ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুদিনব্যাপী মৌ-মেলা উদ্বোধন কৃষিমন্ত্রীর

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে মধু

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে মধু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে মধু। আর সেই সম্ভাবনাকে সামনে রেখে রাজধানীতে দ্বিতীয়বারের মতো দু’দিনব্যাপী শুরু হয়েছে জাতীয় মৌ মেলা ২০১৮। মৌ মেলার উদ্বোধন করে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। এ সময় তিনি দেশীয় প্রজাতির সঙ্গে বিদেশ থেকে আনা মৌমাছির ক্রস করে নতুন জাত উদ্ভাবনের আহ্বান জানান। ফার্মগেটস্থ আ. কা. মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটোরিয়ামে দুই দিনব্যাপী মৌ মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশীয় প্রজাতির সঙ্গে বিদেশ থেকে আনা মৌমাছির ক্রস করে নতুন জাত উদ্ভাবন করুন। এসব মৌমাছির মধু আহরণ ও ফসলে কী রকম পরাগায়ন ঘটতে পারে তা নিয়ে কাজ করা দরকার। মধু উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেসরকারী খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, নিয়মিত মধু সেবন মানবদেহের দীর্ঘ মেয়াদী সুস্থতার ভিত্তি তৈরি করে। মৌমাছি জীব বৈচিত্র সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সব বয়সের মানুষ মধু খেতে পারে। তিনি রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর সময় সেখানে যাতে মৌমাছি ও পাখি থাকতে পারে এমন বৃক্ষ রোপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম লক্ষ ঠিক করি পেট ভরে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পরে অন্যকিছ্।ু এখন দেশের মানুষের জন্য তিনবেলা পেট ভরে খাবারের সংস্থান করতে পেরেছি। তবে মাঝে মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমদানি কম বেশি সব দেশেই হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ এখন দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূন্নতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা অন্য ফসল উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। গুরুত্ব দিচ্ছি বলেই আমরা ২০১৬ সালে প্রথম মৌ মেলার আয়োজন করি। তিনি রাণী মৌমাছিকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও তাগিদ দেন। পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাওয়ার কথা পুনরায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানির স্তর নিচে নামছে। বোরো উৎপাদনে পানির খরচও বেশি হয়। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে তিন হাজার ২শ’ লিটার পানি খরচ হয়। আমাদের আউশ ও আমনের দিকে জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দানাদার খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাঝে মধ্যে আমাদের দানাদার খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা সরিষা, ধনিয়া, তিল, কালোজিরা, লিচুসহ সব ধরনের মধু মিলছে এই মেলায়। এসব ফসলে মৌ চাষ, মধু আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে মেলায় সরকারী-বেসরকারী ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের ৬০টি স্টল স্থান পেয়েছে। আজ সোমবার মেলার শেষ দিন। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকবে। মেলায় একাধিক স্টলে ঘুরে দেখা গেছে কালোজিরা আর সরিষার মধুর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। এছাড়াও কেউ কেউ সুন্দরবনের মধুও কিনে নিচ্ছেন। বিক্রেতা ফাতেমা আক্তার বলেন, আমাদের কাছে প্রায় সব মধু থাকলেও কালোজিরা আর সরিষাই বেশি বিক্রি হয়। আর মেলায় কিছুটা ছাড় দিয়েও বিক্রি হয় বলে জানালেন। মেলা থেকে মধু কিনে হাসান জাবেদ নামের ক্রেতা বলেন, আগে এই চাষের মধু তেমন একটা বিশ^াস হতো না। তবে এখন এটা একটা গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছেছে। মেলায় বড়দের পাশাপাশি ছোট্ট শিশুদের দেখা গেছে। এছাড়াও মধুর পাশাপাশি বিভিন্ন তেল যেমন কালোজিরা তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই তেলের নানা উপকারিতার কথাও বলেন বিক্রেতারা। মৌচাষ হতে আয় সম্পর্কে কৃষি পরিসংখ্যান ২০১৬ সালের তথ্য জানা গেছে, বাংলাদেশে সরিষা আবাদিত জমির পরিমাণ ৩ লাখ ১৮ হাজার ৬৩৩ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে মৌচাষের জন্য তিনটি করে বাক্স স্থাপন করলে মৌবাক্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৯৯টি। সেখানে সারাদেশে মাত্র ৫০ হাজার টি মৌবাক্স স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। এই ৫০ হাজার বাক্স থেকে আহরিত মধুর পরিমাণ ছিল ১৫০০ টন। যার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ২৫ দশমিক ৫ (সাড়ে ২৫) কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র সরিষার জমিতে মৌবাক্স স্থাপন করে ২৮ হাজার টন মধু পাওয়া সম্ভব। যার মূল্য প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা। এছাড়াও মৌ বাক্স স্থাপনের ফলে সড়িষার ফল কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। ফলে কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন বেশি সরিষা উৎপাদন সম্ভব বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও মধু চাষের কারণে লিচু উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটেছে দেশে। ২০১১ সালে যেখানে ১৮ হাজার ২৪৬ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২০ হাজার টন লিচু হয়েছে, সেখানে ২০১৬ সালে প্রায় আড়াই লাখ টন ছুঁয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
×