরো গ্রুপের পক্ষে এভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব হতে পারে। >> নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে প্রশ্ন গ্রহণ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না মর্মে অভিযোগ রয়েছে। >> অতিরিক্ত কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যার ব্যবস্থাপনা করার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই। তাছাড়া ভেন্যুগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত। ফলে ৩০ মিনিট সময়ের অধিক পূর্বে কেন্দ্র সচিবরা প্রশ্ন খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। >> পরীক্ষার্থী কিংবা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। গুটিকয়েক শিক্ষক-কর্মচারীর কারণে গোটা প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। >> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীরা তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। এটা পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্ব হতে করা সম্ভব হলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকবল, অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত স্বল্পতার কারণে কাক্সিক্ষত মাত্রায় নজরদাবি করা সম্ভব হচ্ছে না মর্মে প্রতীয়মান হয়। দুষ্কৃতকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার ও শাস্তির প্রদান করতে না পারায় অন্যরাও অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে না। >> বিটিআরসি কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন আপলোড কারীদের চিহ্নিত করতে দেখা যাচ্ছে না এবং সন্দেহজনক একাউন্ট বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
×