ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

নিখিল মানখিন ॥ ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই। ওষুধের প্রতিরোধী প্রবণতা মহামারি আকার ধারণ করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, যথেচ্ছ ব্যবহারে কার্যকারিতা হারাচ্ছে এন্টিবায়োটিক। প্রায় ৫৬ শতাংশ এন্টিবায়োটিক ওষুধ কাজ করছে না। রোগীদের দেহে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতা বেড়েছে। জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রথাগত এন্টিবায়োটিক কাজে আসছে না। এটি মানুষ ও পশু স্বাস্থ্য এবং কৃষি সেক্টরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশু খাদ্যের জন্য ব্যবহৃত প্রায় ৫০ প্রকারের এন্টিবায়োটিক আজ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। প্রতিরোধী জীবাণু পরবর্তীতে পশু থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হতে পারে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, চিকিৎসকদের পক্ষেও ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অবাধে ওষুধ বিক্রি করে থাকে ফার্মেসির লোকজন। অনেক সময় রোগী ও তাদের লোকজনও চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ ও তা অনুযায়ী ওষুধ কেনার প্রয়োজন অনুভব করেন না। ওষুধ প্রতিরোধী বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। অনেক চিকিৎসক ব্যবসায়িক স্বার্থে রোগীদের জন্য অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর রোগীরাও আস্থার সঙ্গে ব্যবহার করে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের তালিকাভুক্ত ওষুধ। এতে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অনেক রোগী। ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার সারাবিশ্বকে আজ ভাবিয়ে তুলেছে। এমন অবস্থা মোকাবেলায় জরুরী ভিত্তিতে ছয়টি করণীয় তুলে ধরেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেগুলো হলো- প্রতিটি দেশকে সম্মিলিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। পর্যবেক্ষণ ও ল্যাবরেটরি ক্যাপাসিটি বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনীয় ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধসহ ওষুধের গুণাগুণ নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধের ব্যবহার ভালভাবে মনিটরিং করতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে। শক্তিশালী গবেষণার পাশাপাশির চিকিৎসার নতুন নতুন ওষুধ ও উপকরণের বিস্তার ঘটাতে হবে। ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, যেসব এন্টিবায়োটিক কুষ্ঠ, যক্ষ্মা, গনোরিয়া ও সিফিলিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে, সেগুলোর অনেক এন্টিবায়োটিক আজ জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওষুধ প্রতিরোধী মোকাবেলায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে অনেক সাধারণ সংক্রামক রোগ ভাল হবে না। এতে অসহায় অবস্থায় রোগীকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে। ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়টি খুব পরিষ্কার। এ বিষয়ে আজ উদ্যোগ না নিলে আগামীকাল একটি রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে না। লাখ লাখ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারে এমন অতি প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ নষ্ট করে ফেলতে পারি না আমরা। ওই সব ওষুধ যাতে প্রতিরোধী না হয়ে ওঠে সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পৃথিবীতে অর্ধেকের চেয়ে বেশি ওষুধের ক্ষেত্রে ভুল প্রেসক্রিপশন হচ্ছে অথবা ওষুধ ভুলভাবে বিতরণ বা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় অর্ধেক রোগী ভুলভাবে ওষুধ গ্রহণ করছে। এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার না হলে সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটায়। এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সাবধানী না হলে খুব শীঘ্রই মানবজাতি জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রাণরক্ষার যুদ্ধে পরাস্ত হবে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞ চিকিৎসকরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, এন্টিবায়োটিক ওষুধ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সমাদৃত এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে যার অবদান অবিস্মরণীয়। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, অপব্যবহারের কারণে এ এন্টিবায়োটিক ওষুধের ক্ষমতা কোন কোন জীবাণু ধ্বংসের ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশেও এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কম নয়। মানুষ কোন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেই প্রাথমিকভাবে তার নিকটবর্তী দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতে পারে। ওষুধ কিনতে কোন বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং ডাক্তারের কোন প্রেসক্রিপশন না লাগায় মানুষ সহজেই এ কাজটি করছে। এটি হচ্ছে জনসচেতনতার অভাবে। ফলে অপরিমিত ও মাত্রাহীন ওষুধ খাওয়ার ফলে এর জীবাণুনাশক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এন্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা রোধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে জানান অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ডাঃ মাহমুদুর রহমান বলেন, এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহারে নিশ্চিত করতে হলে চিকিৎসক ও রোগী উভয়কেই বিবেকবান হতে হবে। ফার্মেসিগুলো নিয়ন্ত্রণে না আসলে এবং জেনারেল প্র্যাক্টিশনার্স চিকিৎসকরা যতক্ষণ বিবেকবান না হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে না। মেডিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত না হয়ে অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয়। এন্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ও ভুল ব্যবহারে প্রতিরোধী জীবাণুর উদ্ভব ঘটছে। এভাবে এন্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারায়। প্রতিরোধী জীবাণুর কারণে কিছু এন্টিবায়োটিক এখন অনেক ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধে কাজে আসে না। সেজন্য একটি নবজতাক শিশুকেও অনেক সময় কয়েক প্রকারের এন্টিবায়োটিক দিতে হয় বলে জানান ডাঃ মাহমুদুর রহমান। প্রায় ৫৬ শতাংশ এন্টিবায়োটিক ওষুধ কাজ করছে না : গবেষণা প্রতিবেদন ॥ প্রায় ৫৬ শতাংশ এন্টিবায়োটিক ওষুধ কাজ করছে না। রোগীদের দেহে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতা বেড়েছে। জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রথাগত এন্টিবায়োটিক কাজে আসছে না। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ গবেষণার কাজ করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। দেশের সরকার স্বীকৃত গবেষণাগারে এসব পরীক্ষা করা হয় বলে জানায় পবা। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন হাসপাতালের ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে যে পরিমাণ এন্টিবায়োটিক তৈরি হচ্ছে তার অর্ধেকেই ব্যবহৃত হয় গবাদিপশু উৎপাদনে। যা মানুষের জন্য ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বয়ে আনছে। এভাবে বিভিন্ন কারণে বিশ্বে ওষুধ প্রতিরোধী জটিল আকার ধারণ করেছে। অনেক সংক্রামক রোগ খুব সহজে ভাল হচ্ছে না। একের পর এক ওষুধ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। পবার সাধারণ সম্পাদক লেনিন চৌধুরী বলেন, মানবদেহে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি মানবসভ্যতার জন্যই বিরাট হুমকি। শরীরে অপরিকল্পিত এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার এর অন্যতম কারণ। এছাড়া মুরগি ও মাছের খামারেও ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিকে এসব ঝুঁকি বাড়ছে। এই গবেষণাকাজের যৌক্তিতা তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। বাংলাদেশে গবাদিপশু উৎপাদনে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কতটা রয়েছে এবং তা মানব দেহের জন্য কি ধরনের ক্ষতি করতে পারে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, সমস্যাটা হলো প্রাণী দেহের জীবাণুর কারণে যে অসুখ হবে তার জন্য প্রাণী দেহের নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে মানুষের জন্য নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক সেগুলো দিয়ে প্রাণীর চিকিৎসা করা হচ্ছে। মানবদেহের এন্টিবায়োটিক বেশি মাত্রায় কড়া এবং নতুন ধরনের হয়ে থাকে। বলা আছে মানবদেহের এন্টিবায়োটিক যেন প্রাণীদের না খাওয়ানো হয়। কিন্তু এখন সেটাই করা হচ্ছে। আ ব ম ফারুক আরও বলেন, অনেকগুলো কোম্পানি আছে যারা ফিস ফিড, ক্যাটেল ফিড, পোল্ট্রি ফিড তৈরি করার সময় এন্টিবায়োটিক মিশিয়ে দিচ্ছে। সেখানে মানুষের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক এবং পশুর চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক মিশিয়ে দিচ্ছে। ফলে জীবাণুর শরীরে এন্টিবায়োটিক রেজিটেন্স তৈরি হচ্ছে। খাবারের সঙ্গে এন্টিবায়োটিক মিশিয়ে পশু মোটাতাজাকরণ প্রসঙ্গে আ ব ম ফারুক বলেন, কোম্পানিগুলো বলছে সামান্য পরিমাণ এন্টিবায়োটিক মিশিয়ে দেয়ার ফলে গরু, মুরগি, মাছ রোগমুক্ত থাকবে, তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে। এই বিষয়ের কোন বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই। কিন্তু ব্যবসায়িক দিক চিন্তা করে এই কাজটা করছে। শুধু আামদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেও খামারিরা সরল বিশ্বাসে এগুলো কিনে নিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন এন্টিবায়োটিকের কোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। যদি রোগ প্রতিরোধ করতে হয় তাহলে টিকা দিতে হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে নিচ্ছে। যার ফলে আমাদের শরীরে এন্টিবায়োটিক রেজিটেন্স তৈরি হচ্ছে। এটা সারা পৃথিবীর সমস্যা কিন্তু বাংলাদেশে এর প্রভাব বেশি সেটাই সমস্যা। আ ব ম ফারুক বলেন, যেসব পশুকে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে এবং সেই পশুর রক্তের সংস্পর্শে, পশুর সংস্পর্শে আমরা সংক্রমিত হতে পারি। আরেকটা বিষয় হলো যেসব পশুর শরীরে এন্টিবায়োটিক রেজিটেন্স জীবাণু তৈরি গেছে তার যে মল ত্যাগ করছে সেগুলো পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে এবং সেখান থেকে অন্যান্য জীবাণুর জিন ট্রান্সফারমেশন ঘটছে। এভাবে একটা মহামারি নীরবে ঘটে যাচ্ছে কিন্তু আমরা টের পাচ্ছি না। আমরা সেই কারণে বলছি দুধ, মাছ, মাংস যাই খাই না কেন এগুলোর মধ্যে সামান্য পরিমাণে এন্টিবায়োটিক চলে আসছে। এর ফলে প্রধান ঝুঁকিটা হলো আমরা ঐ এন্টিবায়োটিক রেজিটেন্স হয়ে যাই। এর ফলে সাধারণ সমস্যাগুলো এন্টিবায়োটিক দিয়ে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না। আমরা আশঙ্কা করছি একটা সময় আসবে আমরা যদি এ সমস্যাগুলো বন্ধ না করি তাহলে অতি সাধারণ সংক্রমনে মানুষ মারা যাবে। ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ বিক্রি ॥ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার পেছনে ওষুধ বিক্রেতা ও ক্রেতার অসাবধানতাও ভূমিকা রাখছে। সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্ত রাজধানীর পূর্ব তেজতুরিবাজারের ইউসুফ মিয়া (৪০)। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই তিনি ফার্মগেটের একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে গেলেন। ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতাও আর দেরি করেননি। ইউসুফের হাতে তিনিও তুলে দিলেন এন্টিবায়োটিক ওষুধ। শুধু তাই নয়, আর দিয়ে দিলেন কিছু ডাক্তারি পরামর্শ। এভাবে দেশের সর্বত্রই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সতর্কবার্তাতেও কাজ হয়নি। কিন্তু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে অনেক রোগী। ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া এক রোগের ওষুধ খেতে গিয়ে অন্য আরেকটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমন অবাধ ওষুধ বিক্রি অব্যাহত থাকলে খুব শীঘ্রই দেশের জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন ওষুধ ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। এভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে গজিয়ে উঠেছে লাখ লাখ ওষুধের দোকান (ফার্মেসি)। ওই সব দোকানে ওষুধ বিক্রির কাজে জড়িতদের শতকরা ৯০ ভাগেরই ওষুধ সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারে না রোগীরা। ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন চাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন না ওষুধ বিক্রেতারা। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ওষুধের নাম উল্লেখ করলেই তা ক্রেতার হাতে তুলে দেয়া হয়। আবার অনেক দিনের মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো প্রেসক্রিপশন নিয়ে অনেক রোগী ফার্মেসিতে যান। প্রেসক্রিপশনের তারিখ ও ওষুধ খাওয়ার সময়সীমা দেখার প্রয়োজনবোধও করেন না বিক্রেতারা। আর্থিক বাণিজ্যই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠে। ফার্মগেটের তেজতুরিবাজারের আরেকটি ফার্মেসি। ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দোকানদারের কাছে ১ পাতা মক্সিন (এন্টিবায়োটিক) চাইলেন। আর ক্রেতাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করেই ওষুধের পাতাটি তুলে দিলেন বিক্রেতা। বিক্রেতাকে টাকা দিয়ে চলে গেলেন ক্রেতা। প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, সব ধরনের ওষুধ বিক্রির জন্য প্রেসক্রিপশন লাগে না। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ওষুধ কিনে না। প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ বিক্রি করতে গেলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। ওষুধের ভাল-মন্দের বিচার করবে ক্রেতারা। রোগী দেখার জন্য নয়, আমরা ওষুধ বিক্রি করার জন্য বসেছি বলে জানান বিক্রেতা। এভাবে ঐ বিক্রেতার মতো রাজধানীর প্রায় প্রতিটি ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির ঘটনা ঘটছে।
×