ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘খেলাধুলাকে ভালবেসেই ক্রীড়াঙ্গনে’

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

‘খেলাধুলাকে ভালবেসেই ক্রীড়াঙ্গনে’

জাহিদুল আলম জয় ॥ অনেকগুণের সমাহার তার মধ্যে। নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূতের (কুয়েত) দায়িত্ব। বর্তমানে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব। শুধু তাই নয়, ঢাকা ক্লাবের সভাপতি, অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়ার সদস্য, এসএমপি ট্রেডিং কোং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এতসব দায়িত্ব পালন করছেন যিনি তিনি আর কেউ নন, নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া সংগঠক সৈয়দ শাহেদ রেজা। যিনি রাষ্ট্রদূতের মতো লোভনীয় পদ ছেড়ে এসেছেন বিনোদনের নির্মল মাধ্যম ক্রীড়াঙ্গনে। সোমবার বিওএ ভবনে জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে অনেক কথাই বলেছেন তিনি। শাহেদ রেজার রক্তের সঙ্গেই মিশে আছে খেলাধুলা। যে কারণে খেলাকে ভালবেসে এসেছেন ক্রীড়াঙ্গনে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বিওএ’র মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। লক্ষ্য একটাইÑ দেশের যুব সমাজকে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত রাখা, তাদের যেন নৈতিক অবক্ষয় না হয় এ বিষয়ে কাজ করা। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ যুব গেমসের আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এই আসর দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের খেলা শেষ হয়েছে। সেখানে অংশ নিয়েছিল ৪৯ হাজার প্রতিযোগী। সেখান থেকে বাছাই করা প্রায় তিন হাজার প্রতিযোগী অংশ নেবে ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া মূল পর্বে। এর আগে ৯ মার্চ মূলপর্বের উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও এখন সেটা হবে একদিন পিছিয়ে আগামী ১০ মার্চ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠবে বাংলাদেশ যুব গেমসের চূড়ান্ত পর্বের। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমবারের মতো আয়োজিত বাংলাদেশ যুব গেমসের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চূড়ান্ত পর্বকে আকর্ষণীয় করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন। চূড়ান্ত যজ্ঞের জন্য ২১টি ডিসিপ্লিন ও ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত ২১ ডিসিপ্লিনে না থাকায় আগামী ১৬ মার্চ গেমসের সমাপনী দিনে হাতিরঝিলে রোইং প্রতিযোগিতা হবে। এই গেমসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে খেলাধুলার জাগরণ হবে বলে বিশ্বাস সৈয়দ শাহেদ রেজার। আশাবাদী বিওএ মহাসচিব বলেন, ‘এই প্রথম হচ্ছে বাংলাদেশ গেমস। যেটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেটা করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে খেলা হয়েছে। সেখানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতি জেলার ঘরে ঘরে সবার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। যারা ঢাকায় আসছে তাদের চোখেমুখে এখন রঙিন স্বপ্ন। ওরা ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে।’ এই গেমসের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতদের তারকা পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস শাহেদ রেজার, ‘এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। গেমসটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ১৬ কোটির মানুষের মধ্য থেকে ১৬ খেলোয়াড় উঠে আসলেও অনেক বড় প্রাপ্তি।’ বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনায় ইভেন্ট আছে। যেগুলো থেকে লাল-সবুজের দেশ অনেক স্বর্ণসাফল্য পেয়েছে। এই ধরনের ইভেন্টগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিওএ। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির কর্ণধার বলেন, ‘যুব গেমসে এ্যাথলেটিক্স, সুইমিং, আর্চারি, ভলিবলে উল্লেখযোগ সাফল্য এসেছে। এখান থেকে অনেক ভাল খেলোয়াড় আসবে আশা করি। এদের পরিচর্যা করতে পারলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সাফল্য পাওয়া সম্ভব।’ এত বিশাল যজ্ঞের টুর্নামেন্ট করলেও সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত তেমন আর্থিক সহায়তা পায়নি বিওএ। টুর্নামেন্টটি করতে ১৯ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। যার কিছু এসেছে স্পন্সর থেকে, বাকিটা নিজেদের তহবিল থেকে খরচ করছে অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন। শাহেদ রেজা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও এখনও সেটা মেলেনি। তবে পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে খেলাধুলায় অপ্রতুল রাষ্ট্রীয় বাজেট নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে খেলাধুলায় যে বাজেট থাকে তা অনেক কম। এত অল্প টাকা দিয়ে খেলাধুলার উন্নয়ন সম্ভব নয়। অর্থের পরিমাণ বাড়ানো দরকার। তবে আশার কথা এ বিষয়ে কাজ চলছে।’ যুব গেমসে যেসব তরুণেরা উঠে আসবে তাদের পরিচর্যা করা হবে জানিয়ে শাহেদ রেজা বলেন, ‘যাদের হান্ট করব তাদের ধরে রাখার জন্য সব করা হবে। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।’ সামনেই কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বাংলাদেশ। এশিয়ান গেমস নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস না থাকলেও কমনওয়েলথ গেমসে ভাল করার স্বপ্ন ক্রীড়াপাগল মানুষটির। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে আমি শূটিংয়ে ভাল কিছুর আশা করছি। এই ইভেন্ট থেকে সর্বোচ্চ ১৮ জন অংশ নেবে। আমরা জানি শুট্ংিয়ের সম্ভাবনা আছে। এ জন্য তারা যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। তবে কমনওয়েলথ গেমস কঠিন। কারণ এটার মান অলিম্পিকের পর। যেখানে বিশ্বের সেরা সাফল্যের দেশগুলো খেলে থাকে। এখানে সাফল্য পাওয়া কঠিন।’ কুয়েতে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা শাহেদ রেজা জানান, সব খেলাধুলাকে এক জায়গায় আনতে স্পোর্টস ভিলেজ করার চেষ্টা করছেন তারা, ‘স্পোর্টস ভিলেজ করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা জায়গা দেখেছি। আশা করছি এটা করা সম্ভব হবে। ভিলেজটা করা হলে সেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এক জায়গাতেই সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। এটা করতে পারলে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটা অনন্য মাইলফলক হবে’। সরকারের সম্মানজনক পদ ছেড়ে খেলাধুলায় কেন আসলেন? এই প্রশ্নের জবাবে শাহেদ রেজা বলেন, ‘আমি চিন্তা করলাম দেশ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমিও কিছু দিতে পারি কিনা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী খেলাপাগল, তাই আমিও খেলাকে বেছে নিয়েছি। রাষ্ট্রদূত থাকায় কূটনীতিকদের সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক আছে। যে কারণে ওদের কাছ থেকে আমি অনেক সাহায্য পাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই প্রয়াত শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাহেদ রেজা। শেখ কামাল ছিলেন খেলাপাগল। তার বন্ধু শাহেদ রেজাও তেমনি ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ। নিজের কর্তব্য, দেশাত্ববোধ ও ভালবাসা থেকে কাজ করে চলেছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে।
×