ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াকে জেলে অন্ধ প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদা জিয়াকে জেলে অন্ধ প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আইনের ‘ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা’ও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার পর এখন আইনের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করছে না। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে একটি নির্জন কারাগারে অন্ধ প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে। যা কোনোমতেই এই স্বাধীন দেশের আইনের মধ্যে পড়ে না। পাঁচ দিনের মধ্যে বিচারের রায়ের কপি দেয়ার কথা, সেটা এখন পর্যন্ত তারা দেয়নি। দেশ এবং খালেদা জিয়া, গণতন্ত্র এবং খালেদা জিয়া এই দুটি আজ একাকার হয়ে গেছে। তাই খালেদা জিয়াকে সমস্ত শক্তি দিয়ে, জনগণের শক্তি দিয়ে মুক্ত করে আনতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হবার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যার বয়স ৭৩ বছর। যিনি তার সমস্ত রাজনৈতিক জীবনটাই এদেশের জনগনের অধিকারের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, তাদের বাঁচার অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। জীবনের শেষ সায়াহ্নে এসে যিনি কোনোদিন অন্যায়ের সঙ্গে, স্বৈরাচারের সঙ্গে, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপোষ করেননি। সেই নেত্রীকে আজকে তারা আটকে রেখেছে। খালেদা জিয়াকে ‘ভয় পায়’ বলেই সরকার আগামী নির্বাচনে ‘নীল নকশা’ বাস্তবায়ন করতে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করেছে বলেও অভিযোগ করেন দলের মহাসচিব। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ব্যর্থতা, আর্থিকখাতে দুর্নীতিসহ সর্বক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি। এ থেকে উত্তরণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ব্যক্ত করে বলেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক মানুষের দায়িত্ব সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই যে ফ্যাসিস্ট সরকার যারা দেশের মানুষের বুকে পাথরের মতো চেপে বসেছে, তাদের অপসারণ করা। দেশে গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাস বইতে হবে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাবার সময়ে যে কথা বলে গেছেন, আপনারা গনতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করবেন, অবিচল থাকবেন, মাথা নত করবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে এর প্রতিবাদ জানাবেন। পৃথিবীর ইতিহাস বলে এভাবে অন্যায় করে নিপীড়ন-নির্যাতন করে কোনো দিনই টিকে থাকা যায় না। সর্বত্র তারা স্টিমরোলার চালাচ্ছে। দেশে হত্যা, খুন, ডাকাতি, বাড়ি দখল চলছেই। প্রতিটি দিন প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এগুলোর কোনও বিচার হয় না। তিনি বলেন, আজ ব্যাংক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে পড়ছে। শেয়ার মার্কেট ধ্বংস হয়ে গেছে। কোথাও কোনো বিচার নেই। সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা হয় না। দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কোনো বিচার হয় না। কারণ এর সঙ্গে সরকার জড়িত রয়েছে। এ থেকে উত্তরণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে সক্রিয় হতে আহ্বান জানান ফখরুল। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন রাশেদা বেগম, হেলেন জেরিন খান, নিলোফার চৌধুরী, শাম্মী আখতার, হালিমা নেওয়াজ, ইয়াসমিন আরা হক আমেনা খাতুন, শামসুন্নাহার ভুঁইয়া বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। বেগম জিয়াকে নিয়ে সরকারের চক্রান্ত বুমেরাং হবে ॥ এদিকে প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে অপরিছন্ন একটা সাধারণ কারাগারে রেখে আইনের অপব্যবহার করেছে। এর জন্য তাদেরকে একদিন জবাব দিতে হবে। সরকার মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়ে তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমাণ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু জনগণ তা বিশ্বাস করেনি। বেগম জিয়াকে নিয়ে সরকারের সমস্ত চক্রান্ত বুমেরাং হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, নেত্রী জেলে যাওয়ার আগে স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির বৈঠকে পরিষ্কার নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করব, তার মুক্তির জন্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করার জন্যে, লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড করতে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার আদায় করার জন্য। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার যত ধরনের উসকানি দিক না কেনো, যত ধরনের ফাঁদ তারা পাতুক না কেন, আমরা তাদের কোনো ফাঁদে পা দেব না। তাদের উসকানিতে উত্তেজিত হব না। মোশাররফ আরও বলেন, কারাবন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এই যে অন্যায়ভাবে নেত্রীকে সাজা দেয়া হলো, জেলে নেয়া হলো। সেজন্যই দেশনেত্রীর প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে, তার প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতদিন দেশনেত্রী বলতাম, এখন দেশের মানুষ তাকে নেত্রী বলে না, দেশমাতা বলে। তিনি দেশনেত্রী থেকে দেশমাতায় পরিণত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকের হাত পা বেঁধে দিয়েছে। এই মামলা যখন চলে তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছে। তার মন্ত্রীরা বলেন, খালেদা জিয়ার জেল হবে এসব কথা বলে বিচারকের হাত পা আগেই বেঁধে দিয়েছে যাতে তিনি সঠিক বিচার না করতে পারেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরে বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে আসবো না এটা কি বলেছি? আমরা নির্বাচনে আসবো। তবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশের নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে আসবো।
×