ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনাঞ্চলে প্রতিদিন ১০ টন মাছ উৎপাদন

জনপ্রিয় হচ্ছে ট্যাঙ্কে মৎস্য চাষ

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 জনপ্রিয় হচ্ছে ট্যাঙ্কে মৎস্য চাষ

জনপ্রিয় হচ্ছে যশোরের আফিল এ্যাকোয়া ফিসের ট্যাঙ্ক চাষে পোনা উৎপাদন। প্রতিবছর ফার্মটিতে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের পোনা উৎপাদন বাড়ছে। এতে একদিকে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে যেমন মাছের উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থান হচ্ছে শ্রমিকদের। জানা গেছে, ২০১২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শার্শা উপজেলার মান্দারতলায় ২ বিঘা জমিতে ৪০টি ট্যাঙ্কের মাধ্যমে আফিল এ্যাকোয়া ফিসের কার্যক্রম চালু করা হয়। প্রতিটি ট্যাঙ্কের উচ্চতা ২৫ ফুট ও চওড়া ৪ ফুট। ২০১৪ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিানটি বাণিজ্যিকভাবে পোনা উৎপাদন শুরু করে। বছরের মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই পোনা উৎপাদন কার্যক্রম চলে। পরবর্তীতে বাজার উপযোগী মাছ উৎপাদন করে আফিল এ্যাকোয়া ফিস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা প্রকৃতিক উৎস থেকে রেনুপোনা সংগ্রহ করি। পরে ট্যাঙ্কের মাধ্যমে রেণু নার্সিং করে পুকুরে মজুদ করার পর বিভিন্ন প্রজাতির পোনা উৎপাদন হয়ে থাকে। ৪০ থেকে ৬০ দিনে ৮ লাখ পোনা উৎপাদন হচ্ছে আফিল এ্যাকোয়া ফিসে। প্রতি পিস শিং, মাগুর ও পাপদা মাছের পোনা ১ থেকে ২ টাকা এবং রুই, কাতলা, মৃগেল পোনা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পোনা উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২০ লাখ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পোনা উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি পিস। আফিল এ্যাকোয়া ফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজার বিঘা জমির ওপর ৮টি ইউনিট চালু রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ১০ টন মাছ ও মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। এখানে ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড, মোঃ শফিকুর রহমান জানান, খুলনা বিভাগে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ট্যাঙ্ক পদ্ধতিতে আফিল এ্যাকোয়া ফিস পোনা উৎপাদন করছে। তাদের মাছের পোনার গুণগতমান অনেক ভাল। কেননা ট্যাঙ্ক পদ্ধতিতে অন্য কোথাও থেকে পানি আসতে পারে না, আবার খাবার দেয়া হয় মানসম্মত। সবমিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পোনা উৎপাদন দেশের মৎস্যখাতে অবদান রেখে চলেছে। এছাড়া আফিল এ্যাকোয়া ফিস মাছও উৎপদন করছে। বছরে তারা প্রায় ৫ হাজার টন মাছ উৎপাদন করে বাজারজাত করে আসছে। এসব মাছ বিলুপ্ত প্রায় মাছের পোনা থেকে আবাদ করা হচ্ছে। মূলত ২০০৯ সালে আফিল এ্যাকোয়া ফিসের যাত্রা শুরু করা হয়। তখন শুধু মাছ উৎপাদন হতো। আর ২০১২ সালে তারা রেণু পোনা উৎপাদন শুরু করেন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৩শ’ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করেছিল। এরপর ক্রমেই বাড়তে থাকে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা। ২০১০-১১ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন করা হয় ৫শ’ টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৭শ’ টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সাড়ে ৭শ’ টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১১শ’ টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১২শ’ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ হাজার টন উৎপাদন করা হয় এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার মেট্রিক টন মাছ ও মাছের পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এ ব্যাপারে আফিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও যশোর ১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন জানান, ২০০৮ সালে আমি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর শার্শা উপজেলার মান্দারতলা এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে ভাবতে শুরু করি। এরপর মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেই গড়ে তুলি এ্যাকোয়া ফিস ফার্ম। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×