ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাশরাফি-সাকিবদের সামনে কঠিন সময়!

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মাশরাফি-সাকিবদের সামনে কঠিন সময়!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হার যে কোন দলকে, দলের খেলোয়াড়দের মানসিকতায়, আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। টানা হারতো যেন শরীর ও মনকেই দুর্বল করে দেয়। বাংলাদেশ দল যেন এখন তেমন দুর্বল দলই হয়ে পড়েছে। শ্রীলঙ্কার কাছে টানা হারে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মানসিকতায় প্রভাব ফেলেছে। আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। মনোবল দুর্বল করে দিয়েছে। এমন অবস্থায় মাশরাফি, সাকিবদের সামনেতো আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। ২০১৪ সালের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতার সুযোগ থাকা ম্যাচগুলো টানা হারের পরই দলের ক্রিকেটারদের মনোবলে প্রভাব পড়ে। এরপর থেকে সেই বছরের শেষ সময় পর্যন্ত টানা হারতেই থাকে বাংলাদেশ। ছোট্ট, বড় দল নয়; সবার বিপক্ষেই হারতে থাকে। এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবার হেরেও কী সেই সময়ের সামনে পড়ে গেল বাংলাদেশ? সেই প্রশ্ন, আলোচনা এখন সবখানে। বারবার চেষ্টা করেও পারা যায়নি। আত্মবিশ্বাসী হয়েও কাজ হয়নি। ত্রিদেশীয় সিরিজে উড়ন্ত সূচনা করেও শেষ দুটি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। ফাইনালে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয়। এরপর টেস্ট সিরিজেও শ্রীলঙ্কার কাছে হারে। টি২০ সিরিজেতো হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। যে শ্রীলঙ্কা দলটির কাছে ২০১৪ সালে টানা সিরিজ হেরে খারাপ দিনের দেখা বছরজুড়ে পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবারও দেশের মাটিতে টানা হার হলো। অথচ দেশের মাটিতে বাংলাদেশ অপ্রতিদ্বন্দ্বী দলে পরিণত হয়ে উঠেছিল। দেশেই এই অবস্থা। তাহলে বিদেশের মাটিতে কী হবে? এখন থেকে যে বেশিরভাগ সিরিজ খেলতে হবে বিদেশের মাটিতে। আর সেখানেই বাংলাদেশ দলের বিপদ আসন্ন ভাবা হচ্ছে। কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পরই যে অবস্থার শুরু হয়ে গেছে। দেশের মাটিতে বছরের শুরুতে ওয়ানডে টুর্নামেন্ট, টেস্ট সিরিজ ও টি২০ সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। শূন্য হাতেই বসে থাকতে হয়। এখন থেকে বাংলাদেশের বিদেশের মাটিতে খেলা শুরু হয়ে যাবে। শুরুতে মার্চে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশ নিদাহাস ট্রফিতে খেলবে। শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজটি আয়োজিত হবে। এ সিরিজের পর জুন-জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এ সিরিজটি শেষে আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা। যদিও সিরিজটি নিয়ে আছে সংশয়। অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত এ সিরিজ নাও খেলতে পারে। এ সিরিজ শেষে আছে এশিয়া কাপ ওয়ানডে টুর্নামেন্ট। সেপ্টেম্বরে সেটি ভারতে হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হলে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় হতে পারে। নবেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে খেলবে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ সিরিজ খেলবে। যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার আগের সিরিজগুলোতে ভাল করতে পারে বাংলাদেশ তাহলে দেশের মাটিতেও ভাল করার সুযোগ থাকছে। তা না হলে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি থাকতে পারে। তাতে করে ভাল ফল নাও বের হতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার পর আগামী বছরের শুরুতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এ সিরিজটিও দেশের মাটিতেই হবে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের দুর্বল মনোবল থাকলে, জিম্বাবুইয়েও জেঁকে ধরতে পারে। যদিও এখন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ বেশিরভাগ ম্যাচ জিতে। আবার উল্টোও হতে পারে। ২০১৪ সালের শেষের দিকে জিম্বাবুইয়েকে সামনে পেয়েই যেমন বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তেমনও হতে পারে। কিন্তু সেই সুযোগটি খুব বেশি থাকছে না। ২০১৪ সালের শেষের দিক থেকে ২০১৫ সালের পুরোটাজুড়ে বাংলাদেশ দল দেশের মাটিতে খেলেছে। একের পর এক সিরিজ জিতেছে। দল ও নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু দেশের মাটিতে টানা খেলার সুযোগই পাচ্ছেন না এবার। জিম্বাবুইয়ের পর যে ফেব্রুয়ারি-মার্চে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর মে থেকে জুলাই পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ রয়েছে। অনেকদিন বিরতির পর আবার দেশের মাটিতে খেলবে বাংলাদেশ। অক্টোবর-নবেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ খেলবে। কিন্তু এরপরই আবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে বছরের শেষদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। মাঝপথে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যদি আরও খেলা রাখতে পারে তাহলে সেই খেলাগুলো থাকবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এখন থেকে যে সূচী দেখা যাচ্ছে তাতে বিদেশের মাটিতেই বেশি খেলা। আর বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পরিসংখ্যান বলছে, সবচেয়ে বাজে। টেস্ট খেলুড়ে ১০ দলের মধ্যে সবার নিচে অবস্থান। সবমিলিয়ে টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ খেলেছে ৫১৭টি ম্যাচ। টেস্ট ১০৬টি, ওয়ানডে ৩৪০টি ও টি২০ ৭১টি ম্যাচ খেলে। জয় পেয়েছে ১৩৯টি ম্যাচে। হেরেছে ডাবলেরও বেশি। ৩৫৩ ম্যাচে। ড্র ম্যাচ ১৬টি। রেজাল্ট হয়নি ৯টি ম্যাচের। এর মধ্যে বিদেশের মাটিতে তিন ফরমেট মিলিয়ে ২৫০ ম্যাচ খেলে ৮৪টিতে জিতে। ১৫১টি ম্যাচে হারে। ১৩টি ম্যাচ ড্র করে। ২টি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। অবস্থা ভাল। কিন্তু বিদেশের মাটিতে তিন ফরমেট মিলিয়ে ১৮৫ ম্যাচ খেলে মাত্র ৩৬টি ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাও ধারাবাহিকতা নেই। মাঝে মাঝে জয় তুলে নিতে পেরেছে। ১৪২টি ম্যাচেই হেরেছে। ৩টি ম্যাচ ড্র করেছে। ৪টি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। বোঝাই যাচ্ছে, বিদেশের মাটিতে কি খারাপ অবস্থা। এবার বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতেই বেশি খেলবে। আর তাতে সামনে যে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তা বোঝাই যাচ্ছে। এখন দল তা থেকে উতরে যেতে পারলেই হয়। দল টানা হারের মধ্যে থাকলে যে জনপ্রিয়তা, উত্তাপ, ভালবাসা সবই কমতে থাকে।
×