ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান রোনাল্ডোর

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান রোনাল্ডোর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের বর্বরতার শিকার হয়ে দেশটি থেকে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ সরকারও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব মানবতাও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে লাল-সবুজের দেশের। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি সম্ভবত এখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং রাখাইনদের বর্বর-নিষ্ঠুর নির্যাতনের মুখে সহায়-সম্পদ সব হারিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। নাফ নদী পাড়ি দিয়ে প্রায় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ। তাদের করুণ দশা দেখে কাঁদছে বিশ্ব মানবতা। এ অবস্থা দেখে মন কেঁদেছে বর্তমান বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে মানবিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান ৩৩ বছর বয়সী বিশ্বনন্দিত ফুটবল তারকা। বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া সন্তান কোলে নেয়া এক পিতার ছবির পাশে নিজের সন্তানদের নিয়ে একটি ছবিও পোস্ট করেন সি আর সেভেন। রোনাল্ডো এর আগেও শিশুদের সাহায্যে অনেক সেবা ও দাতব্যমূলক কাজ করেছেন। যুদ্ধাহত ফিলিস্তিনী শিশুদের জন্যও তার দু’হাত প্রসারিত হয়েছে। এবার রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য হৃদয় কাঁদছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী এই ক্রীড়াবিদের। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে আসছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার শিশু রয়েছে যাদের স্বজন বলতে পৃথিবীতে আর কেউ নেই। বাবা-মা সবাইকে হারিয়েছে তারা। টেকনাফের উদ্বাস্তু শিবিরে এসব শিশু চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন পার করছে। পৃথিবীর নানাপ্রান্ত থেকে সাহায্য পৌঁছালেও শিশুদের জন্য তা অপ্রতুল। শিশুদের কথা চিন্তা করেই অন্তর কেঁদেছে রিয়াল মাদ্রিদ তারকার। তার নিজেরও তো চারটি শিশু সন্তান আছে। বড়জন ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র স্কুলে যায়। বাকি তিনজনের বয়স এখনও এক বছর পার হয়নি। একটি সন্তান এসেছে সারোগেট পদ্ধতিতে। অন্য দু’জন জমজ, জন্ম দিয়েছে রোনাল্ডোর বর্তমান বান্ধবী জিওর্জিনা রডিগুয়েজ। আগেরদিন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের হাইভোল্টেজ ম্যাচে পিএসজিকে হারিয়েছে রোনাল্ডোর ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। যেখানে জোড়া গোল করেছেন তিনি নিজে। রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে করেছেন ১০১তম গোল। সবমিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তার গোল দাঁড়িয়েছে ১১৫টিতে। এমন দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের পর কোথায় উদযাপনে মন দেবেন সি আর সেভেন। তা না করে তিনি নেমে গেছেন মানবিক কাজে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ প্রতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভ্যারিফায়েড পেজে পোস্ট করেছেন রোনাল্ডো। সেখানে তিনি ব্যবহার করেছেন কয়েকটি ইমোজি। প্রথমটিতে লিখেছেন ওয়ান, এরপর পৃথিবীর ইমোজি। অর্থাৎ একটাই পৃথিবী। এরপর মাঝে লাভ (ভালবাসার) ইমোজি দিয়ে লিখেছেন, ‘যেখানে আমরা আমাদের সন্তানদের ভালবাসি। দয়া করে সাহায্য করুন # রোহিঙ্গা, # রিফিউজি সেভ দ্য চিল্ড্রেন।’ অর্থাৎ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এবং তাদের শিশুদের রক্ষা করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। সেখানে দুটি ছবিও পোস্ট করেছেন সি আের সেভেন। ওপরে দিয়েছেন একটি রোহিঙ্গা শিশুর ছবি। যে কিনা তার বাবার কোলে। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে রোনাল্ডোর চার সন্তানসহ তাকে। সেখানে আবার দুটি ঠিকানাও দিয়ে রেখেছেন। খেলাধুলার বাইরে রোনাল্ডো বিভিন্ন ধরনের দাতব্য কর্মকান্ডের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। যে কারণে তাকে বলা হয় সবেচেয়ে বেশি ‘চ্যারিটেবল ক্রীড়াবিদ’। সেভ দ্য চিল্ড্রেন, ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ডভিশন ও ২০১৫ সহ বিপুল সংখ্যক দাতব্য সংস্থার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করে আসছেন তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপকূলে স্কুলঘর নির্মাণে অর্থ সংগ্রহের জন্য রোনাল্ডো ২০১১ সালে তার ইউরোপীয় গোল্ডেন বুট ট্রফিটি নিলামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেখানে এর মূল্য উঠেছিল ১২ লাখ পাউন্ড। মুমূর্ষু শিশুদের জরুরী চিকিৎসা সেবা দিতে তহবিল সংগ্রহের জন্যও নিলামে দিয়েছিলেন তার ২০১৩ সালের ব্যালন ডি’অর ট্রফি।
×