ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অবশেষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

রবিবার দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বেবিচক (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) ও ব্রিটিশ হাইকমিশনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মিলেছে প্রত্যাশিত ঘোষণাটি। এখন থেকে বিমানে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহন করা যাবে। এটিকে কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা চলে। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, গত দুই বছর ধরে কার্গো নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন, বিমানসহ বিভিন্ন সংস্থার আন্তরিক সহযোগিতায় সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় যুক্তরাজ্য সন্তোষ প্রকাশ করে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অবশ্য অনুসন্ধানী রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে যে, ২০১৬ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞার ফলে বছরে বিমানে ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি হুমকির মুখে পড়েছিল। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ারই উজ্জ্বল সম্ভাবনা। উল্লেখ্য, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের কারণ দেখিয়ে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি কার্গো (বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পণ্য পরিবহন) পরিবহন স্থগিত করে যুক্তরাজ্য। পরে ওই বছরের ২১ মার্চ পরামর্শ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও জনবল প্রশিক্ষণের জন্য দেশটির বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রেডলাইন এ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে (বেবিচক)। এ চুক্তির এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও আরোপিত সরাসরি কার্গো পরিবহন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তেমন কোন অগ্রগতি আসেনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নবেম্বরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন করে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলটি বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার কথা বলেছিল। এরপর সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ থাকায় গত অর্থবছরে এ খাত থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। স্মরণযোগ্য, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় সুযোগ ছিল বিষয়টির দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ। বাংলাদেশ সরকার সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল ভালভাবেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ডেভিড ক্যামেরনের কাছে তুলে ধরে এর সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না বলে সে সময় জানিয়েছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এটি আমাদের কাছে ছিল আশ্বাসবাণীর মতোই। বর্তমান সরকার আরও শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী এক শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে এবং এসব অঞ্চলে বিদ্যুত ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারে সরকার গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দেশব্যাপী রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করার কাজ চলছে এবং দক্ষিণ অঞ্চলে রেললাইন নির্মাণে ব্রিটিশ কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই সুবিবেচনার পরিচয় দেয়ার ওপরে বাংলাদেশ গুরুত্বারোপ করেছিল। বেশ কিছুটা দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা যে উঠেছে, এটি স্বস্তিকর। ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক সুদীর্ঘকালের। সেখানে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশী বাস করে। তারা ব্রিটেনের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব বিস্তার করে আছে। আমরা আশা করতে পারি বাংলাদেশের ওপর থেকে কার্গো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
×