ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দেয় না ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দেয় না ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিএনপির কোন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দেয় না। সরকার কোন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ-মিটিং সেটা রাজনৈতিক হোক বা সামাজিক; কোনটাতেই বাধা দিচ্ছে না। পারমিশন (অনুমতি) দেয়ার সময় আমাদের আবেদন থাকছে যাতে কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি সভা-সমাবেশের ওপর ডিএমপি কমিশনার যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। সেটা প্রত্যাহার হলে কোথায় সমাবেশ করলে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘিœত হবে না তা পুলিশ কমিশনার স্থির করবেন। স্থান নির্ধারণ করবেন ডিএমপি কমিশনার। শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবিরের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ জীবনস্মৃতি-২ এর প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পৌর মেয়র নায়ার কবিরের সভাপতিত্ব বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি মোঃ মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। বদলে যাবে সব সমীকরণ ॥ অনেকটাই বদলে যাচ্ছে রাজনীতির সমীকরণ। নতুন মেরুকরণ চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। স্থানীয় মাওলানাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু টানাপোড়েন শুরু হয় অন্তত একএক যুগ ধরে। বর্তমানে সে সম্পর্ক উন্নীত হচ্ছে। ’৯৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এনজিও বিরোধী আন্দোলন, ২০০১ সালে হাইকোর্টের ফতোয়াবিরোধী রায় নিয়ে ৬ মাদ্রাসা ছাত্র হত্যা ঘটনা এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি জেলার সবচেয়ে বড় জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় হামলা, ভাংচুর ও মাদ্রাসা ছাত্র হত্যাকা- এবং পরবর্তীতে সারা শহরে তা-ব, উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে অগ্নি সংযোগ ঘটনার পর থেকেই মূলত স্থানীয় মাওলানাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন নেতাদের সম্পর্ক কিছুটা ঘটতি দেখা দেয়। ওই সময় সরকারের কোন দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সফর করলে ওই জামেয়া মাদ্রাসায় যাননি। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেন ঠিকই। এ নিয়ে স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। নানা সমালোচনা হয়। সরকারের নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে সে সময়কার ঘটনার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হয়। স্থানীয় মাওলানাদের বিশাল অংশই কোন রাজনীতির সঙ্গে সম্পক্ত না থাকায় ক্রমশই উপরের নির্দেশে তাদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে থাকে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে মাদ্রাসার পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠোনে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো কোন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদ্রাসার অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১০৫তম বার্ষিক সভা বৃহস্পতিবার থেকে শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে শুরু হয়। ১০৫ বছরের ইতিহাসে এবারই কোন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদ্রাসায় এলেন। শেষদিন শনিবার ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ ছাড়াও তিনি জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ফখরে ফখরে বাঙ্গাল ছাত্রাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা থাকলেও আপত্তির কারণে উদ্বোাধন করতে পারেননি। তবে মাদ্রাসা নেতৃবৃন্দকে তিনি আশ্বস্ত করেন প্রয়োজনে হেলিকপ্টারে এসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। বিকেল ৫টায় তিনি মাদ্রাসায় যান। এসময় জেলার শীর্ষ মাওলানারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাদ্রাসার বার্ষিক সভায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে স্থানীয় মাওলানাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ের ঘটনা নিয়ে যে টানাপোড়েন ছিল তা কমে আসবে। এর মাধ্যমে বদলে যাবে স্থানীয় রাজনীতির সব সমীকরণ; যা সরকার বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচকই হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে বলেন, কোন কোন বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য ছিল। দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। টানাপোড়েনও হয়নি। তবে তিনি বলেন, মন্ত্রী সফরের মাধ্যমে যেটুকু মতপার্থক্য ছিল তাও ঘুচে যাবে। অন্যদিকে জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বিশ্বাস করিÑ একজন মুসলমান হিসেবে একজন মুসলমানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দায়িত্ব পালন করছি। তাই সবার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সরকার যাতে সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে সে প্রচেষ্টাই আমাদের। এতে অন্য কোন বিষয় নেই। জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মোবারক উল্লাহ বলেন, অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটনা যে ঘটেছে, তা তো ঘটেই গেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের কোন দূরত্ব নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কওমি মাদ্রাসার পক্ষেই কথা বলেন। তিনি তো আমাদের লোক। তাই উনাকে আমরা দাওয়াত দিয়েছি। উনি আমাদের দাওয়াত রেখেছেন।
×