ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরবঙ্গে খাস জমির অর্ধেক প্রভাবশালীদের দখলে

উদ্ধার করা হলে ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

উদ্ধার করা হলে ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব

সমুদ্র হক ॥ উত্তরবঙ্গে যে ৩ দশমিক ২০ লাখ একর খাস জমি আছে তার অর্ধেকই প্রভাবশালীদের দখলে। যা মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অবৈধ দখলে থাকা এই ভূমি উদ্ধার করে অন্তত ১০ লাখ ভূমিহীন মানুষকে আশ্রয় দেয়া যায়। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ভূমিহীনের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। যাদের একটি অংশ নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ভাসমান। বাকিরা বসতভিটা জমি জিরাত থেকে বঞ্চিত। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধ দখলে থাকা খাস জমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কখনও মামলার কারণে উদ্ধার প্রক্রিয়া থমকে যায়। পরে আর উদ্ধার হয় না। সরকারও অবৈধ খাস জমি উদ্ধারে জোড়ালো কোন উদ্যোগ নেয় না। ফলে দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না। খোঁজ খবর করে জানা যায়, জমি ও জরিপ রেকর্ড অধিদফতরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীর সঙ্গে প্রভাবশালীদের ‘গভীর সম্পর্ক’ আছে। তাদের সঙ্গে ‘গোপনে নয়ছয়’ করার অভিযোগও পাওয়া যায়। খাস ভূমির অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আছে, বড় ব্যবসায়ী, মহাজন, জোতদার, হাউজিং ব্যবসায়ী, দাদন ব্যবসায়ী, এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, বড় ঠিকাদার ও অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উঠতি ধনী। এই প্রভাবশালীরা জাল দলিল, ভুয়া রেকর্ডের মাধ্যমে খাস জমি নিজেদের নামে নামজারি করে ভোগ দখল করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া খাস জমি থেকে ভূমিহীনদের বিতারিত করে দখল নেয়া হয়েছে। বগুড়ার শেরপুর ধুনট এলাকা ও অন্যান্য এলাকায় এ ধরনের অনেক ঘটনা আছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় খাস জমির পরিমাণ ২ লাখ ৯২ হাজার ৯শ’ ৮২ একর। এর মধ্যে অকৃষি ভূমি ১ লাখ ৮ হাজার ৯শ’ ৮৩ একর। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় খাসভূমির পরিমাণ ১ লাখ ৭ হাজার ২শ’ ৭৩ একর। এর মধ্যে ৬০ হাজার ৮শ’ ১৫ একর অকৃষি। দুই বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাসজমি রাজশাহী বিভাগে। বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথাঃ সরকার ইচ্ছা করলেই এইসব খাসভূমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করতে পারে। অনেক সময় সরকার খাসভূমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলে। এ ধরনের আশ্রয়ণ প্রকল্প বগুড়া সোনাতলা, সারিয়াকান্দি এলাকায় আছে। সেখানে ২০ থেকে ৩০ ভূমিহীন পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়। আশ্রয়ণের মধ্যে পুকুর ও চষাবাদের ভূমি থাকে। ভূমিহীনদের কর্মজীবী করে তোলার ব্যবস্থা থাকে। বর্তমানে এ ধরনের কর্মসূচীতেও ভাটা পড়েছে। বগুড়া অঞ্চলে খাস জমির পাশাপাশি নদী ভূমিও দখল করা হচ্ছে। বগুড়া নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া এখন শুকনো প্রায়। প্রভাবশালীরা নদী ভূমির ভেতরে বালি ফেলে দখল করে অবকাঠামো গড়ে তুলছে। বগুড়া জেলা প্রশাসন গেল প্রায় দশ বছর ধরে কয়েক দফা নদী ভূমি দখলকারীদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেনি। ক’বছর আছে নদী ভূমি দখলকারীদের একটি তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কোন অজানা কারণে তাতেও ভাটা পড়ে। বগুড়ার একটি প্রভাবশালী বেসরকারী সংস্থা নদী ভূমি ও খাসভূমির বড় দখলদার। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থ্ইা নিতে পারে না প্রশাসন। খাস ভূমি দখলদারদের অনেকে দখলের পরই ভূমির আকৃতি পাল্টে ফেলে। কেউ আবাদি জমিতে গড়ে তোলে অবকাঠামো। কেউ স্থাপন করে শিল্প কারখানা। কেউ মাটি কেটে বানায় পুকুর। সেখানে করে মাছের চাষ। উত্তবঙ্গের ভূমিহীনদের এক নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, উত্তরাঞ্চলে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ ভূমিহীন হয়ে ভাসমান। খাস জমির অর্ধেক উদ্ধার করে পরিকল্পিতভাবে বরাদ্দ দিলে অন্তত দশ লাখ পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। এই বিষয়ে বিভাগীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, খাস ভূমি উদ্ধারের প্রক্রিয়াটি চলমান। মাসে কোন না কোন স্থানে খাস ভূমি উদ্ধার হচ্ছে। অনেক দখলদার আদালতে মামলা দায়ের করলে খাস ভূমি উদ্ধারে বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। খাস ভূমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়াটিও কখনও জটিল হয়ে দেখা দেয়। তিনি জানান, খাস ভূমি উদ্ধার করে সেখানে আদর্শ গ্রাম গড়ে তোলার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
×