ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুঃসহ যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে রাজধানীবাসী

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দুঃসহ যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে রাজধানীবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুঃসহ যানজটে ক্রমেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে রাজধানীবাসী। যানজট যেভাবে বাড়ছে সেই তুলনায় রাস্তা বাড়ছে না। অপরিকল্পিতভাবে নগরীতে এমনভাবে ভবন তৈরি হয়েছে, যেখানে রাস্তা বাড়ানোর সুযোগও কম। প্রধান প্রধান সড়কেই ভয়াবহ যানজট, তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে অলিগলি মহল্লাতেও। অলিগলিসহ কিছু কিছু সড়কে যানজটের মূল কারণ রিকশা। রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে রিকশার সংখ্যা। অথচ প্রায় ৩০ বছর ধরে রিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অথচ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের এক জরিপ অনুযায়ী, রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৭৯ হাজার ৫৪৭টির। বাকি রিকশাগুলো অবৈধ। মূলত যানজট নিরসনে ১৯৮৬ সালের পর থেকে রাজধানীতে রিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দেয় সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, পুরো রাজধানীতে ৮০ হাজার ৪৭৩টি রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ডিএসসিসি এলাকায় ৫২ হাজার ৭৫৩ ও ডিএনসিসিতে ২৬ হাজার ৭২০টি রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। রিকশার নতুন লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণীর নামসর্বস্ব সমিতি ও সংগঠন। তারা রিকশার লাইসেন্সস্বরূপ নম্বর প্লেট দিচ্ছে। এক একটি নম্বর প্লেটের বিপরীতে রিকশা প্রতি তিনমাস পরপর আদায় করা হচ্ছে ৪৫০ টাকা। আর লাইসেন্সের কথা বলে নেয়া হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকা। রাজধানীতে সরকারীভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার সুযোগে অবৈধভাবে রিকশার লাইসেন্স নিয়ে জমজমাট বাণিজ্য চলছে। বেশ কয়েকটি চক্র লাইসেন্স বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ লাইসেন্স বাবদ এগুলো থেকে রাজস্ব পাচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রিকশার আধিক্যের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এ কারণে রিকশার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। তবুও রাজধানীতে রিকশা বন্ধ করা যায়নি;বরং প্রতিদিনই রিকশার সংখ্যা বাড়ছে। যেহেতু রাজধানীতে রিকশা চলাচল বন্ধ করা যায়নি, তাই সিটি কর্পোরেশন লাইসেন্স দিলে বরং সরকারের রাজস্ব বাড়ত। জানা গেছে, অবৈধ রিকশার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রায় ২৮টি সংগঠন। সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিভাগ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, মহানগর রিকশা মালিক, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি, ফেডারেশনসহ আরও অনেক বেনামি সংগঠন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, রিকশার লাইসেন্স বন্ধ এরপরও সংঘবদ্ধ চক্র লাইসেন্স বা নম্বর প্লেট দেয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। যেহেতু রাজধানীর গণপরিবহনে বিশৃঙ্খল অবস্থা তাই স্বল্প দূরত্বে যাত্রীদের কাছে রিকশা বেশ জনপ্রিয়। তাই যাত্রীদের চলাচলে রিকশা একটা বড় ভূমিকা রাখছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে রিকশা চলাচলবিষয়ক একটি সমন্বয় কমিটি করা যেতে পারে। যারা পাড়া-মহল্লায়, অলিগলির রিকশার রুট এবং ভাড়া নির্ধারণ করে দিবে। পাশাপাশি লাইসেন্স বা নম্বর প্লেট প্রদান করবে। এতে করে যাত্রী সাধারণও উপকৃত হবে পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ও করতে পারবে। রিকশায় চড়ে যাওয়ার সময় রাজধানীর বেইলি রোডে যানজটের কবলে পড়েছেন শিহাবুল ইসলাম নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য রিকশা ভাল বাহন। কিন্তু রিকশার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। শুনেছি রিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ তবুও রাজধানীতে এত রিকশা কোথা থেকে আসে? রাজধানীর মিরপুর এলাকার রিকশাচালক আয়নাল হক লাইসেন্সের বিষয়ে বলেন, সমিতি ফেডারেশনের নম্বর প্লেট না থাকলে রাস্তায় চলাচলে সমস্যা হয়। আবার গ্যারেজে রিকশা রাখাও যায় না। তাই নতুন করে তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স বা নম্বর প্লেট নিয়েছি যার জন্য প্রতি তিনমাস পরপর ৪৫০ টাকা করে দিতে হয়। রিকশা ভ্যান মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০০১ সালে সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। এরপর সেই চুক্তি অনুযায়ী তারা সিটি কর্পোরেশনের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন পরবর্তীতে সেগুলোর নিবন্ধন দেয়নি। বাধ্য হয়ে তারা এখন সংগঠনের পক্ষ থেকে নম্বর প্লেট দিয়েছে।
×