ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের আলোচনা

খালেদার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে পাঠিয়ে সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। মওদুদ বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি নিয়ে সরকার ছলচাতুরি করছে। খালেদা জিয়াকে বেশি দিন কারাগারে আটকে রাখতেই সরকার এই ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, রায় হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর শুক্র ও শনিবার বাদ দিয়ে রবি, সোম, মঙ্গল, বুধবার ও বৃহস্পতিবার গেল এখন পর্যন্ত রায়ের কপি পাওয়া যায়নি। এর অর্থই হলো যতদিন কারাগারে রাখা যায়। তবে তা বুমেরাং হচ্ছে, এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে। তিনি বলেন, বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার জবাব দেবে। নির্বাচনে দেশের মানুষ যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগের খবর আছে। আপীলের পর খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদী ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, যখনই রায়ের নকল পাব, আমরা আপীল ফাইল করব। আপীলের সঙ্গে সঙ্গে আমরা খালেদা জিয়ার জামিন চাইব। আমরা বিশ্বাস করি ৫ বছরের সাজার মেয়াদ থাকলে জামিন এমনিতেই কোর্ট লিবারেলি দেখে। তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি জাল জালিয়াতির একটা মামলা। এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। এটি কোন ফৌজদারি নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা। খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই রাজনৈতিক উদ্দেশে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অথচ যে মামলার কোন ভিত্তি নেই। মওদুদ বলেন, খালেদা জিয়াকে যে কারাগারে রাখা হয়েছে তা একটি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগার। তাঁকে নির্জন কারাবাসে রাখা সংবিধান ও কারাবিধির পরিপন্থী। এখানে তাকে রাখার উদ্দেশ্য তার মনোবল ভেঙ্গে দেয়া। তার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা কোন আইন বা জেল কোডেও নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সামনে দু’টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারকে অপসারণ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা। মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা এবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করব কিভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে একটি সরকারকে অপসারণ করা যায়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা যায়। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করব। কিন্তু সরকার চায় খালেদা জিয়াকে ছাড়া ভোট করতে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু চেয়ারপার্সনকে ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দী করে সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার পথও দূরে ঠেলে দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম খালেদা জিয়া এ মামলায় খালাস পাবে এবং তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল প্রমুখ। সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে রায়ের কপি পাওয়া যাচ্ছে না - রিজভী ॥ সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের কপি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশ করবে বিএন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, রায়ের ৫ দিনের মধ্যে বিবাদী পক্ষকে রায়ের কপি সরবরাহের বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে সেই বিধান মানা হচ্ছে না। এটা বিচার বিভাগের উপর সরকারের আগ্রাসী হস্তক্ষেপ। দেশের প্রথিতযশা আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীরা বিস্মিত হয়েছেন খালেদা জিয়ার রায়ের কপি না দেয়াতে। তিনি বলেন, তাহলে নিশ্চয়ই রায় সংশোধন করা হচ্ছে। এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।
×