ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক

ডলারের লাগাম টানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ডলারের লাগাম টানতে  চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈদেশিক মুদ্রার বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা ২৫ পয়সা টাকায় উঠেছে। আমদানি পর্যায়ের ডলারের দর উঠেছে ৮৪.৪৫ টাকায়। ডলারের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ছে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামও। রবিবার পাউন্ডের দর বেড়ে হয়েছে ১১৮ টাকা ৯০ পয়সা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, টাকা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানিকারকরা। এ কারণে বিদেশী মুদ্রার দর নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকগুলোকে অহেতুক ডলার ধরে রেখে দর বৃদ্ধির অপতৎপরতা বন্ধের বিষয়ে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রবিবার বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি ডলারের দর বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সংস্থাটি ডলারের দর যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে বলে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডলার কিনে রাখতে নিষেধ করে। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক এতে হস্তক্ষেপ করবে বলে ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতির দৃষ্টিকোন থেকে ডলারের দরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করুক তা চায় না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, ডলারের চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে আর চাহিদা কমলে দাম কমে যাবে। এটাই স্বাভাবিক। তাই ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়াই ভাল। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয় বলে তারা মনে করেন। রবিবারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক ইউনিয়ন ব্যাংক নগদ ৮৫ টাকা ২৫ পয়সায় ডলার বিক্রি করছে। আর সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা ৯০ পয়সায় ব্রিটিশ পাউন্ড বিক্রি করছে পূবালী ব্যাংক। জানা গেছে, ভারতের মুদ্রা রুপি, চীনের ইউয়ান, রাশিয়ার রুবল আর ইউরো জোনের ইউরোর যখন বড় দরপতন হয়েছিল, তখন টাকার মান ‘স্থিতিশীল’ ছিল। বিশ্ববাজারে এসব মুদ্রার মান এখন স্থিতিশীল হলেও বাংলাদেশের টাকা গত ছয় মাস ধরেই দুর্বল হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের মতে, দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সরঞ্জামের আমদানি বেড়েছে। আমদানি খরচ মেটাতে ডলারের চাহিদাও বেড়েছে, ফলে ‘স্বাভাবিক কারণেই বাড়ছে ডলারের বিনিময় হার। তবে ডলারের দরের এই উর্ধগতি যে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়, তা ধরা পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতে ব্যাংকগুলো ডলারের যে মূল্য দেখিয়েছে, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার চেয়ে ২ থেকে আড়াই টাকা বেশি রাখা হচ্ছিল। এতে করে বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়। আর ব্যাংকগুলো মুনাফা বাড়াতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব আমদানি নিষ্পত্তি করতে চায়। মূলত বছর শেষে ভাল মুনাফা করতেই তাদের এ প্রবণতা। এদিকে খাদ্য ও অবকাঠামো নির্মাণ পর্যায়ে আমদানি ব্যয়ও হঠাৎ বেড়ে গেছে। এভাবে প্রকৃত দর গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় কেন তাদের জরিমানা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনসহ মোট ২৬টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার ছিল জবাব দেয়ার শেষ দিন। সবগুলো ব্যাংকই জবাব দিয়েছে। এখন সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যাদের জবাব সন্তোষজনক হবে না তাদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (২) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে একটি ব্যাংককে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত বছরের ২৯ নবেম্বর বাজার নিয়ন্ত্রণে জরুরী বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার এ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা। সভায় ঘোষিত দামেই ডলার বিক্রি করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। বাফেদার চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, আমদানি বাড়ায় ডলারের চাহিদার কারণেই এ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। যা ভুল হওয়ার হয়ে গেছে। এখন সব ব্যাংককে বলা হয়েছে, ঘোষিত দামে ডলার বিক্রি করতে। এতে সবাই একমত হয়েছে। ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বাজারে নজর রেখেছেন এবং চাহিদা অনুযায়ী ডলার ছাড়ছেন। ব্যাংকগুলো যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনে বেশি দামে বিক্রি না করে সেটাও তদারকি করা হচ্ছে।
×