ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দু’দেশের সর্বশেষ বৈঠকে প্রায় নয় হাজার রোহিঙ্গার পরিবারভিত্তিক তালিকা ঠিকানাসহ তুলে দেয়া হলেও বাস্তবে কোন অগ্রগতি নেই বরং নতুন করে প্রতিদিনই আরও রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের খবর আছে। এর পাশাপাশি রাখাইনে নতুন করে মিয়ানমারের সেনা সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সূত্রে। সেখানে তারা রোহিঙ্গাদের অন্তত ৬০০ একর আবাদি জমিতে নতুন করে ঘাঁটি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর মিলেছে। বাংকার খননসহ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের খবরও আছে। সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করে তাদের সম্মানজনক মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সর্বদাই বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সুষ্ঠু ও সমন্বিত সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সর্বদাই বাংলাদেশের পাশে আছে। তবু বাংলাদেশকে সর্বতোমুখী কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান, আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের মিয়ানমারে প্রবেশ ও কাজ করার সুযোগ সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে ইতিপূর্বে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সামরিক অভিযান তথা হত্যা-খুন-ধর্ষণসহ পোড়া মাটিনীতি অবিলম্বে বন্ধসহ শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। এর বাইরেও জাতিসংঘের একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দেয়ার জন্যও বলা হয় প্রস্তাবে। এ বিষয়ে তহবিল বরাদ্দের জন্য বাজেট কমিটিরও সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গেছে। এতে অবিলম্বে সাড়া না দিলে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হতে পারে মিয়ানমার। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারির পক্ষ থেকে এবং সম্প্রতি কানাডা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল অভিযানে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে মিয়ানমারের জেনারেলসহ মং মং সোয়েরকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাপী কালো তালিকাভুক্ত ৫৮ ব্যক্তির অন্যতম একজন এই জেনারেল। অন্যদিকে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ দমন-পীড়নের অভিযোগ এবং তাতে সমর্থন দেয়ার সুনির্দিষ্ট কারণে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীপ্রধান এবং রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলপ্রাপ্ত আউং সান সুচির বিরুদ্ধেও নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়েছে। জাতিসংঘ রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক তদন্ত দল পাঠাতে চাইলেও সুচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার তার অনুমতি দিচ্ছে না। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়েরের জন্য ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। ইতোমধ্যে সুচির নানা আন্তর্জাতিক পদক ও সনদ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশের পক্ষ থেকে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের অনেক দেশে প্রবেশসহ প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার যদি বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সুপারিশ ও তালিকা অনুযায়ী রাখাইনে বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না করে তাহলে আগামীতে তাদের একঘরে হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। সে অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। তখন মনে হয় না এমনকি চীন, রাশিয়া, ভারতও অন্তত নৈতিক ও মানবিক কারণে সমর্থন দেবে মিয়ানমারকে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ ৫টি প্রস্তাব পেশ করেছে। এর আলোকে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা নিঃশর্ত, পূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হোক।
×