ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমি এ বছরের ডিসেম্বরেই অবসরে যাচ্ছি’

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

‘আমি এ বছরের ডিসেম্বরেই অবসরে যাচ্ছি’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এ বছরের ডিসেম্বরেই অবসরে যাবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষা খাত এবং একের পর এক কেলেঙ্কারিতে ব্যাংক খাত ‘ধ্বংসের’ অভিযোগ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ঠা-া ধরনের মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ওই রিপোর্টটি পড়েছি। হ্যাঁ আমি জানাচ্ছি এ বছরের ডিসেম্বরেই আমি অবসরে যাব। সে হিসেবে আর মাত্র ১১ মাসের (প্রকৃত হিসেবে সাড়ে ১০ মাস) মতো আছি । এ সময় তার মতো বদরুদ্দোজা চৌধুরীকেও (বি. চৌধুরী) অবসরে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশে অনেকগুলো ব্যাংক রয়েছে। তবে দেশে ব্যাংকিং খাত ততটা প্রসারিত নয়। এ অবস্থায় ব্যাংকের শাখা বাড়ানো দরকার। যত বেশি মানুষ ব্যাংকিং খাতে আসবে অর্থনৈতিক কর্মকা- ততটা প্রসারিত হবে। আর এতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হবে। তবে ব্যাংকগুলোর ঋণ ঝুঁকিমুক্ত হলেই সেটা সহজে সম্ভব বলে মনে করেন মুহিত। অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, ব্যাংকের এমডি শামসুল ইসলামসহ ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারী ব্যাংকগুলোতে তুলনামূলক খেলাপী ঋণ বেশি। এটা কমানোর জন্য গ্রাহককে চিনতে হবে। তার ব্যবসা সম্পর্কে আগে জানতে হবে। যারা ব্যাংকের কর্মকর্তা আছেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন কিনা। ঋণ খেলাপী হওয়া প্রতিরোধ করতে ব্যাংকারদের দুইটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের দুটি বিষয় সম্পর্কে বলব। এক প্রকল্প মূল্যায়ন করা। কোন ঋণ প্রকল্প এলে তা ভালভাবে পর্যালোচনা করে গ্রহণ করতে হবে। এজন্য বিশেষজ্ঞ লোক তৈরি করতে হবে। দুই কেওয়াইসি- তোমার কাস্টমারকে জানো। কাকে সেবা দিচ্ছেন, কে সেবা নিচ্ছে তার সম্পর্কে ভালভাবে জানা দরকার। এতে ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহকের সম্পৃক্ততা বাড়বে। ব্যাংকের ব্যবসা ভাল হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলো চাইলেই খুব সহজে এই বিষয় দুইটি পরিপালন করতে পারে। এতে তাদের ঋণ সুরক্ষিত থাকবে। মুহিত আরও বলেন, তৎকালীন হাবিব ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক মিলে এই অগ্রণী ব্যাংক গঠন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে এসব কাজে সেই সময়ে যুক্ত ছিলাম। দীর্ঘ সময় ধরে আছি। বেশি সময় থাকা উচিত নয়। এতে পচন ধরে। ব্যাংকিং সেবা প্রদানে দুইটি বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে মুহিত বলেন, আপনারা দুটি কাজ করবেন, আর আমার মনে হয় এটাই যথেষ্ট। প্রথম, একটি প্রকল্প যখন আপনার কাছে আসবে, সেটা যথাযথ যাচাই করবেন। বিশ্লেষণটা যতদূর সম্ভব ভাল করা দরকার। সেজন্য বিশেষজ্ঞ তৈরি করুন। দ্বিতীয়ত,ব্যাংকারের জন্য প্রধান মূলমন্ত্র। সেটা হচ্ছে- কেওয়াইসি (গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি)। আপনি কাকে সেবা দিচ্ছেন, কে আপনার সেবা নিচ্ছে। সে লোক বা প্রতিষ্ঠানটিকে আপনি চিনতে চেষ্টা করুন। সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আত্মার সর্ম্পক সৃষ্টি করেন। সেখান থেকে আপনি যেমন সমৃদ্ধ হবেন, তেমনি ওই প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ হবে। এই সমৃদ্ধি জাতীয় সমৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। এ সময় এ দুইটি পরামর্শ মেনে চলতে ব্যাংকারদের আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। বাজারে অনেক নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমাদেরকে অনেকের কাছে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে। তবে একথা সত্য ব্যাংকিং খাতে কিছুটা ভাল পরিবেশ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর জানান, এডিআর কমানোর কারণে এখন সামগ্রিক ব্যাংক খাতে ১১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ঋণ আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং ফার্মার্স ব্যাংকের আছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে কোন তারল্য সঙ্কট নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বলেছেন, ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) নিয়ে ব্যাংক খাতে অহেতুক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) বিষয়ে আগে বলা হয়েছিল সিআরআর (নগদ জমা সংরক্ষণ) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ) বাদ দিয়ে যে ৮০.৫ শতাংশ থাকে তার থেকে ব্যাংক নিজস্ব সিদ্ধান্তে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। এখন আমরা বলছি ব্যাংক ৮০.৫ শতাংশ থেকে আর ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে। অর্থাৎ ৮৩.৫ শতাংশ। আমাদের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৮টি ব্যাংক এর নিচেই আছে। এডিআর কমানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেক বেসরকারী ব্যাংক এ্যাগ্রেসিভ ল্যান্ডিং (ঋণ প্রদান) করছিল এবং ন্যূনতম পরিমাণ ক্রেডিট ছিল না। এ জন্য এ্যাডজাস্টমেন্ট করেছি। যাতে করে একটি ক্রেডিট ডিসিপ্লিনারিতে আসা যায়। গবর্নর বলেন, সম্প্রতি আমরা খেয়াল করছি ডিপোজিট রেট (আমানতের সুদ হার) বাড়ছে। যাদের ডিপোজিট আছে, এটি তাদের জন্য খুবই সুখবর। কারণ ডিপোজিট রেট দীর্ঘদিন ছিল নেগেটিভ। তাই ডিপোজিটররা এখন ভাল রেট পাচ্ছেন, এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। তবে এর ফলে ল্যান্ডিং রেটটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেটা ব্যবসা বা দেশের জন্য ভাল নয়। বেসরকারী ব্যাংকগুলো তথ্য লুকাচ্ছে উল্লেখ করে গবর্নর বলেন, এডিআর ৮৩.৫ শতাংশ হওয়ায় তারা বলছে ডিপোজিট অনেক বেশি ফল (হ্রাস) করছে। ‘ডিপোজিট অনেক বেশি বাড়াতে হবে রেশিও ঠিক করার জন্য, সেটাও ঠিক নয়। কারণ ১১ হাজার কোটি টাকার মতো এডি রেশিওর উপরে আছে। তাদের মধ্যে কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং ফার্মার্স ব্যাংক এ চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বলেন গবর্নর। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে ব্যাংকাররা বলছেন আমাদের অনেক বেশি ডিপোজিট আনতে হবে, ডিপোজিট রেশিও ঠিক করার জন্য- এটা মোটেই ঠিক নয়। চার ব্যাংক বাদ দিলে সমগ্র ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত দাঁড়াচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকার মতো।
×