অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘কত টাকা পূঁজি আছে বা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে তা মুখ্য নয়;বরং একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় মূলধন তার নতুন কিছু করতে চাওয়ার ইচ্ছা।’ এভাবেই একজন উদ্যোক্তার পথচলার চিত্রায়ণ করেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তাহমিনা শৈলী।
মিজ. শৈলী বলেন, আর্থ-সামাজিক সচ্ছলতা উদ্যোক্তা হওয়ার পথে একজনের যাত্রাকে সহজ করে দেয়। তবে কোন ধরনের সমর্থন ছাড়াও যে কেউ উদ্যোক্তা হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘একজনের অর্থনৈতিক-সামাজিক সচ্ছলতা না-ও থাকতে পারে, কিন্তু যখন তার একটা বড় স্বপ্ন আছে, তিনিও সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সমান সম্ভাবনা রাখেন।’
মিজ. শৈলী বলেন, বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় একজনকে। প্রথমেই যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেটি হলো প্রয়োজনীয় ও সঠিক ধারণা ও তথ্য পাওয়া। আমি যখন শুরু করি তখন প্রধান সমস্যা ছিল প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য পাওয়া।
মিজ. শৈলী জানান, প্রথমদিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি, কর প্রদান, ব্যাংক লোন বা সরকারী সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা এমন নানা বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হন তিনি। আর এসব বিষয়ে নির্ভুল তথ্য পাওয়ার কোন প্রতিষ্ঠান তখন যেমন ছিল না, এখনও নেই। তবে তাঁর মতে, বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্যোক্তা রয়েছেন, যার ফলে নতুনরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সহায়তা পেয়ে থাকেন।
এছাড়া ইন্টারনেট ও যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের কারণেও অনেক সহজ হয়েছে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম। নতুন কোন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জটিল পদ্ধতিকে অন্যতম প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন মিজ. শৈলী। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই, শুরুতে একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পুঁজি কম থাকে, তাই প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ীর চেয়ে ব্যাংক ঋণ পাওয়া তার পক্ষে অনেক বেশি কঠিন হয়।’ মিজ. শৈলী মনে করেন, ঋণ বা অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনেক সময় উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশে পণ্য রফতানি করার ক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতি প্রণয়ন ও আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অর্থ আদান প্রদানের সহজ ব্যবস্থা তৈরি করার বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। তাই উদ্যোক্তাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য এরকম দীর্ঘ ও জটিল পদ্ধতির ছোট ছোট, সহজ সমাধান তৈরি করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
নারীদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং? এ প্রশ্নের জবাবে তাহমিনা শৈলী বলছেন, “নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি ভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন। একজন পুরুষের সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হলেও বাংলাদেশে শুধু নারী বলে ভিন্ন আচরণের সম্মুখীন হতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে।”
মিজ. শৈলী বলেন, নানারকম সুবিধা বা সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই বৈষম্যের শিকার হন নারী উদ্যোক্তারা। তবে বর্তমানে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নারীরা আগের মত সমস্যার মুখোমুখি হননা বলে মনে করেন তিনি।
তাঁর মতে, প্রতিষ্ঠিত বা অভিজ্ঞ নারী উদ্যোক্তারা নতুন নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করেন বলেই আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস পাচ্ছেন। মিজ. শৈলী বলেন, ‘আমাদের দেশে অভিভাবকরা সন্তানদের এমন বিষয়ে পড়ালেখা করাতে চান যেন তার ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে যা আরও বেশি সত্য। তাই নারীরা উদ্যোক্তা হতে চাইলে অর্থনৈতিক-সামাজিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি অনেক সময় পরিবারের দিক থেকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাদের।’
এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন মিজ. শৈলী। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত বা পরীক্ষিত পথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করলেই উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। একজন উদ্যোক্তা তার রাস্তা নিজে তৈরি করেন। এখানে ঝুঁকির সম্ভাবনা শতভাগ। তাই যারা এ পথে হাঁটার সাহস করেন, তাদেরকে সবার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেয়া উচিৎ।’ -সূত্র: বিবিসি
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: