ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের সিরিজ বাঁচানোর লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশের সিরিজ বাঁচানোর লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ যে দলটি পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে দেশের মাটিতে জিতেছে, সেই দলটিই এখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাবুডুবু খাচ্ছে। যে দলটি দেশের মাটিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল সেই দলটিই এখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নাকানিচুবানি খাচ্ছে। ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে ফাইনালে হারের পর টেস্ট সিরিজেও হেরেছে। এখন দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজেও হারের কবলে আছে। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০তে হারলেই সিরিজ হার হয়ে যাবে। ম্যাচটি সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় শুরু হবে। বাংলাদেশের সামনে তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ বাঁচানোর লড়াই আজ। প্রথম টি২০তে ৬ উইকেটে হারের পর সিরিজে এরই মধ্যে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। আজ হারলেই টি২০ সিরিজও হারা হবে। আর জিতলে ১-১ সমতা আসবে। কথায় আছে, ‘শেষ ভাল যার, সব ভাল তার’। এখন সেই ভালর দেখা মিললেই হয়। ২০১৪ সালের শুরুতে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে টেস্ট, টি২০, ওয়ানডে সিরিজ হারের পর থেকেই বছরটি খারাপ গেছে বাংলাদেশের। বিশেষ করে টি২০তে জেতা ম্যাচ দুটি হারে বাংলাদেশ। তাতে দলের ক্রিকেটারদের মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। এরপর বছরটিতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা হারতে থাকে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ও নেপালের সঙ্গে শুধু টি২০তে জিততে পারে। এবারও বছরের প্রথম সিরিজগুলোতে হারছে বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে। টেস্ট সিরিজে হেরেছে। এখন টি২০তেও হারের কবলে পড়েছে। তাহলে কী সেই বছরের স্মৃতিই আবার ফিরে আসছে? এই আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে। প্রথম টি২০তে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তাহলে কী আবারও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন হার নিয়ে ক্রিকেটারদের মানসিকতায় প্রভাব পড়বে? সেই বছর অক্টোবরের পর থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সেই যে ঘুরে দাঁড়ায়। এরপর থেকে শুধু সাফল্যই মিলেছে। তবে জয়গুলো ইতিহাস রচিত হওয়ায় ব্যর্থতাগুলো ঢেকে গেছে। ২০১৫ সালে তো বাংলাদেশ উড়েছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে। গত বছর অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছে। এমনকি শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কাকে টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০তে হারিয়েছে। সেই দলটিই এবার বছরের শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই হোঁচট খাচ্ছে। যে শ্রীলঙ্কা গত বছর ওয়ানডে ও টি২০তে বাজে সময় কাটিয়েছে সেই শ্রীলঙ্কাই কিনা বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে এসে সাফল্যে ভাসছে। কেন এমনটি হচ্ছে? বাংলাদেশ কেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পেরে উঠছে না। সেই প্রশ্নও উঠছে। একজনের নাম সেখানে উঠে আসছে। তিনি চন্দিকা হাতুরাসিংহে। যিনি ২০১৮ সালের আগে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। তাতে বাংলাদেশের যে সুসময়, তখন তার তত্ত্বাবধানেই ছিল দল। আর এখন শ্রীলঙ্কার কোচ হাতুরাসিংহে। ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়েই শ্রীলঙ্কার হয়ে তার প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট শুরু হয়েছে। এক হাতুরাসিংহে দলের সঙ্গে না থাকাতেই এমন ফল মিলতে পারে। কারণ হাতুরাসিংহে নিজ হাতে দল পরিচালনা করতেন। কঠোরভাবে সব সিদ্ধান্তগুলো নিতেন। তাতে সাফল্যও মিলেছে। ঠিক এই কাজটিই এখন শ্রীলঙ্কার হয়ে করছেন তিনি। তাতে শ্রীলঙ্কা সাফল্য পেতে শুরু করে দিয়েছে। যে দলটি ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে জিম্বাবুইয়ে ও বাংলাদেশের কাছে হেরেছে। তারাই ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতে নিয়েছে। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজও জিতেছে। এখন প্রথম টি২০তে জিতে এগিয়ে রয়েছে। আজ দ্বিতীয় টি২০তে জিতলে স্বল্পওভারের সিরিজও শ্রীলঙ্কার হয়ে যাবে। দুই দলের মধ্যে কি এমন পার্থক্য হচ্ছে। যাতে সাফল্য শ্রীলঙ্কার হাতে ধরা দিচ্ছে। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই সেই জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, ‘কখনও ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হচ্ছে, কখনও বোলাররা। আমরা এক সঙ্গে জ্বলে উঠতে পারছি না। এটাই মূল কারণ, এর বাইরে কোন কারণ নেই।’ আসলেই তাই। যেদিন ব্যাটসম্যানরা ভাল করছেন। সেদিন বোলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না। আর যেদিন বোলাররা নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন। সেদিন ব্যাটসম্যান হাল ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম তিনটি ম্যাচে ব্যাটসম্যান-বোলাররা নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। পরের ম্যাচেও তাই। তৃতীয় ম্যাচেও তাই হয়েছে। দলগত নৈপুণ্য দেখার মিলেছে। কিন্তু এরপর থেকেই সব এলোমেলো হয়ে যেতে শুরু করে দেয়। টানা দুটি ম্যাচ হারে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা এতটাই খারাপ ব্যাটিং (৮২ রানে অলআউট) করেন, বোলারদের কিছুই করার থাকে না। ফাইনালেও একই অবস্থা হয়। এরপর টেস্ট সিরিজে প্রথম টেস্টে বোলাররা বিশেষ কিছুই করতে পারেননি। ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ বাঁচিয়েছেন। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে বোলাররা নৈপুণ্য দেখালেও ব্যাটসম্যানরা নিষ্প্রভ থাকেন। তাতে টেস্টে হার হয়। টি২০ সিরিজের প্রথম টি২০তে এবার ব্যাটসম্যানরা দেখান ঝলক। কিন্তু বোলারদের করুণ দশা দেখার মিলে। তাতে করে প্রথম টি২০তে হার হয়। এবার আজ দ্বিতীয় টি২০তে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নামবে বাংলাদেশ। সিরিজে পিছিয়ে যাওয়ায় আজ সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়েই নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
×