ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা জয়, স্বাগতিকদের বিপক্ষে টেস্ট ও টি২০ সিরিজ জয়

বাংলাদেশ সফরে সাফল্যের বৃত্তপূরণ শ্রীলঙ্কার

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশ সফরে সাফল্যের বৃত্তপূরণ শ্রীলঙ্কার

মিথুন আশরাফ ॥ এক এক করে সব হারাল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ সিরিজেও হারল। প্রথম টি২০তে হারের পর রবিবার দ্বিতীয় টি২০তে শ্রীলঙ্কার কাছে ৭৫ রানে হারল। তাতে সিরিজ হারও হয়ে গেল। শ্রীলঙ্কার গড়া ২১০ রান অতিক্রম করতে গিয়ে ১৩৫ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই বিপদের মধ্যে পড়ে। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে কোন সিরিজেই জিততে দেয়নি বাংলাদেশ। এবার নিজ মাটিতে সিরিজ খেলে শুধু হারছে। শুরুতে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। এরপর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে হারে। এবার প্রথম টি২০তে ৬ উইকেটে হারের পর দ্বিতীয় টি২০তেও হার বরণ করে নিতে হলো। চন্দিকা হাতুরাসিংহে বাংলাদেশ দল ছেড়ে শ্রীলঙ্কা দলে যোগ দেয়ার পর পুরো উল্টো চিত্র মিলছে। যেখানে হাতুরাসিংহের ছোঁয়ায় দেশের মাটিতে উড়ছিল বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতেও ঝলক দেখাচ্ছিল। সেখানে হাতুরাসিংহে যেতেই দেশের মাটিতেও মুখ থুবড়ে পড়েছে দল। শ্রীলঙ্কার বেলায় ঘটছে পুরো উল্টো চিত্র। দেশে-বিদেশে ২০১৭ সালটি খুবই খারাপ গেছে শ্রীলঙ্কার। হারের গোলকধাঁধাতেই আটকে পড়েছিল। হাতুরাসিংহে যোগ দেয়ার পর বাংলাদেশে খেলতে আসে শ্রীলঙ্কা। বছরের প্রথম সফর এবং হাতুরাসিংহের প্রথম এ্যাসাইনমেন্টেই শ্রীলঙ্কা বাজিমাত করে। বদলে যাওয়া একটি দলে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কা। তার শুরু বাংলাদেশকে একের পর এক ম্যাচ হারের মাধ্যমে হয়। হাতুরাসিংহেও শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ হওয়ার পর প্রথম এ্যাসাইনমেন্টেই নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যান। সেটি তার কোচ হিসেবে সাবেক দল বাংলাদেশকে হারানোর মধ্য দিয়েই। সিলেটে এর আগে কখনই দুই দল না খেলাতে একটা আশা ছিল বাংলাদেশ জিততেও পারে। উইকেট সম্পর্কে ধারণা বাংলাদেশেরই যে ভাল থাকার কথা। কিন্তু টস জিতে ফিল্ডিং নেয়াই যেন ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য এটাকে ভুলও বলা যাচ্ছে না। কারণ এর আগে ৬টি টি২০ খেলা হয় সিলেটে। কিন্তু কখনই বাংলাদেশ খেলেনি। তবে যে ৬টি ম্যাচ হয়েছে, ৫টি ম্যাচেই পরে ব্যাটিং করা দল জিতেছে। সেই ধারণা থেকেই অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও টস জিততেই আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। এর সঙ্গে উইকেটে সামান্য ঘাষ ছিল। তবে শুষ্ক। ব্যাটিং করার জন্য যা আদর্শ উইকেট। এরপরও বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেনি। এর পেছনে আরেকটি কারণও আছে। পরে যে শিশির পড়তে পারে। তাতে করে শ্রীলঙ্কা বোলাররা যত ভাল বোলিংই করুক, বল ব্যাটে ভালভাবেই আসবে। টস জেতার পর মাহমুদুল্লাহ আগে ফিল্ডিং নেয়ার বিষয়ে এগুলোই যুক্তি দেখিয়েছেন। তবে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল অবশ্য বলেছেন, টস জিতলে তারাও আগে ফিল্ডিংই করতেন। বাংলাদেশ টস ভাগ্যে জয়ী হয়েছে। কিন্তু আবারও কোন পরিকল্পনাই কাজে লাগল না। শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাটিং করুক আর পরে ব্যাটিং করুক, জয় যেন তাদের কপালেই লেখা। সেই জয়টি যে এত বড় মিলবে তা কেউই ভাবতে পারেননি। শ্রীলঙ্কা যে এত বড় স্কোর গড়েছে তাতেই যেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমে গেছে। মানসিকতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তা না হলে ২২ রানে সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম, মোহাম্মদ মিঠুন আউট হওয়ার পর ৫৯ রানে গিয়ে তামিম ইকবাল ও ৬৮ রানে গিয়ে আরিফুল হক আউট হয়ে যান। ইনিংসকে বড় করার কোন চেষ্টাই সফল হতে পারেনি। যে উইকেটে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা এত দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। সেই উইকেটেই কিনা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের রান তুলতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। মাহমুদুল্লাহ চেষ্টা করেন। কিন্তু ৪১ রান করেই আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ১৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুতে কুশল মেন্ডিসকে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করতেই যেন বাংলাদেশের শনির দশা লেগে যায়। তা না হলে যে কুশল মেন্ডিস ৭০ রান করেছেন তার ক্যাচ ৮ রানের সময়ই ধরা যেত। অভিষিক্ত আবু জায়েদ রাহীর প্রথম ওভারেই সাইফউদ্দিন ছেড়ে না দিলে এতদূর যেতে পারতেন না মেন্ডিস। ৪২ রান করা দানুশকা গুনাথিলাকা ১ রানেই স্টাম্পিং হয়ে সাজঘরে ফিরতে পারতেন। ১২ রানের সময় আবার মেন্ডিসের বল অভিষিক্ত মেহেদী হাসানের মাথার সামান্য ওপর দিয়ে যেত না। ১৫ রানে থাকা গুনাথিলাকার বল তামিম ইকবালের হাতে ছোঁয়া লেগে বের হয়ে যেত না। আরেকবার গুনাথিলাকা রানআউট হওয়া থেকে বাঁচতেন না। ২৮ রানে থাকা গুনাথিলাকার ক্যাচ এবার মাহমুদুল্লাহ মিস করতেন না। ফিল্ডিংয়ে যেন শুধু হতাশাই ছড়িয়েছে। এমন সুযোগ পেলে কি আর কোন ব্যাটসম্যান তা হাতছাড়া করেন। গুনাথিলাকা ও মেন্ডিস মিলে তাই ৯৮ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এ দুইজন যখন ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করছিলেন তখন মনে হচ্ছিল ২০০ রানতো ছাড়াবেই; সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সর্বোচ্চ ২২৪ রান করেছিল সেই স্কোরকেও ছাড়িয়ে যাবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সৌম্য সরকার গুনাথিলাকাকে ফেরান। ব্রেক থ্রু এনে দেন। তাতে করে রানের চাকায় গতি কমে। তবে সেই গতিতে লাগাম টেনে ধরা যায়নি। মেন্ডিস ও থিসারা পেরেরা যে মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। পেরেরা ৩১ রান করে আউট হওয়ার পর মেন্ডিস ৭০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ততক্ষণে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে ১৭ ওভারের সময়ই ১৬০ রান জমা হয়ে যায়। এরপর উপুল থারাঙ্গা ও দাসুন শানাকা মিলে দলকে ২০৫ রানে নিয়ে যান। থারাঙ্গা (২৫) এমন সময়ে আউট হলেও শানাকা (৩০*) শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে দলকে ২১০ রানে নিয়ে যান। যখন এত রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়ে যায় তখনই যেন বাংলাদেশের হারের সমাধি তৈরি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত হারেও বাংলাদেশ। টি২০ সিরিজও হারে।
×