ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বর্ণাঢ্য আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ‌যাপন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বর্ণাঢ্য আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ‌যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের নন্দন মঞ্চের চারিদিকে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী লোকের ভিড়। প্রায় প্রত্যেকের হাতে রয়েছে বেলুন। উৎসুক হয়ে আছে কখন তারা বেলুনটি ছেড়ে দিবে নীল আকাশে। ফোয়ারার পানিতে রংবেরঙের আলোয় পরিবেশটা আরও বর্ণিল করে তুলেছে। ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ বিভিন্ন রকম গানের সুর তুলছে বর্ণিল সাজে ব্যান্ড পার্টির সদস্যরা। দীর্ঘ ৪৪ বছরের পথপরিক্রমা শেষে পয়তাল্লিশে পা দিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। স্মৃতিময় এই দিনগুলোকে ধরে রাখার জন্য নানা আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন হয় সোমবার বিকেলে। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময় একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আজ আমাদের যেমন আনন্দের দিন, সঙ্গে সঙ্গে বেদনারও। এই প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের শিল্পকলার উন্নয়নে যে স্বপ্ন তিনি দেখে ছিলেন, তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। আমরা তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি। কোন অপশক্তি আমাদের গতিরোধ করতে পারবে না। আজ সংস্কৃতিবান্ধব বাংলাদেশ। আমরা সমৃদ্ধশালী মানবিক ও সৃজনশীলবান্ধব সমাজ গড়ে তুলতে চাই। সংস্কৃতির অস্ত্র দিয়ে অপশক্তিকে বধ করব আমরা। এরপর তিনি একাডেমির কর্মকর্তাসহ সকলকে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী, কর্মকর্তা শওকত ফারুক, বদরুল আলম ভূঁইয়া, আশরাফুল আলম প্রমুখ। পরে একাডেমির দলের পরিবেশনায় ছিল এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শন। এরপর উদ্বোধনী নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসেন লায়লা হাসান, মিনু হক, জিনাত বরকতউল্লাহ, ডলি ইকবাল, ফাতেমা কাশেম, নিলুফার ওয়াহিদ পাপড়ি, সুলতানা হায়দার, সেলিনা হোসেন ও ড.নিগর সুলতানা। পরে শুরু হয় আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক কামাল লোহানী, মুস্তাফা মনোয়ার ও শামসুজ্জামান খান। সভাতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচনার পর সমবেত কণ্ঠে ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’ সঙ্গীত পরিবেশন করে একাডেমির ভাওয়াইয়া দল। পরে একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীদের পরিবেশনায় ছিল পুতুল নৃত্য, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্য। বেহালা বাজিয়ে শোনান রূপসী মমতাজ। সমবেত বাঁশি, গান, নৃত্য, দোতরা বাদন দর্শকদের মুগ্ধ করে। ফিফা চাকমার পরিচালনায় ছিল ত্রিপুরা আদিবাসীদের নৃত্য ‘হজাগীরি’। বাউল গান পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। এছাড়াও শামীম আরা নীপার পরিচালনায় পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য। আন্তর্জাতিক সুফি উৎসব শুরু হচ্ছে ২৩ ফেব্রুয়ারি ॥ ‘সম্প্রীতির জন্য সঙ্গীত’ প্রতিপাদ্যে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সুফি উৎসব শুরু হচ্ছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। আল্লামা রুমি সোসাইটি ও হাটখোলা ফাউন্ডেশনের যৌথ এ আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান ও তুরস্কের শিল্পীরা। এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, আল্লামা রুমি সোসাইটির ট্রেজারার ড. মোঃ আবদুর মজিদ ও উৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব ইউসুফ মুহম্মদ। সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের তাৎপর্য তুলে ধরে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভূদ্ধ করার প্রত্যয়ে এ উৎসব আয়োজন। এই আয়োজনে যারা গান করেন, তথাকথিত অর্থে তারা শিক্ষিত নয়। তথাপি তাদের কণ্ঠে আমরা আমাদের সংস্কৃতির সেকড়ের গান শুনতে পাই। সুফি মতবাদ সহনশীলতার জায়গা থেকেই করা হয়ে থাকে। দেশের তরুণ সমাজ যেন সেই জায়গা থেকে বিচ্যুত না হয় এ চিন্তা মাথায় রেখেই এই উৎসব করতে আগ্রহী। এ মাসে একদিকে যেমন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে চলছে নানা রকম অনুষ্ঠান এবং বই মেলা, এসব কিছুর সঙ্গে সুফি উৎসব প্রাসঙ্গিক। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বাংলাদেশের সকল ধারায় বর্তমান সরকার প্রেরণা দিয়ে থাকে। তারই একটি এ সুফি উৎসব। ড. মোঃ আবদুর মজিদ বলেন, উৎসবের মূল লক্ষ হচ্ছে, গানের মাধ্যমে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করা। আধ্যাত্বিক সুরের মাধ্যমে শান্তির বাণী প্রচার এ উৎসবের তাৎপর্য বহন করে। উৎসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে ইউসুফ মুহম্মদ বলেন, সর্বমোট ১১৯জন সুফি, লোকসঙ্গীত শিল্পী ও সাধক এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে। দেশের বাইরের অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ৫টি। নন্দন মঞ্চে বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে উদ্বোধনী পর্ব। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে শুরু হবে সুফি গানের মূল পর্ব এবং শেষ হবে রাত ১০টায়। প্রথম দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করবে মাইজভা-ারী মরমী গোষ্ঠী, পারভেজ, শফি ম-ল, সামির কাওয়াল, রাফাত সুফি ও এস আই টুটুল। উৎসবের দ্বিতীয় দিন বেলা ৩টায় থাকবে সুফি বিষয়ক সেমিনার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আবৃত্তি পরিবেশনা ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ভাষাভাষীর আবৃত্তি পরিবেশিত হয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে সোমবার বিকেলে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাসহ দেশের আদিবাসী ও নৃ-গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন বিদেশী ১৭টি ভাষার কবিতা আবৃত্তি হয়। মূল ভাষার পাশাপাশি বাংলায় অনূদিত কবিতা পরিবেশন করেন দেশের বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পীবৃন্দ।
×