ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেন দাবায় উঠে আসছে না নতুন গ্র্যান্ডমাস্টার?

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কেন দাবায় উঠে আসছে না নতুন গ্র্যান্ডমাস্টার?

রুমেল খান ॥ দাবা খেলার জন্ম ভারতবর্ষে বলে সর্বাধিক প্রচলিত মতবাদ। এছাড়া পারস্য (বর্তমান ইরান) দেশে তৃতীয় শতাব্দীতে প্রচলিত ‘শতরঞ্জ’ এবং চীনে দ্বিতীয় শতাব্দীতে প্রচলিত ‘শিয়াংছি’ নামক খেলাকে দাবার পূর্বসূরি হিসেবে গণ্য করার পক্ষেও মতামত আছে। কথিত আছেÑ রাবণের স্ত্রী চিত্রাঙ্গদা রাবণকে যুদ্ধে নিবৃত্ত করার জন্য তার সঙ্গে দাবা খেলতেন । প্রাচীন ভারতীয় খেলা হিসেবে দাবার সংস্কৃত শব্দ ‘শতরঞ্জ’ খেলাটি পরিবর্তিতরূপে পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপে পরিমার্জিত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। ক্রীড়াবিদরা দাবার কৌশল এবং বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে খেলাটির ধারাই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। ইতিহাস বলেÑ বুদ্ধির এ খেলাটির উৎপত্তিস্থল ভারতে। তবে উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার কিন্তু ভারতের নয়! ১৯৮৭ সালে উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব লাভ করেন বাংলাদেশের নিয়াজ মোরশেদ। তার পরে আরও চারজন : জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, এনামুল হোসেন রাজীব এবং আবদুল্লাহ আল রাকিব। ১৯৮৭ থেকে ২০১৮। গত ৩১ বছরে বদলায়নি দেশের দাবার চিত্র। ফলাফলÑ ২০০৮ সালে এনামুল হোসেন রাজীবের পর গত একদশকে আসেনি নতুন কোন গ্র্যান্ডমাস্টার। এমনকি আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন কোন গ্র্যান্ডমাস্টার পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এ জন্য কম টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ, অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা আর ভঙ্গুর পাইপলাইনই দায়ী বলে মনে করেন দাবা সংশ্লিষ্টরা। ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছেÑ আন্তর্জাতিক রেটিং টুর্নামেন্টের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন গ্র্যান্ডমাস্টার তৈরিতে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। ধৈর্য, মেধা, বুদ্ধি আর মননের সংমিশ্রণের খেলা দাবা। প্রতিবছর বিশ্ব দাবা ফেডারেশন ফিদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বেশ কটি রেটিংভিত্তিক টুর্নামেন্ট। এছাড়া কোন দেশ চাইলেও আয়োজন করতে পারে আন্তর্জাতিক রেটিং টুর্নামেন্ট। অথচ দারুণ সম্ভাবনাময় এই খেলাটির সম্ভাবনাটাকেই কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। যার প্রভাব পড়ছে নতুন দাবাড়ু তৈরিতে। ১৯৮৫ সালে উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে নিয়াজ মোরশেদের আবির্ভাবের পর এ পর্যন্ত পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টার পেয়েছে বাংলাদেশ। যার সর্বশেষ ২০০৮ সালে। অন্যদিকে ২০০৬ সালে ভারতে মাত্র ১২ গ্র্যান্ডমাস্টার থাকলেও গত এক যুগে সে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অবিশ্বাস্য, ৪৮-এ! এছাড়া বিশ্বের সেরা ১০০ দাবাড়ুর মধ্যে ভারতেরই ৫ জন। বাংলাদেশে বর্তমানে ফিদেমাস্টার সংখ্যা ২৪। এছাড়া আইএম-এর নর্ম রয়েছে শাকিল ও সাগরের। আর সম্প্রতি নর্ম পেয়েছেন শেখ নাসিরও। দাবার রেটিং পদ্ধতি বলে শিক্ষানবীশ থেকে কোন একজন দাবাড়ুর গ্র্যান্ডমাস্টার হতে হলে প্রতিবছর কমপক্ষে ৬টি রেটিংভিত্তিক টুর্নামেন্টে আশানুরূপ ফলের পরেও লেগে যায় অর্ধযুগেরও বেশি সময়। তাই শুধু নিয়মিত টুর্নামেন্টের অভাবেই সাদা-কালো বোর্ডে আর স্বপ্ন দেখা হয় না এদেশের দাবাড়ুদের। আগামী জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো ঢাকায় বসছে মেগাইভেন্ট ‘এশিয়ান নেশন্স কাপ’। সেই উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে দাবায় ফিরবে সোনালী সুদিন, এমন স্বপ্নই দেখছেন দাবাড়ুরা।
×