ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ৫০ বছর

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ৫০ বছর

উপমহাদেশের প্রথম উচ্চতর মৎস্য শিক্ষা ও গবেষণার প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ। ১৯৬১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ১৯৬৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করেছিল মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ। ২০১৭ সালে এসে বিশ^মানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর গ্রাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে সফলতার ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনুষদটি। ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে বাকৃবি মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ মার্চের ২ থেকে ৪ তারিখ তিন দিনব্যাপী সকল গ্রাজুয়েট ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করছে সুবর্ণজয়ন্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে উত্তর দিকে প্রায় ২০০ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত অনুষদটি। ভৌগোলিক দিক থেকে আবহাওয়া কিছুটা সিক্ত থাকায় পরীক্ষণমূলক পুকুরে মাছ চাষ বিষয়ক পড়াশোনায় অনেকটায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অনুষদটি প্রধান দুটি ভবন নিয়ে গঠিত। প্রধান ভবনে রয়েছে মাছ ও মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব গবেষণাগার, ক্লাসরুম এবং শিক্ষকদের অফিসরুম। এসব গবেষণাগারগুলো আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য অবকাঠামোগত দিক দিয়ে সুসমৃদ্ধ। অন্যটি অধ্যাপক আমীনুল হক ভবন। এখানে রয়েছে অনুষদের ডিন অফিস, কনফারেন্সরুম সহ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসরুম। ভবনের পেছনেই রয়েছে গবেষণা পুকুর এবং গবেষণা কমপ্লেক্স যেখানে অনুষদের শিক্ষক তাদের গবেষণা কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীরা গবেষণাসহ ব্যবহারিক শিক্ষা নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও অনুষদের অধীনে রয়েছে ২১ একর বিশিষ্ট মৎস্য মাঠ গবেষণা কেন্দ্র যেখানে ¯œাতকোত্তর ও পিএইচডির শিক্ষার্থীরা শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ নিতে পারে। রয়েছে মাছের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি, বিস্তারের জন্য বাকৃবি মৎস্য খামার ও শতাধিক গবেষণা পুকুর। এ ছাড়াও অনুষদীয় প্রফেসর ড. মোস্তফা আলী রেজা হোসেন এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ ‘মৎস্য জাদুঘর ও বায়োডাইভার্সিটি সেন্টার’। এই অনুষদে বিপুল কর্মযজ্ঞকে বাস্তবরূপ দেয়ার জন্য অনুষদে রয়েছে ৪টি অনুষদীয় ডিপার্টমেন্ট। এগুলো হলো ফিশারিজ বায়োলজি এ্যান্ড জেনেটিক্স ডিপার্টমেন্ট, একোয়াকালচার ডিপার্টমেন্ট, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ও ফিশারিজ টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট। ৪টি ডিপার্টমেন্টে মোট ৫৮ জন শিক্ষক রয়েছেন যার ৯৫ ভাগ শিক্ষকই বিশে^র বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা (পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল) সম্পন্ন করেছেন। এ ছাড়াও নিয়মিতভাবে অনুষদের শিক্ষকরা বিভিন্ন শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের জন্য বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে দূর-দূরান্তের বিশ^বিদ্যালয় ও সংস্থাসমূহ পরিদর্শন করে থাকেন। গত ৫০ বছরে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ গবেষণার ক্ষেত্রে অসাধারণ সফলতার সাক্ষ্য বহন করে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাইম, মাগুর, শিং, তারা বাইম, গুচি-বাইম, ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজননসহ ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, এক সঙ্গে সবজি ও মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি (একুয়া পনিক্স), স্বল্প খরচে বরফ বক্স, রিং টানেল পদ্ধতিতে শুঁটকি, খাঁচায় পাঙ্গাশ মাছের চাষ, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মাছ চাষ, মাছের বিষ্ঠা দিয়ে সবজি চাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফেক্স (এক ধরনের কীট) উৎপাদনের কলাকৌশল, ইলিশ মাছ আরহণের পর মানসম্মত উপায়ে বাজারজাত করণ, দেশী পাঙ্গাশের কৃত্রিম প্রজনন, মাছের পোনা চাষের জন্য রটিফারের চাষ, কুচিয়া মাছের কৃত্তিম চাষ পদ্ধতি আবিষ্কার, খাঁচায় দেশী কৈ মাছ চাষ পদ্ধতি এবং ইলিশ মাছের স্যুপ এবং নুডলস উদ্ভাবন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের জীন টেকনোলজি, মৎস্য জীব ও শারীরতত্ত্ব, মৎস্যচাষ, মৎস্য পুষ্টি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, পানি ও মাটির ভৌত রসায়ন, মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ গবেষণাগারগুলো ইতোমধ্যেই বিশ^মানে উন্নীত হয়েছে। অনুষদের ৫০ বছর উপলক্ষে এই পর্যন্ত অধ্যয়নরত সকল গ্রাজুয়েটদের একত্র করে দিনটিকে উদযাপন করতে সুবৃহৎ পরিসরে বাকৃবি সবুজ চত্বরে, ২০১৮ এর মার্চের তিন দিনব্যাপী (২, ৩ ও ৪ মার্চ-শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার) সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। তিন দিনের অনুষ্ঠানমালাকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, মৎস্য র‌্যালি, মৎস্য গবেষণাভিত্তিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মৎস্যমেলা, পোস্টার প্রদর্শনী, স্মৃতিচারণ, সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। বর্তমান অনুষদীয় ডিন অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দীন আহমেদ বলেন, বিশ^মানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর গ্রাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে দেশের জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন এবং দেশের মাছের উৎপাদনের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি সাধন, সেই সঙ্গে যুগোপযোগী ও মানসম্মত মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে মাঠ-উপযোগী তথ্য ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সমগ্র দেশের মৎস্যচাষী, হ্যাচারি মালিক, প্রক্রিয়াজাতকারী ও সম্প্রসারণ কর্মীদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। মো. শাহীন সরদার
×