ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায় ভাল ফল পেতে শুরু করেছে মুন্নু সিরামিক

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ব্যবসায় ভাল ফল পেতে শুরু করেছে মুন্নু সিরামিক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায় ভাল ফল পেতে শুরু করেছে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চলতি বছরের প্রথমার্ধে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্য বিক্রিতে ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে কোম্পানিটি। পাশাপাশি পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও কারখানার বর্জ্য বিক্রির মাধ্যমে বড় আয়ে হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কর পরবর্তী মুনাফা প্রায় ১৬ গুণ বা ১ হাজার ৫১৩ শতাংশ বেড়েছে কোম্পানিটির। কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতসহ পারিপার্শ্বিক নানা সমস্যার কারণে কয়েক বছর ধরে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছিল মুন্নু সিরামিক। সাম্প্রতিক এসব সমস্যা কাটিয়ে পণ্যবৈচিত্র্য আনয়ন ও কারখানা সম্প্রসারণ করে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে কোম্পানিটি। নতুন তিনটি লাইনে উৎপাদন শুরু হওয়ায় চলতি বছর বিক্রি ও মুনাফা বেড়েছে। মুন্নু সিরামিকের পরিচালক (ফিন্যান্স) ফয়েজ মাহফুজ উল্লাহ বলেন, কারখানায় গ্যাস সঙ্কট কাটিয়ে চলতি বছরই পুরো উৎপাদনে ফিরেছে কোম্পানি। নতুন তিনটি লাইনে উৎপাদন শুরু হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। পাশাপাশি কারখানার পুরনো বর্জ্য বিক্রির মাধ্যমে আয় যোগ হওয়ায় হিসাব বছরের প্রথমার্ধে মুনাফা বেড়েছে। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মুন্নু সিরামিকের পণ্য বিক্রি হয়েছে ৫১ কোটি ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকার; আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায়। এ সময়ে পণ্য বিক্রি প্রায় ১২ কোটি টাকা বা ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বাড়লেও সে তুলনায় উৎপাদন ব্যয় না বাড়ায় মোট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির মোট মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা; আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে মোট মুনাফা বাড়লেও পরিচালন ব্যয় না বাড়ায় এক্ষেত্রে ভাল সফলতা পেয়েছে কোম্পানিটি। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে মুন্নু সিরামিকসের পরিচালন মুনাফা ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা; চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে যা ৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি কারখানার শিল্পবর্জ্য বিক্রি বাবদ ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা যোগ করে নিট মুনাফায় চমক দেখিয়েছে তারা। আগের বছরের তুলনায় কর পরবর্তী মুনাফা প্রায় ১ হাজার ৫১৩ শতাংশ বা ১৬ গুণ বেড়েছে কোম্পানিটির। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে এর নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা; আগের বছর যা ছিল মাত্র ৩৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৬৯ পয়সা; আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১০ পয়সা। সর্বশেষ প্রান্তিকে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা; আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৫ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯১ টাকা ৮৯ পয়সা। জানা গেছে, পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে ২০১৬ সালের শুরুতেই নতুন নতুন লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করে মুন্নু সিরামিক। মেশিনারি ক্রয়সহ কারিগরি কাজে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে তিনটি লাইন স্থাপন শেষে নতুন পণ্যের বাজারজাতের অপেক্ষায় রয়েছে কোম্পানিটি। নতুন লাইনের ফলে কোম্পানির দৈনিক উৎপাদন ১০ লাখ পিস থেকে প্রায় ২৫ লাখ পিসে উন্নীত হবে। এতে কোম্পানির বার্ষিক নিট বিক্রিও প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এর কর্মকর্তারা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে মুন্নু সিরামিক। ২০১৭ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১১ পয়সা। ২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় মুন্নু সিরামিক। সে হিসাব বছরে ৯ পয়সা ইপিএস দেখায় কোম্পানিটি। ডিএসইতে মুন্নু সিরামিক শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ১৩৭ টাকা ৪০ পয়সা। এক বছরে এ শেয়ারে সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১৩৯ টাকা ৪০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ৩৬ টাকা। ১৯৮৩ সালে শেয়ারবাজারে আসা মুন্নু সিরামিকের পরিশোধিত মূলধন ২৫ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। রিজার্ভ ২০০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৫১ লাখ ২৪ হাজার ৪২১টি। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ১৮ শতাংশ এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রতিষ্ঠান ১৩ দশমিক ৯৫, বিদেশী দশমিক শূন্য ৩ ও বাকি ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
×