ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ সফিউর রহমান। তিনি ছিলেন ঢাকা হাইকোর্টের একজন কর্মচারী। পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোন্নগর গ্রামে ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী মাহবুবুর রহমান। শহীদ সফিউর রহমান কলিকাতা গবর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আইকম পাস করার পর দরিদ্রের কারণে চাকরিতে প্রবেশ করেন। কিছুদিন চাকরি করার পর পাকিস্তান, ভারত ভাগ হয়ে যায়। এ সময় তিনি সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আকিলা বেগমকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার হাইকোর্টে চাকরি নেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ’৫২ সালে শহীদ সফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ওইদিন সকাল ১০টায় তিনি সাইকেল যোগে নবাবপুর রোড হয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলি তার পৃষ্ঠভেদ করে চলে যায়। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সফিউর মারা যাওয়ার পর পুলিশ তার লাশ আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করেনি। আজিমপুর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। সফিউর রহমান শহীদ হওয়ার তিন মাস পর তার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তার নাম রাখা হয় সফিকুর রহমান। আব্দুস সালাম ॥ ভাষা আন্দোলনে অমর শহীদদের তালিকায় রয়েছেন আব্দুস সালাম। ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনার সময় তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছে গুলিবিদ্ধ হন। তখন তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক মাস পর ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার সময় মারা যান। শহীদ আব্দুস সালাম ফেনী জেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোঃ ফাজিল মিয়ার পুত্র। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে তিনি ঢাকার নীলক্ষেত ব্যারাকে বাস করতেন। তার কবরের কোন সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। আব্দুল জব্বার ॥ ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ আব্দুল জব্বার পেশাগত জীবনে একজন দর্জি ছিলেন। গফরগাঁওয়ের পাঁচাইরা গ্রামের আব্দুল কাদেরের সন্তান তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিন রাত ৮টার সময় হাসপাতালেই তিনি মারা যান। এই সময় তার বয়স হয়েছিল ৩০ বছর। তার কবরেরও কোন সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। অহিউল্লাহ ॥ ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে অমর শহীদদের তালিকায় একজন আট বছরের নাবাক ছেলে রয়েছেন যার নাম অহিউল্লাহ। তিনি ছিলেন রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমানের ছেলে। শহীদ হওয়ার সময় অহিউল্লাহ তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। তিনি শহীদ হন ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে। ওইদিন নবাবপুর রোডের অনেক সৈন্য মোতায়েন ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনার পর সরকার সৈনবাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। ঘটনার সময় শহীদ অহিউল্লাহ মনে আনন্দে নবাবপুর রোডের পাশে খোশমহল রেন্টুরেন্টের সামন্যে দাঁড়িয়ে কাগজ চিবুচ্ছিল। আসলে তিনি আগে গুলির শব্দ শুনে কৌতূহলবশত দেখতে এসেছিলেন। এ সময় একটি গুলি এসে তার মাথার খুলি উড়িয়ে নিয়ে যায়। অহিউল্লাহ মারা যাওয়ার পর পুলিশ তার লাশ গুম করে ফেলে। ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিকের শহীদ দিবস সংখ্যায় ১৯৫৪ অনুযায়ী শহীদ হওয়ার পর অহিউল্লাহর পকেটে একটুরো কাগজ পাওয়া গিয়েছিল। এতে খুব সুন্দর শৈল্পিকগুণসহ জীবজন্তুর ছবি আঁকা ছিল। ভাষা শহীদ এই ছোট্ট শিশুটি এই কাজে পারদর্শী ছিলেন। তার সকল সম্ভাবনা এক মুহূর্তে বিলীন হয়ে যায়। ২৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদে তার শাহাদতের খবর ছাপানো হয়। তার লাশটি গুম করে ফেলেছিল বলে কোথাও তার মাটি দেয়া হয়েছিল তা আজ জানা যায়নি।
×