ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়াখালীর ৩৫২ প্রাইমারী স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পটুয়াখালীর ৩৫২ প্রাইমারী  স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী, ১৬ ফেব্রুয়ারি ॥ জেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এক হাজার ২৩৩টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ রয়েছে এক হাজার ২৪ জন। কর্মরত আছেন ৬৭২ জন। ৩৫২ বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিনে সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের ফুলতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, শিক্ষক রীতা হাওলাদার এক শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে পাঠদান দিয়ে আবার ছুটছেন অন্য শ্রেণীকক্ষে। সেখানেও পাঠদান দিচ্ছেন তিনি। এভাবে এ শ্রেণীকক্ষ থেকে অন্য শ্রেণীকক্ষে ছুটে গিয়ে তাকে পাঠদান দিতে হচ্ছে। এই স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত দুই শিফটে ছয়টি শ্রেণীকক্ষে এভাবে পাঠদান দিচ্ছেন শিক্ষক রীতা হওলাদার। ফুলতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী প্রায় ১০০ জন। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের পদ রয়েছে পাঁচটি। দীর্ঘদিন একজন শিক্ষক দিয়ে চলছিল স্কুলটি। মাঝে মধ্যে ডেপুটিশনে একজন শিক্ষক দেয়া হয়। তবে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র দুই জন। তিনি (রীতা হাওলাদার) ও প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষক এস,এম শাহাবুদ্দিন খালেক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক না থাকায় তাকেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এর বাইরেও তাকে স্কুলের দাফতরিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম চলে। প্রভাতী শাখা ও দিবা শাখায় মোট ৬টি ক্লাস চালাতে হচ্ছে তাদের। তবে দাফতরিক কাজ কিংবা মাসিক সভায় যোগ দিতে জেলা সদরে যাওয়া হলে অপর শিক্ষককে একাই স্কুলের সকল শ্র্রেণীর পাঠদান চালিয়ে যেতে হয়। এতে করে পাঠদান ব্যাঘাত ঘটছে। একই ইউনিয়নের ৮৪নং ভাজনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অনুরূপ চিত্র। সেই বিদ্যালয়েও দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক আয়েশা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বসহ শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য শুধু ফুলতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাজনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নয়, জেলার এক হাজার ২৩৩ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৫২ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ সকল স্কুলে সহকারী শিক্ষকরাই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও জেলার এক হাজার ২৩৩ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার হাজার ৪৩২ জন সহকারী শিক্ষকের পদের অনুমোদন থাকলেও কর্মরত আছেন চার হাজার ২০৫ জন। শূন্য রয়েছে ২২৭ পদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, স্কুল ভেদে প্রতিটি স্কুলে পাঁচজন থেকে ২০ জন পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ রয়েছেন। তবে যাদের তদবির ভাল তারা গ্রামে আসেন না। তদবির করে শহরে চলে যাচ্ছেন। অথচ যেই স্কুলে যাচ্ছেন সেই স্কুলে শিক্ষকের প্রয়োজনই নেই। এ কারণে গ্রামের দুর্গম এলাকায় শিক্ষক থাকতে চাচ্ছে না ফলে এ সকল এলাকার স্কুলগুলোতেই শিক্ষক সঙ্কট বেশি। জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান বলেন, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। তবে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।
×