ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসিসিআই আয়োজিত সেমিনারে বক্তাদের অভিমত

প্রবৃদ্ধি অর্জনে টেকসই নদীপথ উন্নয়নের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রবৃদ্ধি অর্জনে টেকসই নদীপথ উন্নয়নের বিকল্প নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবৃদ্ধি অর্জনে টেকসই নদীপথের উন্নয়নের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। মঙ্গলবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘অভ্যন্তরীণ নৌপথ: আর্থিক সম্ভাবনার সুযোগ’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি রয়েছে। তবে দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় নীতিমালার সংস্কার করা হলে প্রবৃদ্ধির এ ধারাকে ৮.৫ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। তিনি সকল সমুদ্র বন্দর, নদীবন্দর এবং স্থলবন্দর সমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিয়োজিত মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষভাবে জোরারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যকর ভাবে চালু করতে হলে ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা প্রয়োজন। ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা চালু হলে আয় কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই বরং আমাদের বন্দরের পাশাপাশি সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাবে। তিনি দ্রুততম সময়ে পণ্য খালাসের জন্য কাস্টম অধিদফতরের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা আরও বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের নৌ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার পানগাঁও এবং পাঁয়রাবন্দর স্থাপনের মাধ্যমে দেশের নৌপথের উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে পানগাঁও বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় ৩টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২টি, বিআইডব্লিউটিসির ৩টি এবং বেসরকারী মালিকানায় ৫০টি জাহাজ পরিচালনার অনুমোদন করেছে। চৌধুরী বলেন, পানগাঁওবন্দরে কন্টেনার পরিববহনের ক্ষেত্রে ৩ বছরের জন্য শুল্ক চার্জ প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস করেছে এবং মংলাবন্দরে কন্টেনার পরিবহনের ক্ষেত্রে শুল্ক চার্জ ৩ বছরের জন্য ৬৫-৭০ শতাংশ কমিয়েছে। তিনি আরও বলেন, পানগাঁও বন্দর হতে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত প্রতি কন্টেনারের চার্জ হলো ১০০ মার্কিন ডলার। মংলাবন্দর দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হলেও বড় জাহাজের কন্টেনার হ্যান্ডলিং-এর জন্য এখনও পর্যন্ত কোন ক্রেন নেই। তিনি বেসরকারী মালিকানায় পরিচালিত বন্দরসমূহের সুষ্ঠু বিকাশে নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের ওপর জোরারোপ করেন। তিনি পণ্য খালাসে জটিলতা ও ব্যয় হ্রাসে গভীর সমুদ্র এলাকায় ভাসমান বন্দর স্থাপনের প্রস্তাব করেন। তিনি উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণে শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক অঞ্চল সমূহে স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা আরও সম্প্রসারণের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি এবং এ ক্ষেত্রে নৌপরিবহন খাতের অবস্থান আরও নাজুক। তিনি বলেন, বিশেষত চট্টগ্রাম বন্দর হতে কন্টেইনার পরিবহনে আমাদের সড়ক ও রেল পথের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। তবে এ ক্ষেত্রে নৌপথ ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে সময় এবং ব্যবসায় ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। তিনি প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সমূহের সঙ্গে নৌপথ ও সমুদ্রবন্দর সমূহের সঙ্গে যোগযোগ বাড়াতে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের আহ্বায়ক ও সামিট এ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসির রিজভী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি অভ্যন্তরীণ কার্গো চলাচলের সুযোগ বৃদ্ধি, আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং টেকসই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় কম। তিনি অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর সব ধরনের কার্গো হ্যান্ডলিং-এর সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং এ বিষয়ক প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও সংস্কারের ওপর আহ্বান জানান। তিনি ‘ন্যাশনাল মেরিটাইম এ্যান্ড পোর্ট অথরিটি’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেন। পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেনার টার্মিনাল-এর টার্মিনাল ম্যানেজার আহামেদুল করিম চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালে পানগাঁও বন্দরের মাধ্যমে ৪০০০ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হলেও ২০১৭ সালে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কন্টেইনার। তিনি অভ্যন্তরীণ নদীপথে পণ্য পরিবহন বাড়ানোর জন্য নদীর নব্যতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং পানগাঁওসহ অন্যান্য বন্দর ব্যবহারে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মার্কস এ্যান্ড স্পেনসার (বাংলাদেশ ও মায়ানমার)-এর কান্ট্রি হেড স্বপ্না ভৌমিক বাংলাদেশ হতে পণ্য আমদানি-রফতানি আরও বাড়ানোর দাবি জানান।
×