ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঢাকার দিনরাত

কাল মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে দু’ দশক আগেও গুচ্ছ গুচ্ছ একুশের সঙ্কলন প্রকাশিত হতো। এখন সেই বেগবান ধারা স্তিমিতপ্রায়। প্রসঙ্গত স্মরণ করি বায়ান্নর ভাষা আন্দালনের রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরের বছরই ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সঙ্কলন প্রকাশের কথাটি। কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় প্রতিবাদী সঙ্কলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। ১৯৫৩ সালের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে আমরা বুঝব একুশে ফেব্রুয়ারির মতো একটি সঙ্কলন প্রকাশ করা কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কাজটি করে ওঠা সহজও নয়। পশ্চিমাদের শাসন-শোষণ-শ্যেন দৃষ্টির মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম বার্ষিকীতে প্রতিবাদী, প্রকৃত বিদ্রোহী ও প্রগতিশীল এবং সত্যিকারের সৃষ্টিশীল সঙ্কলন প্রকাশ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জই ছিল। মুসলিম লীগের শাসন, চতুর্দিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প, বামপন্থী মাত্রই রাষ্ট্রদ্রোহী, সরকারের গণবিরোধী শাসনের স্টিম রোলার- এমন পরিস্থিতিতে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সঙ্কলনের প্রকাশ একটি দুঃসাহসিক কাজ। শুধু পরিবেশই বৈরী ছিল না, নতুন লেখকরাও সেভাবে শনাক্ত হন নাই; তাঁদের রচনার সাহিত্যমানও সেভাবে তৈরি হয়নি। তবু একুশের চেতনা এবং নবপর্যায়ে যাত্রা করা একটি ভূখ-ের সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক প্রাণশক্তি ও প্রণোদনাকে যুগপৎ ধারণ করার জন্য ওই সঙ্কলনের কোন বিকল্প ছিল না। কয়েক বছর আগেই বাংলায় দাঙ্গার মতো মানবতাবিরোধী ঘটনা ঘটে গেছে। দায়িত্বশীল সাহিত্যকর্মী হিসেবে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদনা করলেন দাঙ্গার পাঁচটি গল্প। আবারও দেখুন, অন্য কেউ এই কাজে এগিয়ে আসেননি, হাসান এসেছিলেন। তাঁকে আসতেই হতো। কারণ গভীর দেশপ্রেম ছিল তাঁর ভেতরে, আর দেশসেবার এবং একই সঙ্গে দেশের মানুষকে জাগাবার উৎকৃষ্ট পথ তাঁর সামনে ছিল একটাইÑ সাহিত্য সম্পাদনা। ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সঙ্কলনের মূল পরিকল্পনাকারী তিনি ছিলেন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-অভিমুখী এবং জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। ব্যক্তিগত তুষ্টি বা কোন গোষ্ঠীর অভিপ্রায় চরিতার্থ নয়, তিনি সংকলন করেছিলেন দেশেরই প্রয়োজন মেটাতে। মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করে বটে, আবার কখনও কখনও ইতিহাসই যেন ব্যক্তির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে; ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। কী ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি সঙ্কলনে? প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, গান, একুশের নকশা, চিত্রমালাÑ সকল কিছুই একুশকেন্দ্রিক, ভাষা আন্দোলনের সাহিত্যিক দলিল। সেই সঙ্গে বাংলা ভাষা আন্দোলনের ঘটনাক্রমকে তুলে ধরা। একুশের মূল চেতনা হচ্ছে মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা এবং তার মর্যাদা সমুন্নত রাখা। মায়ের ভাষায় বাংলা মায়ের জন্য শাব্দিক উচ্চারণ এবং সৃষ্টিশীলতা। তাই সেই ১৯৫৩ সালে বাংলায় কিছু রচনা করার অর্থই ছিল একুশের চেতনাটিকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। সঙ্কলনটিতে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনাপুঞ্জি দিন তারিখসহ লিপিবদ্ধ হয়েছিল। এই সঙ্কলনের ভেতর দিয় হাসান হাফিজুর রহমান দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পাঠক সমাজ তথা দেশবাসীর সম্পর্ক সাঁকো প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আবার নতুন লেখক তৈরির অঙ্গীকারবোধটিও বিস্মৃত হননি। সংকলনটি অনেক কবিতার সঙ্গে ধারণ করেছিল আজকের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা, যেটি তাঁর জীবনের প্রথম প্রকাশিত কবিতা। হাসান হাফিজুর রহমানের জন্য একটি গল্প লিখে দেন তরুণ আনিসুজ্জামান। গল্পটি প্রথমবার পড়ে হাসান বলেন, আরম্ভটা খুব ভাল হয়েছে, কিন্তু সমাপ্তিটা নিরাশ করে। পরে গল্পের সমাপ্তিটা পরিবর্তন করে দেন লেখক। ড. আনিসুজ্জামানের কাছ থেকে আরও জানা যায়, একুশের প্রথম সঙ্কলনে শামসুর রাহমানের যে কবিতাটি ছাপা হয়, সেটি ঠিক ওই সঙ্কলনকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়নি। কবিতাটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন উপলক্ষে শামসুর রাহমানের কোন কবিতা ছিল না; তাগাদা দিয়েও যখন তা পাওয়া গেল না, তখন কলকাতার ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত তার একটি কবিতা সঙ্কলনের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলেন হাসান।’ উল্লেখ্য, সঙ্কলনে প্রকাশিত কবিতাগুলোর পৃথক কোন শিরোনাম ছিল না। সঙ্কলনের ‘একুশের কবিতা’ বিভাগে গ্রন্থিত হয়েছিল সব কবিতা। এতে কোন সংশয় নেই যে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সঙ্কলনটি এই ভূখ-ের মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক চেতনা ও সার্বিক আশা-আকাক্সক্ষার প্রথম গ্রন্থিত রূপ। কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘একুশের সঙ্কলন’-এর এক দশক পূর্তিতে হাসান হাফিজুর রহমানের সঙ্কলনটি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘গুণে-মানে কেমন ছিল এই সঙ্কলন? এ কথা তোলাই মুশকিল, এক শ’ রকম মাপকাঠি লাগবে সে বিচারের জন্য। প্রচলিত সাহিত্যের মান, কবিতা গল্পের মান, শিল্পের চলতি মান এখানে চলবে না। এই সঙ্কলনের গুরুত্ব পর্বততুল্য, তার আলোর বিচ্ছুরণছটা দিগন্ত-পেরুনো। বাঙালীর জাতিত্ব ও বিশ্ববোধের নিয়ামক, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য মহাকর্মযজ্ঞের প্রথম অগ্নিশিখা।’ আবার বাংলা অলিম্পিয়াড রাজধানীর ইংরেজী মাধ্যম স্কুলগুলো ভাষার মাসে বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে নানা আয়োজন করে থাকে। এর ভেতর থাকে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতাও। প্রতি বছরই এ জাতীয় কোন না কোন আয়োজনে যোগ দেবার সুযোগ ঘটে। একটা সাধারণ ধারণা যে ইংরেজী পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বাংলায় কাঁচা হয়ে থাকে। ঢাকার তিনটে প্রধান ইংরেজী-মাধ্যম স্কুলে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশকেন্দ্রিক আয়োজনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ধারণাটি সঠিক নয়। গত শনিবার টার্কিশ হোপ স্কুলে অনুষ্ঠিত বাংলা অলিম্পিয়াডে যোগ দিয়েছিল ঢাকার সব ক’টি ইংরেজ-মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীরা। নাচ-গান-আবৃত্তি-ছবি আঁকা- রচনা প্রতিযোগিতাÑ নানামুখী আয়োজনে মুখর হয়ে উঠেছিল স্কুল ক্যাম্পাস। প্রতিটি শাখার জন্য বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ। রচনা প্রতিযোগিতার বিচারক হয়ে গিয়েছিলাম আমরা ক’জন লেখক। দুই ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীরা এক ঘণ্টা সময় পেয়েছিল যথাক্রমে ‘নকশি কাঁথা’ ও ‘বাংলার মেলা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতার জন্য। রচনাগুলো নিরীক্ষণের পাশাপাশি আমরা চারজন শিক্ষার্থীদের লেখার মান, সৃজনশীলতা এবং অভিনবত্ব নিয়ে আলাপ করছিলাম। লক্ষণীয় যে কোন কোন শিক্ষার্থী বইয়ের ভাষা বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছে। নকশি কাঁথার বিশ্বস্বীকৃতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে প্রায় একশ’ শিক্ষার্থীর ভেতর মাত্র দু’জন। এই ক্যাটাগরিতে নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ছিল। শিক্ষার্থীরা যা শেখে তাই তো লিখবে। শিক্ষা যে শুধু পুস্তক পাঠের বিষয় নয়, এটি আমাদের অুনধাবন করা প্রয়োজন। তবু আমরা আশাবাদী যে, ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষা ও বাঙালী সংস্কৃতি বিষয়ে আগেকার চাইতে এখন অনেক বেশি জ্ঞাত। এ ধরনের বাংলা অলিম্পিয়াড আয়োজনের সুফল পেতে শুরু করেছে ঢাকার শিক্ষার্থীরা। ভাষার মাসে বাংলাবিহীন সাইন বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযান আসাদগেটে সাইন বোর্ড, বিল বোর্ড বাংলায় না লেখায় ডিএসসিসির অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এমন অভিযান চলমান। সেদিন সংসদ ভবন সংলগ্ন আসাদগেট এলাকায় সাইন বোর্ড বাংলায় না লেখায় ডিএসসিসির অভিযান শুরু হযেছে। অভিযানটি পরিচালনা করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গুলশান ২ নম্বরে এ অভিযান পরিচালিত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার যেসব প্রতিষ্ঠানের (দূতাবাস, বিদেশ সংস্থা ও তৎসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র ব্যতীত) নামফলক, সাইন বোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি এখনও বাংলায় লেখা হয়নি সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ২৮ জানুয়ারি ডিএনসিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়েছিল, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এখতিয়ারাধীন এলাকার যেসব প্রুতিষ্ঠানের (দূতাবাস, বিদেশী সংস্থা ও তৎশংশ্লিষ্ট ব্যতীত) নামফলক, সাইন বোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি বাংলায় লেখা হয়নি তা অবিলম্বে স্বউদ্যোগে অপসারণ করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলায় লিখে প্রতিস্থাপন করতে হবে। সে লক্ষ্যে জাতীয় দৈনিকে গণবিজ্ঞপ্তি এবং ডিএনসিসির ফেসবুক পেজে বিষয়টি জানানো হয়। অভিযানের শুরুতে আসাদগেট এলাকার কালার ওয়ার্ল্ড ডিজিট এক্সপ্রেস (ডিজিটাল স্টুডিও), ওয়াল্টন শোরুম (জামান ইঞ্জিনিয়ারিং) প্রতিষ্ঠানগুলোর নামফলক বাংলার পরিবর্তে ইংরেজীতে থাকায় তা অপসারণ করা হয় পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা। অভিযানে ব্র্যাক ব্যাংকের (আসাদগেট শাখা) একটি নামফলক অপসারণ করা হয় এবং বাকিগুলো নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিতে বলা হয়। জানা যায় সব এলাকায় মাইকিং করা ছাড়াও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়। এই অভিযান সম্পর্কে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখছি। কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাস বলেই ডিসিসি কিছু একটা এ্যাকশন করছে। কেউ বলছেন, সাত দিনের নোটিস দেয়ার পরই এই ভাংচুর অভিযানের পেছনে সুযুক্তি নেই। এ রীতিমতো বাড়াবাড়ি। ফাহমিদা নবীর ব্যতিক্রমী পরিবেশনা ভাষার মাসে ঢাকায় কত বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই না হচ্ছে। এবার যেন অনুষ্ঠানের বান ডেকেছে। কোন্টা রেখে কোন্টায় যাই এমন দশা দর্শক-শ্রোতাদের। বরেণ্য শিল্পী ফাহমিদা নবীর আমন্ত্রণ রক্ষা করে তাঁর গান শুনতে যাওয়া হয়নি শুধু অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণে। পরে তাঁর বহু গানের গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর ফেসবুক পোস্টের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ফাহমিদার অজ¯্র গানের গীতিকার গোলাম মোরশেদ। লেখাটি পড়ে হাহুঁতাশ করেছি। তার কিছু অংশ এই কলামের পাঠকদের সমীপে নিবেদিত হলো। কাওসার আহমেদ চৌধুরী লিখেছেন : ‘ফাহমিদা নবী : ভুল করে ভালোবেসে...’ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যায় বেঙ্গল বইয়ের উঠোনে ছিল শিল্পী ফাহমিদা নবীর নতুন গানের অ্যালবামের প্রকাশনা, মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। এতে সিডির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রথিতযশা শিল্পী সুবীর নন্দী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। লুভা নাহিদ চৌধুরী নিজেও অনেক বড় মাপের একজন কণ্ঠশিল্পী। উনার গান যারা শুনেছেন তারা আমার কথার সঙ্গে একমত হবেন আশা করি। মাহমুদুন্নবীর সন্তানেরা জন্মের পর থেকেই গান তুলে নেবেন কণ্ঠে, সেটাই তো স্বাভাবিক। সুরের ভুবনে জন্ম নিয়ে সুর কারও রক্তে প্রবাহিত হবে না, এমনটি হওয়ার নয়! জন্মের পরেই না হয় ধীরেসুস্থে কণ্ঠে গান নিয়েছেন ফাহমিদা। কিন্তু যাঁর ঔরসে ফাহমিদার অঙ্কুুরদগম সেই ঔরসের উত্তরাধিকার তো তঁাঁকে ছাড়বে না। সেই উত্তরাধিকারের প্রমাণ ফাহমিদা ছোটবেলা থেকেই দিয়ে এসেছেন এই দেশে। যার ফলে ১৯৭৮ সালে তার একক সঙ্গীতযাত্রার সূচনা। এরপরে একের পর এক কেবল সাফল্যের বিজয়গাথা! ফাহমিদা নবীর কয়টি গানের অ্যালবামের কয়টি সিডি প্রকাশ করেছে কত বড় সব প্রতিষ্ঠান- সে গল্প এখন অনেক পুরনো! ওসব কাহিনী বলে এখন হালে পানি পাওয়া যাবে না! ফাহমিদা নবী একের পর এক গান করবেন- আর তাঁর গানের সিডি প্রকাশ করবে বেঙ্গলের মতো প্রতিষ্ঠান, এটাও নতুন কোন গল্প নয়। গল্পটি অন্য কোথা, অন্য কোনখানে! যে গল্পটি আসলে বলতে চাইছি, সেটা শিল্পীর গান পরিবেশন, সঙ্গীতের উপস্থাপনা নিয়ে! ফাহমিদা নবীর কোন গানের অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করার সুযোগ আমার খুব একটা হয়নি। বরং সামিনা নবীর গান সরাসরি শুনেছি, উপভোগ করেছি অনেকবার। এরা দু’জনই অসাধারণ শিল্পী। কিন্তু ফাহমিদা নবীর উপস্থাপনা দর্শক হিসেবে আমার চোখে নতুন আলো বুলিয়ে দিল! এই উপমহাদেশে ধ্রুপদ সঙ্গীত শিল্পীরা বাদে আধুনিক গানের শিল্পীদের মাঝে মাত্র অল্প ক’জন শিল্পী আছেন, যাঁদের মঞ্চে প্রবেশ থেকে শুরু করে প্রস্থান পর্যন্ত সময়টুকু- আস্ত একটি সঙ্গীত বলে প্রতীয়মান হয়! এ তালিকায় আমার খেরো খাতায় যে শিল্পীর নামটি যুক্ত হলো- তাঁর নাম ফাহমিদা নবী। শিল্পী ফাহমিদা দর্শক-শ্রোতাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেন তাঁর চলন-বলন কথন, গান, উপস্থাপন, কথায় শব্দ চয়ন- সবকিছু দিয়ে! আজ উনার পরিবেশনা দেখে আমার অন্তত সেটাই মনে হয়েছে। অনেক শ্রদ্ধেয়, অনেক বড়সড় শিল্পীদেরও আমি দেখেছি, যারা গান পরিবেশন কিংবা যন্ত্র বাজান ঈশ্বরের মতো, কিন্তু কথা বলতে গিয়ে একটু নার্ভাস, একটু গুলিয়ে ফেলেন কেমন করে জানি। এ জায়গায় শিল্পী ফাহমিদা অনবদ্য, অনন্য। ফাহমিদা নবীর এ্যালবামে ছয় নম্বর গানটি- প্রয়াত সুরস্রষ্টা লাকী আখন্দের সুর করা। বলে নেয়া ভাল- এই এ্যালবামের সব ক’টি গানের গীতিকার গোলাম মোর্শেদ এবং এর যন্ত্রাণুষঙ্গ পরিচালনা আশু চক্রবর্তীর। ... ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ [email protected]
×