ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিঃস্বার্থ রাজনীতি কিছু নেই ! অধ্যাপক কুনাল সেনের গবেষণা তথ্য

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নিঃস্বার্থ রাজনীতি কিছু নেই ! অধ্যাপক কুনাল সেনের গবেষণা তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিঃস্বার্থ রাজনীতি বলে কিছু নেই। আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তি কিংবা সামাজিক ভাবমূর্তি নির্মাণের আকাক্সক্ষা থেকেই সাধারণত মানুষ রাজনীতিতে প্রবেশ করে। দলমত নির্বিশেষে সব রাজনীতিকের মানসিকতা এক্ষেত্রে অভিন্ন। যদিও একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনীতিবিদরা তাদের ‘সামাজিক ভাবমূর্তি’ নিয়ে খুব একটা বিচলিত হন না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের কাছে আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তিই মুখ্য। অবশ্য নবীন বা নারী রাজনীতিকরা শুরুতে সামাজিক ভাবমূর্তিকেই বেশি গুরুত্ব দেন। ‘হোয়াট মোটিভেইটস পলিটিশিয়ানস? ইভিডেন্স ফ্রম এ ল্যাব ইন দ্য ফিল্ড এক্সপেরিমেন্ট ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফলে এসব বিষয় উঠে এসেছে। ম্যানচেস্টার বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুনাল সেন এবং তার সহকর্মীরা ভারতের আঞ্চলিক রাজননৈতিক ব্যবস্থা পঞ্চায়েতের উপর একটি আচরণগত অর্থনীতির গবেষণা পরিচালনা করেন। রবিবার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কেএএস মুর্শিদ এতে সভাপতিত্ব করেন। বিআইডিএসের উর্ধতন কর্মকর্তা ও গবেষকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। গবেষণায় দেশটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি রাজ্য উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতের (ইউনিয়ন পরিষদের অনুরূপ) নির্বাচিত ১০৫ জন রাজনীতিক ও ৬৯ জন সাধারণ মানুষের মানসিকতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কুনাল সেন বলেন, আমাদের বিশ্লেষণ হলো- তৃণমূল পর্যায়ের সরকার ব্যবস্থার রাজনীতিতে কেউ নিঃস্বার্থভাবে আসেন না। দলমত নির্বিশেষে তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু পাওয়ার আশা থাকে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে (এমএলএ) যারা রাজনীতিতে আসেন, তারা কিসের আশায় রাজনীতিতে যুক্ত হোন সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসে। সাধারণত প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করেই বিধানসভা বা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হতে হয়। তবে ব্যতিক্রমও থাকতে পারে। এ বিষয়েও গবেষণা হওয়া উচিত। এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কিনা সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি এই গবেষক। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, রাজনীতিবিদ এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে যদি একটি অর্থনৈতিক সুবিধার গেম খেলা হয় তখন দেখা যায় যে, এই দুই দলের মধ্যে আচরণগত তেমন পার্থক্য হয় না। যদিও ধারণা করা হয় যে, ইতিবাচক সামাজিক ভাবমূর্তি নির্মাণে রাজনীতিবিদরা আরও বেশি ন্যায়সঙ্গতভাবে অর্থনৈতিক বণ্টনে উৎসাহিত হবেন। অথচ গবেষণার ফলাফলে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। যখন অর্থনৈতিক সুবিধা বণ্টনের বিষয়টি লোকজনের কাছে জানাজানি হয়, তখন রাজনীতিবিদদের চেয়ে বরং অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাই বেশি ন্যায্য বণ্টন করেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে আবার নারী রাজনীতিকরা তাদের সামাজিক ভাবমূর্তির দ্বারা বেশি উৎসাহিত হন। এ কারণে তারা লোকসম্মুখে অর্থনৈতিক ন্যায্য বণ্টনে পুরুষ রাজনীতিবিদদের তুলনায় বেশি উৎসাহিত হন। সামাজিক ভাবমূর্তি বা ইমেজ রাজনীতিবিদদের ন্যায়সঙ্গত আচরণে উদ্বুদ্ধ করে না। রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের তুলনায় মানসিকভাবে দৃঢ় হয়ে থাকেন। তাই সাধারণ লোকের কথায় প্রভাবিত হওয়ার মানসিকতা থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকেন। এ কারণে তারা লোক জানানাজানির পরও অর্থনৈতিক প্রাপ্তির বিষয়টিকে অগ্রাধিকারে রাখেন।
×