ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বীকারোক্তি অক্সফাম পরিচালকের

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

স্বীকারোক্তি অক্সফাম পরিচালকের

ক্যারিবীয় দ্বীপ দেশ হাইতিতে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের সময় দাতব্য সংস্থা অক্সফামের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার যৌনাচার নিয়ে এই সংস্থার অভ্যন্তরীণ তদন্তের সময় তিনজন অভিযুক্ত একজন সাক্ষীকে এ বিষয়ে কোন তথ্য না দেয়ার জন্য ভীতি প্রদর্শন করেন বলে জানা গেছে। খবর গার্ডিয়ান ও এএফপির। তবে একই সূত্রের অন্য এক খবরে বলা হয় যে, সাবেক এক অক্সফাম কর্মকর্তা এই মর্মে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, তিনি ত্রাণ সংস্থার নির্ধারিত আবাসিক ভবনে অর্থের বিনিময়ে একজন যৌন কর্মীর সঙ্গলাভ করেছিলেন। অক্সফাম বরাদ্দকৃত এসব আবাসিক ভবনে ওজিবি ভবন বা অক্সফাম গ্রেট ব্রিটেন লেখা থাকত। এটিতে যৌনকর্মী এনে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগকবলিত এলাকায় অবাধ যৌনাচারের ঘটনায় গত সপ্তাহ থেকে বিশ্বে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে অক্সফামের একজন কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন। ৬৮ বছর বয়স্ক বেলজিয়ামের নাগরিক এই কান্ট্রি ডিরেক্টরের নাম রোল্যান্ড ভ্যান হাউয়ের মেরিন। তার বিরুদ্ধে অল্পবয়সী যৌনকর্মীদের সঙ্গে সংসর্গ করার অভিযোগ আনা হয়। তবে তিনি কেবল তিনবারের ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্তে সহায়তার প্রতিশ্রুতি এবং স্বীয় দোষ স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি তাকে সম্মানজনকভাবে পদত্যাগের সুযোগ দেয়। রোল্যান্ড নামের এই কান্ট্রি ডিরেক্টর তার অভিজ্ঞতার সনদপত্র দেখিয়ে পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যান্য ত্রাণ, সাহায্য ও দাতব্য সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশেও কান্ট্রি ডিরেক্টর পদে বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন বলে জানা গেছে। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা-ের পর প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কায় অক্সফাম দুর্নীতিবাজদের কথা প্রকাশ না করার দরুন এরা সারাবিশ্বে তাদের অবৈধ কর্মকা- চালিয়ে গেছে যার দায় অক্সফাম কোনমতেই অস্বীকার করতে পারে না। আরও বড় একটি বিষয় যা এতদিন লোকচক্ষুর অগোচরেই থেকে গেছে তা হচ্ছে অক্সফামের এসব বিবেকবর্জিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাগণ ত্রাণ সংস্থার অর্থায়নে ভাড়া করা বাড়িতে শুধু আদিম প্রবৃত্তিই চরিতার্থ করেনি তারা যৌনাচারের দৃশ্য ভিডিও করে অক্সফামের কম্পিউটারে ডাউনলোডের মাধ্যমে তা থেকে অর্থ উপার্জনের পথও বেছে নিয়েছে। পরবর্তীতে হাইতির এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের পর্নোগ্রাফি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অক্সফাম তার অভ্যন্তরীণ কর্মকা- ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় এখনও যথেষ্ট স্বচ্ছ নয় এই অভিযোগে একজন ব্রিটিশ সেলিব্রিটি এবং এর শুভেচ্ছা দূত নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টু টু পদত্যাগ করেছেন। ইতোমধ্যে অক্সফাম তাদের এক বৈঠকে জানিয়েছে যে, তারা এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের একটি অনুলিপি হাইতি সরকারের কাছে হস্তান্তর করার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হবে। ইতোমধ্যে এই তদন্ত কাজ চলার সময়ই রোল্যান্ড ভ্যানÑ হাউয়ের মেরিন বেলজিয়াম সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক পত্রে তার বিরুদ্ধে আনীত ব্যাপক যৌনাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যে, তিনি হাইতিতে কর্মরত থাকাকালে কোন পানশালা, নাইটক্লাব বা পতিতালয়ে যাননি। তবে অনেক নারী-পুরুষ নানা অজুহাতে তার বাসায় আসা-যাওয়া করত। তাদের কেউ টাকা-পয়সা, কেউ চাকরি প্রার্থনা আবার কেউ কেউ যৌনসেবা দেয়ার প্রস্তাবও করত। তবে তিনি তাদের কোন অনৈতিক সুবিধা দেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি হাইতির একজন সম্মানী ও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার সঙ্গে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে দৈহিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন। এতে কোন টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয় ছিল না।Ñ তা সত্ত্বেও তিনি এ ঘটনার জন্য লজ্জাবোধ করছেন। সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর রোল্যান্ডের এই বক্তব্য তার আগের দেয়া স্বীকারোক্তিÑ ও সাক্ষ্য প্রমাণের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। রোল্যান্ডের এসব অস্বীকৃতিমূলক বিবৃতিতে হাইতি সরকার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দেশটির বৈদেশিক সাহায্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এভিও ফ্লিউরেন্ট বলেছেন, ‘যদি তদন্ত কাজের ব্যত্যয় ঘটে এবং যথাযথ প্রতিকার না পাওয়া যায়Ñ তবে অক্সফামের কর্মকা- যাতে হাইতিতে না চলতে পারেÑ আমরা সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করব।’ এদিকে, হাইতির ঘটনায় সাক্ষীদের হুমকি দেয়ার প্রেক্ষিতে তাদের যাতে কোন ধরনের ক্ষতি না হয় সেজন্য অক্সফাম তদন্ত কমিটি তাদের নাম, পরিচয় প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ঘটনায় প্রায় ৪০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এই সাক্ষ্যের মাধ্যমে জানা যায় যে, শুধু অল্পবয়সী মেয়ে বা নারীদের যৌনকর্মে নিয়োজিত করা হতো না বরং অক্সফামে কর্মরত অনেক নারীকেও নানাভাবে চাপে ফেলে এই গর্হিত কাজে বাধ্য করা হতো।
×