ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতের মাধ্যমেই জেল থেকে বের হতে হবে খালেদাকে ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আদালতের মাধ্যমেই জেল থেকে বের হতে হবে খালেদাকে ॥ নাসিম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উত্তেজিত না হয়ে মাথা ঠা-া রাখার জন্য বিএনপির নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, কোন নেতার জেলে থাকার বিষয়টি সুখকর নয়। এটা কেউ কামনা করে না। আদালতের সিদ্ধান্ত ও দলীয় রাজনীতি একই বিষয় না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আদালতের মাধ্যমে জেলে গেছেন। আদালতের মাধ্যমেই তাকে জেল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের করার কিছুই নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ কামনা করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী মাঠে সকলের সঙ্গে খেলেই জয়ী হতে চায় তারা। শনিবার বাংলাদেশ ইউরোলজি সোসাইটি আয়োজিত আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সোসাইটির সভাপতি ডাঃ এস এ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এহতেশামুল হক চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশে উন্নয়ন বয়ে আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মধ্যম আয়ের পথে বাংলাদেশ, হয়ে উঠেছে উন্নয়নের মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা ওয়াদা করেন তা পূরণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সেক্টরে উন্নয়ন আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে নামমাত্র খরচে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিদিন দেশে দেড় কোটি ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করছে সরকার। বিনা টাকায় এমন চিকিৎসাসেবা বিশ্বের কোথাও নেই। চার হাজার চিকিৎসক ও দশ হাজার নার্স ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেই আরও দশ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম দফায় নিয়োগ দেয়া হবে প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক। তিন হাজারের বেশি নার্স নিযোগ কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ৪০ হাজার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীও নিয়োগ দেয়া হবে। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। বিদ্যমান অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান সারাবিশ্বের অনুকরণীয় হতে পারে। পুরোদমে এগিয়ে চলছে স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম। মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটার। গ্রাম এলাকার প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সব পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে। অবশেষে পোলিও মুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। পোলিওর পর নির্মূল হয়েছে ধনুষ্টংকার রোগ। চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সীমিত সম্পদের বিষয়টি মনে রেখে দায়িত্ববোধ দিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের মতো অন্য দেশের চিকিৎসকরা স্বল্প সময়ে এত রোগী দেখেন না। এদেশের চিকিৎসকরা ধৈর্যশীল ও দক্ষ। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েই দেশের মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করতে হবে। চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, একজন চিকিৎসক কখনো রোগীর অমঙ্গল কামনা করে না। রোগীকে সুস্থ করে তুলতে তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। মাঝে মধ্যে ভুল হয়ে থাকতে পারে। তাই বিচার বিবেচনা না করে চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা চালানো ঠিক নয়। পাশাপাশি রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদেরও বেশি করে দায়িত্বশীল থাকা দরকার। কিছুসংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর শিক্ষার মানের সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশের চিকিৎসা শিক্ষার অনেক উন্নতি হয়েছে। রোগীদের সেবাদান এবং দক্ষ চিকিৎসক গড়ে তোলার জন্য অনেক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুসংখ্যক কলেজের মান ও অবকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। এজন্য একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রশ্নফাঁসরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ গ্রহণের জন্য অন্য সেক্টরগুলোর সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তাছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন সেক্টরের পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাঁসরোধে আমাদের সাহায্য নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন মোহাম্মদ নাসিম। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রয়াত উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডাঃ এ এস এম জাকারিয়া স্বপনের রুহের মাগফেরাত কামনায় শনিবার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরান খতম ও বাদ জোহর দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খানের ঘোষিত ৩ দিনব্যাপী শোক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ওই দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অংশ নেন। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মরহুম ডাঃ এ এস এম জাকারিয়া স্বপনের ইস্কাটন গার্ডেন রোডের বাসায় যান। সেখানে তিনি কিছুক্ষণ অবস্থান করে মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
×