ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বল্পোন্নত দেশে প্রবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

স্বল্পোন্নত দেশে প্রবৃদ্ধি

বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ অবশ্যই। স্বল্পোন্নত বা এলডিসিভুক্ত পঁয়তাল্লিশ দেশের মধ্যে মাত্র পাঁচটি দেশ গত বছর সাত শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যার অন্যতম বাংলাদেশ। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। তার আগে প্রস্তুতিমূলক যে কর্মসম্পাদন করা জরুরী প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি তার অন্যতম দিক। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সাত দশমিক এক শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। পাশাপাশি জিবুতি অর্জন করেছে সাত শতাংশ, ইথিওপিয়া আট দশমিক পাঁচ শতাংশ, মিয়ানমার সাত দশমিক এক শতাংশ এবং নেপাল অর্জন করেছে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে যে চিত্র দেখানো হয়েছে তা বাংলাদেশ ক্রমঅগ্রগতির পথে জিডিপি থেকে। এটা ঠিক যে, এলডিসিভুক্ত অনেক দেশই এখনও প্রাথমিক পণ্য রফতানির ওপর নির্ভরশীল। প্রায় সব দেশই বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে, বিষয়টি অবশ্য নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এই ঘাটতি চলে আসছে। তবে আগের তুলনায় তা বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপালের বাণিজ্য ঘাটতি জিডিপির এক শতাংশীয় ‘পয়েন্ট’-এর কম। সেদিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই অন্য দেশগুলোর তুলনায়। যেখানে ভুটান, গিনি, মোজাম্বিক, লাইবেরিয়ার বাণিজ্য ঘাটতি ২৫ শতাংশের বেশি। আবার রেমিটেন্সের দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। যেমন ২০১৭ সালে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোতে রেমিটেন্স এসেছে ৩৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পেয়েছে ২০১৭ সালে বাংলাদেশÑ ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তুলনায় নেপাল ৬ দশমিক ৬, হাইতি ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে চলছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার। এখনও অনেক সুবিধাবঞ্চিত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্থবির হয়ে আছে। ফলে বিশ্বে বৈষম্য বাড়ছে। এই অবস্থার অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে না এলে পতন অনিবার্য। এ দেশগুলোর উন্নয়নে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া না হলে এসডিজি যা টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে দুরূহ। আঙ্কটাড দেখিয়েছে ২০১৭ সালে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোতে গড় প্রবৃদ্ধি এসেছে পাঁচ শতাংশ। এর ফলে ব্যাহত হতে পারে সুসংহত ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। আবার দেখা গেছে, ২০১৭ সালে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্য ঘাটতি। ২০১৮ সালে এ ঘাটতি আরও বাড়বে। ফলে আরও বিস্তৃত হতে পারে অর্থনৈতিক বৈষম্য। এলডিসিভুক্ত গুটিকয় দেশ ২০১৭ সালে বাণিজ্যিক উদ্বৃত্তে যেতে পেরেছে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের এক হিসাবে দেখা গেছে। যার মধ্যে দুটি দেশ আন্তর্জাতিক সাহায্যনির্ভর। বাংলাদেশ আর সাহায্যনির্ভর দেশ নয়। তলাবিহীন ঝুড়িও নয়। স্বাবলম্বী এক দেশ। তাই তার ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ নেই। এটা সঠিক যে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কখনও অর্জন করতে পারবে না। তবে যদি তারা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের গতি বাড়াতে পারে তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবে। সে জন্য প্রয়োজন জরুরীভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ। এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সে বিষয়ে অবশ্যই তাদের আরও মনোযোগ দাবি করে। স্বল্পোন্নত দেশের গ-ি থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসার পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূর হতে থাকবে- এমনটাই প্রত্যাশা।
×