ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছেঁড়া জাল সেলাইয়ে জীবিকা

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ছেঁড়া জাল সেলাইয়ে জীবিকা

মাছ ধরার ছেঁড়া জাল সেলাই করা পটুয়াখালীসহ উপকূলের অসংখ্য মানুষের জীবিকার অন্যতম অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাগরে মাছ ধরা জেলের সংখ্যা যত বাড়ছে, তত বাড়ছে ছেঁড়া জালবুনিয়েদের সংখ্যা। বছরের অন্তত ৬-৭ মাসের রুটি রুজির অন্যতম সংস্থান আসে ছেঁড়া জাল সেলাই করে। বিশেষত অভাবী পরিবারের লোকজনই এ কাজে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। রাতদিন চলে সেলাইয়ের কাজ। এর পাশাপাশি জালে দড়ি ও নোঙর বাঁধাসহ অন্যান্য কাজেও মিলছে পারিশ্রামিক। যা সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে সহায়ক হয়ে উঠছে। উপকূলের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এ সব তথ্য মিলেছে। পটুয়াখালী জেলায় বর্তমানে জেলে পরিবারের সংখ্যা ৭০ হাজার। এর একটা বড় অংশ সাগর-নদীতে ইলিশ ধরে। একটা সময়ে মাছ ধরার জন্য হাতে বোনা জাল ব্যবহার হতো। বর্তমানে মেশিনে বোনা জালের ব্যবহার বেশি। হাতে বোনা জালের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। তাই বলে জালবুনিয়েরা একেবারে বেকার হয়ে যাননি। আজও তাদের পেশা ঠিকে আছে। ছেঁড়া জাল সেলাই যেমন অনেকের প্রধান পেশা। আবার অনেকের কাছে এটি সহায়ক পেশা। সাগর-নদী থেকে জেলেরা যখন মাছ ধরা শেষে ফিরে আসেন। তখন আর জাল অক্ষত থাকে না। জালের ফাঁস ছেঁড়াফারা হয়ে যায়। কিন্তু জেলেদের কাছে সেই ছেঁড়া জাল জোড়াতালি দেয়ার সময় থাকে না। জালবুনিয়েদের শরণাপন্ন হতে হয়। জালবুনিয়েরাও এ সুযোগে কিছু অর্থ আয় করে নেন। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার খালগোড়া স্লুইস ঘাঁট, চরমোন্তাজ স্লুইস ঘাঁট, চরআন্ডা খেয়া ঘাট, কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট, গঙ্গিপাড়া খেয়াঘাট, চরকাসেম খেয়াঘাট, চরগঙ্গা, টুঙ্গিপাড়া, মৌডুবী, চালিতাবুনিয়া, জাহাজমারা, দশমিনা উপজেলার আলীপুরা, রণগোপালদী, গলাচিপা উপজেলার চরকাজল, চরবিশ্বাস, পানপট্টি, আমখোলা, হরিদেবপুর, পক্ষিয়া, বোয়ালিয়া, কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলীর খাজুরা জেলেপল্লী, মহিপুর থানার নিজামপুরের জেলেপল্লী, আলীপুর-মহিপুর আড়ত পট্টি, ধুলাসরের চরগঙ্গামতি, লালুয়ার চান্দুপাড়া, চারিপাড়া, চম্পাপুরের দেবপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছেঁড়া জাল সেলাই করার এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় নারী শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষকে ছেঁড়া জাল সেলাইয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। সবাই একই তালে ছেঁড়া জাল সেলাইয়ে ব্যস্ত। আলাপচারিতায় জালবুনিয়েরা জানান, ইলিশ ধরার ছিঁড়ে যাওয়া একেকটি শাইন জাল সেলাই করতে ৫-৬ জন মানুষের ৪-৫ দিন লেগে যায়। এতে প্রত্যেকে একেকদিনে তিন-চার শ’ টাকা পারিশ্রামিক পান। আর জালের দুই পাশে দড়ি লাগিয়ে একেক জন ২শ’ থেকে আড়াই শ’ টাকা মজুরি পান। তবে সাগরে যখন মাছ শিকার বন্ধ থাকে তখন পারিশ্রামিক কিছুটা কমে যায়। কারণ ওই সময়ে জেলেরা নিজেরাই নিজেদের জাল সেলাই করে। সাগরে যখন প্রচুর মাছ ধরা পড়ে তখন তাদের মজুরি বাড়ে। রাঙ্গাবালী খালগোড়ায় ছেঁড়া জাল সেলাইয়ে ব্যস্ত জাফর মাঝি জানান, এ মুহূর্তে কাজের চাপ কিছুটা কম। -শংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে
×