ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন দলটি। শুক্রবার দুপুর তিনটায় সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে তালিকাটি হস্তান্তর করা হয়। বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের সীমান্তের মাঝামাঝি জায়গায় (নো ম্যানস ল্যান্ডে) ৬ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন। এদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি আরেকটি বৈঠক হবে। এরই মধ্যে যারা আশ্রয় নিতে এসেছেন, তাদের মধ্যে আট হাজার লোকের একটি তালিকা মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ধাপে তাদের ফিরিয়ে নেবে বলে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল তাদের জানিয়েছে। তবে তার আগে তালিকাটি যাচাই করবে মিয়ানমার সরকার। মন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘের গঠিত কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয় বৈঠকে। মিয়ানমার প্রতিনিধিরা তাদের সীমান্তে থাকা ইয়াবার ৪৯টি কারখানা বন্ধ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও সীমান্ত নিরাপত্তা, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও তথ্য আদানপ্রদানসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ে সচিবালয়ে উপস্থিত হন। এ সময় তাকে ফুলে দিয়ে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডিএমপির একটি দলের সালাম গ্রহণ করেন মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর বেলা তিনটায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি ও মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে দুই দেশের শূন্য রেখায় অবস্থানকারী কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া, সীমান্তে মিয়ানমারের সামরিক স্থাপনা বন্ধ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার ও চোরাচালান বন্ধ, সীমান্ত সমস্যার সমাধান এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রসঙ্গত, জাতিগত নিপীড়নে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। মিয়ানমারের সীমান্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতবছর ঘটনার সূত্রপাত। এমন ঘটনার পর গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। তাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ চলছে। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় পৌনে ১১ লাখ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত বছরের ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফর করেন। সেখানে দুই দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়। ১৯ ডিসেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সফরে আসেন মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিয়াও সোয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি।
×