ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সব বাধা জয় করে ফাতেমা এখন মাইক্রোসফটের এ্যাম্বাসেডর

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 সব বাধা জয় করে ফাতেমা এখন মাইক্রোসফটের এ্যাম্বাসেডর

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ বাংলাদেশের প্রায় ৫২ শতাংশ মেয়েরই ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়। এই বাস্তবতার বাইরে ছিল না গৃহকর্মী ফাতেমা খাতুনের জীবন। অভাব-অনটনের সংসারে জন্ম ফাতেমার। মাত্র ৯ বছর বয়সে তাই তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে। সেখানে সামান্য বেতনে কাজ করতে হতো তাকে। প্রায় দু’বছর পর কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার এই কিশোরীর বয়স যখন ১১ বছর তখন হঠাৎ পারিবারিকভাবে ফাতেমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল ২৫ বছর বয়সের এক যুবকের সঙ্গে। কিন্তু নিজের সাহস ও মেধা দিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে বাল্যবিয়ে রুখে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ফাতেমা এখন মাইক্রোসফটের এ্যাম্বাসেডর। সম্প্রতি মাইক্রোসফট বাংলাদেশ তাদের ওয়েবসাইটে ফাতেমাকে নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেছে। ফাতেমা মাইক্রোসফটকে বলেছে, আমার সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল যখন আমি বুঝলাম আমাকে আসলে বিয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে। বিয়ের সব আয়োজন চূড়ান্ত। সব প্রস্তুতি যখন শেষ তখন ঢাল হয়ে দাঁড়ায় কুমার বিশ্বজিত বর্মণের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আশার আলো পাঠশালা। তারা ফাতেমার বিয়ে ঠেকানোর পাশাপাশি তার পড়াশোনার দায়িত্বও নেয়। পরবর্তীতে পিএসসি ও জেএসসিতে ‘এ প্লাস’ পায় ফাতেমা। এরপর ফাতেমা ডিজিটাল স্কিল কোর্সে ভর্তি হয়। ইংরেজীতে ভাল দখল তৈরি হলে আশার আলো প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় মাইক্রোসফট বাংলাদেশ তাকে তাদের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর নির্বাচন করে। ফাতেমা জানান, ‘ইয়ং বাংলায় আইসিটি প্রশিক্ষণ নিয়ে ও আশার আলো পাঠশালায় পড়ালেখা করে আমি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে আমি অসহায় মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে চাই। তারা যেন বাল্যবিয়ে রুখে নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই প্রচেষ্টা করব এবং তাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে সাহায্য করব।’ ফাতেমার এই পথে তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র ছিল কম্পিউটার শিক্ষা। যার শুরুতে ছিল ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট। বর্তমানে ফাতেমা সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের ডিজিটাল স্কিল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। অন্য যেসব কিশোরী বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে আছে ফাতেমা তাদের ডিজিটাল দক্ষতার ওপর প্রশিক্ষণ দেন। মাইক্রোসফট তাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডরও বানিয়েছে। জানা গেছে, সারাদেশে মাইক্রোসফট বাংলাদেশের আটটি আইটি ল্যাব রয়েছে। যা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জে আশার আলো পাঠশালার আইটি ল্যাবটি মাইক্রোসফট বাংলাদেশের অনুদানে প্রতিষ্ঠিত। এই ল্যাবে ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত পাঁচটি কম্পিউটার রয়েছে। ল্যাবটিতে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়ে ও নারী নামমাত্র মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশু বিশেষত বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া মেয়েদের শিক্ষার পথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৩ জানুয়ারি রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জে ‘আশার আলো পাঠশালা’ নামক সামাজিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই পাঠশালার অধীনে ১৬০ সুবিধা বঞ্চিত ছেলেমেয়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে শিক্ষার সুবিধা পাচ্ছে। এর মধ্যে ৯০ মেয়ে রয়েছে। যাদের মধ্যে ৬৫ মেয়েকে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছিল।
×