ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাউফলের তরমুজ চাষীরা সার ও ওষুধের দামে হতাশ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাউফলের তরমুজ চাষীরা সার ও ওষুধের দামে হতাশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ১৮ ফেব্রুয়ারি ॥ বেড়ে উঠছে তরমুজ গাছ। আর কয়েক দিনের মধ্যেই ফুলে ফুলে ভরে যাবে ক্ষেত। কিন্তু কৃষকের দুঃচিন্তার শেষ নেই। গাছ বেড়ে উঠলেও সার-ওষুধের দামে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ আলী জানান, বাউফলের বিভিন্ন চরে এ বছর ১২৫ হেক্টরে তরমুজ, বাঙ্গি ৫০ হেক্টর ও ৪০ হেক্টরে খিরা চাষ হয়েছে। বোরো আবাদ বৃদ্ধি আর অতি জোয়ারের কারণে ক্ষেত শুকাতে দেড়ি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা কমেছে বাঙ্গি, তরমুজ ও খিরার। তবে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে তরমুজের আবাদ। শৌলা ও চর ওয়াডেলে পাশের জেলা ভোলা থেকে এসেও কয়েক চাষি তরমুজ চাষ করছেন এ বছর। চর কচ্ছবিয়ায় মোট ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন বাকলা তাঁতেরকাঠি গ্রামের ফিরোজ চৌধুরী। স্থানীয় নুরাইনপুর বন্দরের বীজ ব্যবসায়ী ছোবহান হুজুরের কাছ থেকে ও কালাইয়ার হাট থেকে ড্রাগন, বিগফ্যামেলি ও বন্ডাকমাস্টার জাতের বীজ সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন মাদায়। ইতোমধ্যে তরমুজ গাছ বাইতে শুরু করেছে । আর ক’দিন বাদেই ফুলে-ফুলে ভরে উঠে ক্ষেত। বীজ সংগ্রহে আগের মতো সিন্ডিকেটের কারসাজি না থাকলেও প্যাকেট প্রতি ১০০ টাকা দাম বেশি ছিল উল্লেখ করেন তিনি। গত বছর জোয়ারের পানির কারণে খুব একটা লাভের মুখ না দেখলেও এ বছর প্রায় এক একর খিরাসহ মোট ১৫ একরে তরমুজের চাষ করেছেন তিনি। ফিরোজ চৌধুরী জানান, ধান চাষে এখন আর লাভের নিশ্চয়তা নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন কৃষিতে বিপদ-আপদ বাড়ছে। শেষ অগ্রায়হনে ভরা-জোয়ারে ক্ষেত তলিয়ে ধান কাটতে দেড়ি হওয়ায় তরমুজ চাষও এবার পিছিয়ে গেছে এক ধাপ। এখন চাষের ভর মৌসুম। গাছ বাইতে শুরু করেছে। এ সময় রিং করে তরমুজের মাদায় সার-ওষুধ দেয়ার সময়। রোগ-বালাই তেমন একটা না থাকলেও সার-ওষুধের দামে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। একই চরে তরমুজ চাষের দীর্ঘ ১০-১২ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছেন পাশের ভোলা জেলার চরকলমির চাষি বাবুল খা। জমি লিজ নিয়ে ইউনাইটেডের বিগফ্যামেলি, জাগুয়ার, ব্লাক মাস্টার ও ড্রাগন জাতের তরমুজের চাষ করেছেন তিনি। পাশের ভোলা জেলা থেকে এসে এই চরে তরমুজ চাষের কারণ হিসেবে তিনি জানান ভিন্ন কথা। একই জমিতে বার বার কীটনাশক আর সার-ওষুধ ব্যবহারের কারণে ওই এলাকার জমিতে আগের মতো এখন আর তরমুজের ভাল ফলন মেলে না। আছে অতি জোয়ার আর লবণপানির হানার আতঙ্ক। ক্ষেতে কৃষি অফিসের লোকজনের দেখা না পাওয়ায় বাবুল খার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন এই চরের অপর তরমুজ চাষিরা। তাঁতেরকাঠি গ্রামের রাধু মৃধা দুই একর জমিতে করেছেন বন্ডাকমাস্টার ও ড্রাগন জাতের রমুজের চাষ। তিনি জানান, প্রতি মাদায় ১২ গ্রাম এমওপি, ৫-৭ গ্রাম ইউরিয়া, ১শ’ ৭০ গ্রাম টিএসপি, ১৫ গ্রাম ড্যাবসহ গ্রোজিন, সিনজেনটার ক্যারাটে, ম্যাগমা, থিউবিট, ভর্টিমেঘ ও স্কোরের মতো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। আর এসব মিলে মাদা প্রতি ইতোমধ্যে ৫০-৬০ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। একই চরের তরমুজ চাষি শহিদ ফরাজি জানান, আগের বছর ড্যাব ১ হাজার ১শ’ ৫০ টাকা, ইউরিয়া ৭শ’ ৫০ টাকায় কেনা গেলেও এ বছর ড্যাব ১ হাজার ৫শ’ টাকা, ইউরিয়া ৮শ’ ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খরচ যাই হোক অতিজোয়ার কিংবা শীলা-বৃষ্টির মতো বৈরী আবহাওয়া না হলে তরমুজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি। সারের দাম বৃদ্ধির কথা তুলে কৃষি অধিদফতরের লোকজন চরে এসে কোন ধরনের খোঁজ-খবর কিংবা পরামর্শ দেন না অভিযোগ কৃষক রাদু মৃধার। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আরাফাত সানি বলেন, ‘ডিলারদের কাছ থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করে থাকতে পারে। তবে কোন ডিলার সারের দাম বেশি রাখলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
×