ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বাড়তি সময় উপভোগের আনন্দ আনিসুজ্জামানের

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাড়তি সময় উপভোগের আনন্দ আনিসুজ্জামানের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়ের এক অগ্রসর ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। জ্ঞানের চর্চায় আলোকিত করেছেন শিক্ষার ক্ষেত্র। সাংস্কৃতিক পরিম-লের বিকাশে রেখেছেন বিশেষ ভূমিকা। সেই সঙ্গে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মুক্তচিন্তা, সংস্কৃতির বহুত্ববাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ইতোমধ্যে পেরিয়েছেন জীবনের আশিটি বছর। দীর্ঘজীবনের পথপরিক্রমায় আজ রবিবার তাঁর ৮১তম জন্মবার্ষিকী ও ৮২তম জন্মদিন। একদিন আগেই শনিবার উদ্যাপিত হলো তাঁর আগাম জন্মদিন। আর সে আয়োজনে অশীতিপর এই কীর্তিমান চমৎকার করে প্রকাশ করলেন জন্মদিনের অনুভূতি। মেধা ও মননে ঝলমলে মানুষটি বললেন, শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় আমার অনানুষ্ঠানিক জন্মদিনটিও উদ্্যাপিত হলো আনুষ্ঠানিকভাবে। মনে হচ্ছে, অনেকদিন বাঁচলাম। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর চেয়েও বেশি দিনের জীবন কাটালাম। এখন জীবনের বাড়তি সময় উপভোগ করছি। শনিবার দুপুরে ঢাকা ক্লাবের সিনহা লাউঞ্জে এই শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক ও প্রগতির পথিকের জন্মদিন উদ্যাপনের আয়োজন করা হয়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে জন্মদিনের আগাম ভালবাসা জানাতে সে আয়োজনে হাজির হয়েছিলেন মন্ত্রী, কবি, চিত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, প্রকাশক, সরকারী কর্মকর্তাসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। ফুলেল শুভেচ্ছাসহ নানা উপহারসামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে তারা জানিয়েছেন ভালবাসা। অনুভূতি ব্যক্ত করে তারা বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি হচ্ছেন মুক্তমনা এক মানুষ। অগ্রসর এক ব্যক্তিত্ব। সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তিনি হচ্ছেন বাতিঘর। ব্যক্তিগতভাবে এ জন্মদিন উদ্্যাপনের আয়োজন করেন সাবেক সরকারী কর্মকর্তা খন্দকার রাশিদুল হক। আনিসুজ্জামানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, আজ এ আয়োজনে সমবেত হওয়া আমরা অনেকেই তাঁর সরাসরি ছাত্র। ছাত্র হিসেবে জন্মদিনে শিক্ষকের পা ছুঁয়ে সালাম করছিÑএটা অনেক বড় প্রাপ্তি ও গৌরবের। আর স্যারের ছাত্রী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন আমরা ছাত্ররাও ভালই থাকব। তাই জন্মদিনের এ আয়োজনে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের শতায়ু কামনা করছি। তাঁর আদর্শ নিয়েই অতিক্রম করতে চাই আগামী দিনগুলো। আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকা এই মানুষটির কাছ থেকে চাই সেই পথচলার দিকনির্দেশনা। জন্মদিনের আয়োজনে শুভাকাক্সক্ষীরা আনিসুজ্জামানকে ফুলেল শুভেচ্ছার পাশাপাশি সঙ্গীত সংকলন, স্মারকসহ নানা উপহার প্রদান করেন। শুভেচ্ছা জানাতে আসা এসব বিশিষ্ট ব্যক্তির তালিকায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, কবি রবিউল হুসাইন ও আসাদ মান্নান, কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম ও বুলবুল মহলানবীশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, বারিস্টার আমির-উল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার সম্মাননাপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দুই ট্রাস্টি মফিদুল হক ও ডা. সরওয়ার আলী, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারপার্সন জি এম কাদের, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নির্বাচন কমিশনার মাহমুদ তালুকদার, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান প্রমুখ। জীবনানন্দের কবিতাসন্ধ্যা ‘প্রেম ও নির্জনতার মতো’ ॥ আজ রবিবার রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ১২০তম জন্মদিন। আর জন্মদিনের আগের দিন শনিবার বসন্ত সন্ধ্যায় স্মরণ করা হলো কবিকে। তাঁরই রচিত কবিতার শব্দমালায় জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান পরিবেশিত হলো ‘প্রেম ও নির্জনতার মতো’ শীর্ষক আবৃত্তিসন্ধ্যা। শাওন হাসনাতের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় জীবনানন্দের কবিতায় সাজানো প্রযোজনাটি পরিবেশন করে বাচিক শিল্পচর্চা কেন্দ্র কল্পরূপ। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক শাওন হাসনাত বলেন, জীবনানন্দ দাশ রাশি রাশি পৃষ্ঠা খরচ করে শুধু প্রেম ও প্রকৃতির বন্দনা করে গেছেন তা নয়। বরং সমকালীন রাজনীতি ও সমাজনীতি বিস্তৃতভাবে উঠে এসেছে তার কবিতায়। পৃথিবীর একদিকে তিনি দেখেছেন স্পন্দন, উদ্যম আর গতি। অন্যপিঠে শুনেছেন শত শত শূকরের চিৎকার আর ভয়াবহ আরতি। এ কারণেই প্রযোজনা সাজাতে বেছে নিয়েছে এই কবির কবিতাকে। জীবনানন্দের ১৯টি কবিতায় সাজানো হয় প্রযোজনাটি। কবিতাগুলো হলোÑ ‘কবি, দুজন, ফসলের দিন, সহজ, নগ্ন নির্জন হাত, অন্ধকার, অদ্ভুত আঁধার এক, এইসব দিনরাত্রি, অনেক নদীর জল, মনে পড়ে সেই কোলকাতা, সুরঞ্জনা, বেড়াল, অনুপম ত্রিবেদী, হে হৃদয়, হাওয়ার রাত, আজকের এক মুহূর্ত, আট বছর আগের একদিন, আমাকে তুমি ও এই পৃথিবীতে আমি।
×