ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ উদ্ধারে মামলাই একমাত্র পথ

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ উদ্ধারে  মামলাই একমাত্র পথ

॥ পর্ব-এক ॥ বাংলাদেশ ব্যাংক অবশেষে রিজার্ভ চুরির দু’বছর পর এই অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্সের রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঘটনা ঘটার পর থেকেই ঘটনাপ্রবাহের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক লেখায় আমি খুব জোরালোভাবেই উল্লেখ করেছিলাম যে, আদালতের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কোন অবস্থাতেই এই অর্থ উদ্ধার করতে সক্ষম হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ত ভেবেছিল, ফিলিপিন্সের রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন এবং ফিলিপিন্স সরকার যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তাতে তারা এমনিতেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই অর্থ ফেরত দিয়ে দেবে। মূলত ফিলিপিন্সের সে সময়ের সকল কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তির যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তা পুনরুদ্ধার করা। কেননা এই ঘটানর পর মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্বে তাদের চরম ভাবমূর্তির সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। বিশ্বের অনেক দেশের ব্যাংক ফিলিপিন্সে অর্থ প্রেরণ করার ক্ষেত্রে এক রকমের অনীহাও দেখাতে শুরু করেছিল। এই ভাবমূর্তির সঙ্কট কাটিয়ে উঠার উদ্দেশ্যেই ফিলিপিন্স সরকার এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, যা দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ত ভেবে থাকতে পারে যে, আলোচনার মাধ্যমে তারা তাদের খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত পাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি এবং ঘটবেও না। কারণ, আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে কোন অর্থ খোয়া গেলে তা যে আইনী লড়াই ছাড়া উদ্ধার করা যায় না এই সত্যটি বুঝতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’বছর সময় লেগে গেল, যা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। এদিকে এই দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে ফিলিপিন্সের রিজ্যাল ব্যাংক তাদের ভাবমূর্তির সঙ্কট কাটিয়ে উঠে এবং নিজেদের বেশ গুছিয়ে নিয়ে এখন স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধেই মামলা করার হুমকি দিতে শুরু করেছে। ‘চোরের মার আবার বড় গলা’ আর কাকে বলে। অবশ্য কোন চুরির ঘটনার পর যদি গৃহস্থ সেই চোরের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে চোর নিজেই যে গৃহস্থের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে তাতে অবাক হওয়ার কি আছে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের যে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে এবং তারা যে অবশেষে রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেজন্য তাদের সাধুবাদ। ফিলিপিন্সের রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের পাল্টা মামলার হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত আর কালবিলম্ব না করে এই মুহূর্তে তাদের খোয়া যাওয়া অর্থ উদ্ধারে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এই ব্যাংক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা। রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন যে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত এবং মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করতে যে তারা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে তার অসংখ্য প্রমাণ আছে। এই অর্থ উদ্ধারে মামলা দায়ের করার জন্য যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ, উপাদান এবং আইনগত ভিত্তি আছে। তাই আর কালবিলম্ব করা মোটেই সমীচীন হবে না। অর্থ উদ্ধারে সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে যে কি পরিণতি হয় তার বড় প্রমাণ অন্যায় করেও রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার হুমকি। আরেকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয় নিয়ে কেউই তেমন উচ্চবাচ্য করে না, বরং কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে অর্থ উদ্ধারের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। বিশ্বে লাইবর রেট কেলেঙ্কারি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে জালিয়াতি, সাবপ্রাইম মর্টগেজ জালিয়াতিসহ অনেক বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে এবং বিশ্বের অনেক বৃহৎ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার জরিমানাও গুনেছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য হয়নি। ফলে আমরা অনেকেই এসব আর্থিক কেলেঙ্কারির ব্যাপারে তেমন কিছুই জানি না। কিন্তু আমরা অর্থ উদ্ধারে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলেও বিষয়টি নিয়ে এমন শোরগোল সৃষ্টি করেছি, যা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েই দাঁড়িয়েছে। এখানেও মামলা শুরু করার আগেই রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রকারান্তরে রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনকে পাল্টা মামলা করার হুমকি দিতে উৎসাহিত করেছি। এখন যদি বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা দায়ের করতে বিলম্ব করে আর ওদিকে যদি রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করে বসে তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াবে তা কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একবারও ভেবে দেখেছেন? সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত অতিকথন পরিহার করে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে দ্রুত এই মামলাটি দায়ের করা।
×