ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আতঙ্কে স্থানীয়রা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি ও সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া চলাফেরায় স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে চলছে ওসব অস্ত্র। তারপরও প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ক্যাম্প অভ্যন্তরে বহু সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা অস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়ায় বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা অবনতির ঘটনা ঘটছে। তারা অস্ত্র উঁচিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি না হতে হুঙ্কার দিয়ে চলছে। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের সময় বিস্ফোরকসহ ওসব ভারী অস্ত্র নিয়ে আসতে পারে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। এছাড়াও কিছু পুরনো রোহিঙ্গা নেতা এবং এনজিও প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসন কাজে বিরোধিতা করতে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের উৎসাহ যুগাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিজ্ঞজনরা জানান, রোহিঙ্গারা শুধু স্থানীয়দের জন্য হুমকি নয়, সরকারের জন্যও তারা বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারা বলেন, অনুপ্রবেশকৃত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু এনজিও ফিরে না যেতে রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিচ্ছে। সেবার নামে বিদেশী ফান্ড এনে সিংহভাগ নিজেরাই আত্মসাৎ করতে ওই এনজিও কর্মীরা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ষড়যন্ত্র করছে বলে জানা গেছে। এদের নানামুখী কর্মকা-ে রোহিঙ্গারা দিন দিন হিংস্র হয়ে উঠছে। তাই সবার জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে মন্তব্য করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওদের সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সই ও প্রত্যাবাসনের জন্য তৎপর হয়ে উঠলে সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গোপনে অপতৎপরতা শুরু করে চিহ্নিত একাধিক এনজিও এবং কতিপয় পুরনো রোহিঙ্গা নেতা। অতীতে বাংলাদেশে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে এমন রোহিঙ্গা নাগরিকদের অনেকেই এমন অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে অনেকে সম্পদশালী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করতে ইতোমধ্যে ওমরা হজের নামে সৌদি আরব গিয়ে ঘুরে এসেছে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত ধনাঢ্যশালী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ এনেছে ওই রোহিঙ্গা নেতারা। সৌদিতে থাকা আরএসও জঙ্গীদের দেয়া অর্থের বিনিময়ে যেভাবে হোক প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার জন্য পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত জানুয়ারি মাসে ওমরা হজের নামে সৌদিতে গিয়ে শহরের তারাবনিয়াছড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত পুরনো রোহিঙ্গা নেতা মৌলবি আয়াছ চলতি মাসের শুরুতে দেশে ফিরেন। তিনি তার অপর সহযোগীদের নিয়ে প্রত্যহ ছদ্মবেশে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে একাধিকবার গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশী দাবিদার ওই রোহিঙ্গা নেতা। সূত্র জানায়, বিদ্রোহী রোহিঙ্গা সংগঠনের ওই নেতারা মিয়ানমারে হামলা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশান্তর করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করাতে পরিকল্পণা গ্রহণ করে ২০১৬ সালে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জঙ্গীদের পরামর্শ মতে অস্ত্র ও বোমা সংগ্রহ করে মিয়ানমারে আল-ইয়াকিনের (আরসা) কাছে পৌঁছাতে সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৩ মে টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিঃ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনসার ব্যারাকে হামলা চালিয়ে ১১টি অস্ত্র ও বিপুলসংখ্যক গুলি লুট করে নিয়ে যায় তারা। ওই সময় তাদের গুলিতে আনসার কমান্ডার মোঃ আলী হোসেন (৫৫) নিহত হন। পরে অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লুণ্ঠিত ওসব অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে একাধিক পুরনো রোহিঙ্গা নেতাকে। এরপর বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করা হয়েছিল দুই রোহিঙ্গাকে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তৎপরতায় আটক করা সম্ভব হয়েছিল বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহকারী রোহিঙ্গা নেতা মৌলবি শফিককে। তবে পুলিশের দুর্বল রিপোর্টের কারণে তারা সহজে বেরিয়ে পড়ে জেলহাজত থেকে। এদিকে জেলা প্রশাসন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনবিরোধী আভাস ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সন্ধ্যার পর এনজিওর কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিকেল ৫টার আগেই স্থানীয় বা সাধারণ লোকজনকে ক্যাম্প ত্যাগ করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ক্যাম্পগুলোয় প্রবেশ ও বহির্গমন পথ নির্ধারণ করে চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
×