ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে পাওয়ার ক্রাশারে আখ মাড়াই ॥ দুই চিনিকল লোকসানে

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নাটোরে পাওয়ার ক্রাশারে আখ মাড়াই ॥ দুই চিনিকল লোকসানে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ১৬ ফেব্রুয়ারি ॥ নাটোর সুগার মিল ও নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল জোন এলাকায় ব্যাপকহারে ও অবৈধভাবে পাওয়ার ক্রাশারে আখ মাড়াই করার কারণে চলতি বছরে চিনির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। আখ মাড়াই মৌসুমের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অবৈধ পাওয়ার ক্রাশারে আখ মাড়াই চলতে থাকলে আবারও আর্থিক লোকসানের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে নাটোরের দুইটি চিনি কল। মিল কর্তৃপক্ষ আখ সঙ্কটের কারণে মিল আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা করছে বলে জানালেও আখচাষী আন্দোলনের নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। আখচাষীরা মিলে আখ সরবরাহ করেও যথাসময়ে টাকা না পাওয়া, পুঁজি সঙ্কট, আখের ওজনসহ বিভিন্নখাতে দুর্নীতি ও মিলের অব্যবস্থাপনার কারণেই চিনিকল দুইটি লোকসানের মুখে পড়ছে বলে দাবি করেছেন তারা। আখচাষীদের দাবি ও স্বার্থের সঙ্গে সমন্বয় করে মিল কর্তৃপক্ষ আখচাষী বান্ধব না হওয়া ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়ায় চাষীরা মিলে আখ সরবরাহে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে মিল জোন এলাকায় আখের চাষ কমছে। পাশাপাশি সময় মতো ন্যায্য দাম না পাওয়ায় পাওয়ারক্রাশারে আখ মাড়াই করছেন চাষীরা। তবে, আন্দোলনকারী চাষী ও নেতাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে মিল কর্তৃপক্ষ বলছে পাওয়ার ক্রাশার বন্ধ করা না হলে মিলের লোকসানে ঠেকানো যাবে না। এ ছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে জমিতে আখের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে দাবি মিল কর্তৃপক্ষের। নাটোর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শহীদ উল্লাহ বলেছেন, মিল জোন এলাকায় প্রায় ১১০টি পাওয়ারক্রাশারে অবৈধভাবে আখ মাড়াই করে গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে। আর এসব কর্মকা- ‘আখ মাড়াই অধ্যাদেশ ১৯৫৬’ পুরোপুরি লঙ্ঘনের সামিল। আখ সঙ্কটের কারণেই মিলের চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১ দশমিক ৬ লাখ টন আখ মাড়াই করে নাটোর সুগার মিলের চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১২৪০০ টন নির্ধিারণ করা হয়েছে। তবে মিলটি চলতি বছর ১.৩২ টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার টন চিনি উৎপাদন করতে সক্ষম হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। জেলার নর্থ বেঙ্গল চিনিকল জোন এলাকায় ৬০০টি এবং নাটোর সুগার মিল এলাকায় প্রায় ২৫০টি পাওয়ারক্রাশার চালু আছে। চিনিকল দুটির জোন এলাকায় তারা প্রতিদিন ৮৫০টি পাওয়ারক্রাশারে প্রায় ৩৪’শ টন আখ মাড়াই করছে। যেখানে চিনিকল দুটো প্রতিদিন ৩২’শ টন আখ মাড়াই করছে। বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষী ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খলিল জানান, আখ মাড়াই অধ্যাদেশ ১৯৫৬ সাল ছিল পাকিস্তান সরকারের তৈরি একটা কালো আইন। ‘আখ মাড়াই করা চাষীর মৌলিক অধিকার।’ তাই আমরা নাটোরের দুইটি চিনিকল এলাকায় পাওয়ারক্রাশারে আখ মাড়াই অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, চিনিকল তাদের অব্যবস্থাপনা ও ওজনে কারচুপির কারণে আখ পাচ্ছে না। নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, খারাপ আবহাওয়ার কারণে দিনকে দিন আখের চাষের হার কমেই চলেছে। বর্তমানে একর প্রতি ৮-১০টন উৎপাদন হয়। কিন্তু কয়েক বছর আগে আখ উৎপাদনের হার ছিল একরপ্রতি ১৬-২০টন। আখচাষীরা যদি এভাবে পাওয়ারক্রাশারে আখ মাড়াই চালিয়ে যায় তবে মিল বন্ধ হয়ে যাবে। আখচাষী আলাউদ্দিন আহমদ জানান, চলতি বছর পাওয়ারক্রাশারে আখ মাড়াই লাভজনক নয়। তবু চিনিকল কর্তৃপক্ষ থেকে পুঁজি না পাওয়ায় মিলে আখ বিক্রি করতে পারছি না। তাই পাওয়ারক্রাশারেই আখ বিক্রি করতে হচ্ছে। আখচাষী মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি প্রায় এক মাস আগে নাটোর চিনি কলে ৮ টন আখ বিক্রয় করেছেন কিন্তু এখনও তিনি আখের মূল্য পাননি। আমি একজন গরিব কৃষক। আমার অন্যান্য চাষাবাদ ও সংসার পরিচালনা করতে পাওয়ারক্রাশারে আখ মাড়াই না করে উপায় নেই।ওজন ও অন্যান্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে নাটোর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শহীদ উদ্দিন বলেন, তারা অনলাইন ব্যাংকিং এবং চলতি মৌসুমে চিনি বিক্রি না হওয়ায় চাষীদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
×