ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়া তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদা জিয়া তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, বিএনপি নেতারা আন্দোলনের কথা বলবেন কিন্তু আন্দোলন করতে পারবেন না। অতীতেও যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, আবারও ব্যর্থ হবেন। খালেদা জিয়া তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন। পাপের প্রায়শ্চিত্ত কি হয় খালেদা জিয়া তার পরিণতি দেখছেন। বিএনপি তথা খালেদা জিয়া ২০১৪ সালে নির্বাচন না করে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে যে ভুল করেছিলেন তার খেসারত দিচ্ছেন। আশাকরি ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি সেই ভুল করবে না। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, সরকারী দলের তাজুল ইসলাম, রেবেকা মোমেন, সাবিনা আক্তার তুহিন, কাজী নাবিল আহমেদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ ও জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর। আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, কিছু কিছু ঘটনা আমাদের সকল অর্জনকেই ধূলিসাত করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এবারের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারী কেবল পরীক্ষার্থী নয়, তাদের অভিভাবকদেরও সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতির জন্য খালেদা জিয়ার কারাদ- হয়েছে। এটা বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনের সঙ্গে তারেকের দুর্নীতির ক্ষুদ্রাংশ। অনেকে এর পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি খুঁজছে। কিন্তু ১৪ দলের ২৩ দফায় দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তাই পূরণের সূচনা হলো মাত্র। তিনি বলেন, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নকে বিচারের আওতায় আনা ও তাকে পরিণতিতে নিয়ে যাওয়া জরুরী। খালেদা জিয়ার এই মামলা শেষ করতে ১০ বছর লেগেছে। এই দীর্ঘ সূত্রতা জনমনের আস্থাকে কমিয়ে দেয়। কেবল দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই জাতীয় প্রবৃদ্ধি আরও ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের পুরনো গান গেয়েই যাচ্ছে। আসলে নির্বাচন নয়, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। সে কথাই তারা বারবার বলছে। তিনি বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িক- মৌলবাদী-জঙ্গীবাদী শক্তিকে, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ধারকদের রুখে দিতে পেরেছি। কিন্তু নিঃশেষ করতে পারি নাই। তারা আক্রমণ করতে সদা তৎপর। কারণ এই সরকার তাদের কলিজায় হাত দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এটা নির্বাচনের বছর। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস সঙ্কট, পানি সঙ্কট এসব দৈনন্দিন বিষয় মানুষকে আলোড়িত করে। আতঙ্কিত করে খুন, ধর্ষণ, গুমের ঘটনাবলী। মানুষ বিরক্ত হয় দলবাজি, দখলবাজি, অন্তর্দলীয় কোন্দলে। এক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া গেলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বিস্তার, সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন জনমনে যে অস্বস্তি তৈরি করে তাকে বিবেচনায় না নিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপুল পরিশ্রম, তার মেধা, সততা, যোগ্যতার প্রতি জনগণের বিপুল আস্থা-বিশ্বাসের পরও সংশয়-সঙ্কট তৈরি হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান অতীতে আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপিকে কুঁজোদের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, বিএনপি নেতারা আন্দোলনের কথা বলবেন কিন্তু আন্দোলন করতে পারবেন না, অতীতেও যেমন ব্যর্থ হয়েছেন আবারও ব্যর্থ হবেন। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কুঁজো মানুষ চিৎ হয়ে শুতে পারে না, আর এই কুঁজো মানুষ চিৎ হয়ে শোয়ার আশা জাগে কিন্তু পারে না। যারা আন্দোলনে বার বার ব্যর্থ হয়েছেন তাদের আমি কুঁজো মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই। অতীতেও যেমন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছেন এবারও ব্যর্থ হবেন। আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে না পেরে মানুষ হত্যা করেছে। নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সেদিন খালেদা জিয়াকে পরাজয়বরণ করে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছিল। খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে বলেন, খালেদা জিয়া তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন। পাপের প্রায়শ্চিত্ত কি হয় খালেদা জিয়া তার পরিণতি দেখছেন। বিএনপি তথা খালেদা জিয়া ২০১৪ সালে নির্বাচন না করে যে ভুল করেছিলেন তার খেসারত দিচ্ছেন। আশাকরি ২০১৮ সালের নির্বাচনে সেই ভুল করবে না। ভুল করলে পরে তার খেসারত দিতে হবে, আর কি পরিণতি হবে তা উপলব্ধি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করেছিলেন বিশ্বাসঘাতক মোশতাক ও জিয়াউর রহমানদের। যে কারণে তাকেও জীবন দিতে হয়েছে। তাই বিশ্বাসঘাতকদের শনাক্ত করুন। যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করছেন, তাদের এবং জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার জন্য আপনি এগিয়ে যান। ভূমিমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন গ্রামে আর কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। দেশে আর কেউ না খেয়ে থাকে না, কারো অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের অভাব নেই। খালেদা জিয়ারা আজ ইতিহাসের ডাস্টবিনে চলে গেছে। এ দেশে চার বিশ্বাসঘাতক দেশকে ধ্বংস করে গেছে। এক মীরজাফর, দুই গোলাম আযম, তিন খন্দকার মোশতাক ও চার জেনারেল জিয়া। এই চার বিশ্বাসঘাতকের পেতাত্মা খালেদা জিয়ার ঘাড়ে ভর করে বিএনপির নাম নিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট আসলে গণতন্ত্র, মানবিকতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। এদের দেশের জনগণ কোনদিন ক্ষমা করবে না। তাদের পুনর্বার পতন অনিবার্য। জাতীয় পার্টির নুুুরুল ইসলাম ওমর আগামী নির্বাচনেও তার দল অংশগ্রহণে প্রস্তুত উল্লেখ করে বলেন, গণতন্ত্রের মূল কবজই হচ্ছে নির্বাচন। জাতীয় পার্টি চরম ক্রান্তিকালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংবিধান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রক্ষা করেছে। আমরা নির্বাচনে ভয় পাই না। আগামী নির্বাচনেও আমরা অংশগ্রহণ করব। কেউ যদি নির্বাচনে না এসে সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করে জাতীয় পার্টি কখনো তাদের পক্ষে থাকবে না। বাঁকা পথে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি জাতীয় পার্টি করে না।
×