ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের স্মরণে লিখিত কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।’ ঐতিহাসিক এই গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফ্ার চৌধুরী। কালজয়ী গান হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও এটি প্রথমে গান হিসেবে লেখা হয়নি। লেখা হয়েছিল কবিতা হিসেবে। গে-ারিয়ার ধুপখোলা মাঠে যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানে সর্বপ্রথম এই কবিতাটি আবৃত্তি করা হয়। পরবর্তীতে কবিতাটির সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে তৎকালীন ব্রিটানিয়া সিনেমা হলে আব্দুল লতিফের সুরে সর্বপ্রথম গানটি গাওয়া হয়। গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফ্ার চৌধুরী এ সম্পর্কে বলেন, ‘...পরে জানলাম যে এই লাশ হচ্ছে শহীদ রফিক উদ্দিনের। লাশটি দেখার সময় আমার মনে কবিতা লেখার জন্য একটি ভাবের উদয় হয়েছিল। ভাবটি এসেছিল কবিতা লেখার জন্য, গান রচনার জন্য নয়। আমি গান লিখতে জানি না, আমি সুরকারও নই, গীতিকারও নই। একটি কবিতা লেখার জন্য আমার মনে যে লাইনটি এসেছিল তা হলো ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’। মেডিক্যাল কলেজের আউটডোর থেকে যখন হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাওয়ার পর শহীদুল্লাহ সাহেব আমাকে তার বেগম বাজারের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখান থেকে আমি শফিক রেহমানের বাসায় গিয়ে উঠি। এ বাসায় একদিন আহম্মেদ হোসেন আমাকে বলেন, তুমি নাকি একটা কবিতা লেখা শুরু করেছিলে দাউদের বাসায় বসে। সেখানটা শেষ করেছ কি? না করে থাকলে শেষ করে ফেলো। আমরা গে-ারিয়ায় একটি গোপন সভা করব। সে সভায় ভাষা আন্দোলনের পক্ষে একটা ইস্তেহার তৈরি করা হবে। তারপর এটাকে প্রকাশ ও প্রচার করা হবে। সে ইস্তেহারে তোমার কবিতাটি ছাপানো হবে বলে ঠিক করেছি। আব্দুল্লাহ আল মূতী বলেছেন, গাফফ্ার যেন কবিতাটি সম্পূর্ণ লিখে ফেলে। এ কথা শোনার পর আমি কবিতাটি লেখা শেষ করি। লেখা শেষ করি কবিতা হিসেবে, গান হিসেবে নয়। আহম্মেদ হোসেন যদি জোর না করতেন তাহলে এটি লেখা হতো কিনা সন্দেহ আছে। গে-ারিয়ায় সেই গোপন সভাটি হয়েছিল। আব্দুল্লাহ আল মূতী সে সভায় ছিলেন। আমার কবিতাটি সেখানে পাঠ করা হয়েছিল। ...আমার আইএ পরীক্ষার আগে গুলিস্তানের ব্রিটানিয়া হলে ঢাকা কলেজের নবনির্বাচিত ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়। ইকবাল আনসারী খান ভিপি, মশিউর রহমান হিরু জেনারেল সেক্রেটারি ও ইনাম আহমেদ চৌধুরী সদস্য ছিলেন এই সংসদের। এই অভিষেক অনুষ্ঠানে আব্দুল লতিফ আমার সেই কবিতা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গেয়ে শোনায়।’ পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের সুরে গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং একুশের প্রভাতফেরির গান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
×