ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ তরিকুল ইসলাম

জনগণের রাজনীতি...

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জনগণের রাজনীতি...

যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করেন তারা জনগণের প্রতিপক্ষ হতে পারেন না। আর রাজনীতির নামে সেই জনগণকে যারা পুড়িয়ে মারেন, সেটা তাদের রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস। যে রাজনৈতিক দল জনগণকে পুড়িয়ে মেরে ক্ষমতায় আসতে চায় সেটা কখনোই কোন রাজনৈতিক দল হতে পারে না, সেটা শতভাগ সন্ত্রাসী দল। রাজনীতি করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি, জনগণের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করেছেন। জাতির পিতা কখনোই তাঁর নিজের দোষে জেল খাটেননি, তিনি জেল খেটেছেন বাংলার জনগণের স্বার্থ আদায়ের আন্দোলন করার জন্য। পাকিস্তান সরকার জাতির পিতাকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছেন। কিন্তু তিঁনি জনগণের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আপস করে প্রধানমন্ত্রিত্ব নেননি। জাতির পিতা তার জীবনের সোনালি সময়টুকু কেবলই বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে কাটিয়েছেন। সাত কোটি বাঙালী জাতির পিতার এক ডাকে জড়ো হতো, জাতির পিতার নির্দেশে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তো। আসলে বঙ্গবন্ধু কখনও জনগণকে মেরে রাজনীতি করেননি বরং জনগণকে বাঁচাতে নিজে বার বার কারাবরণ করেছেন, কষ্ট সহ্য করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছেন বাংলার জনগণ, কেননা তিনি ছিলেন বাঙালীর বন্ধু। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা কি দেখলাম? জিয়াউর রহমান গংরা বাঙালীর গৌরবকে হত্যা করে ক্ষমতা কেড়ে নিল। জিয়াউর রহমান রাজনীতি শুরু করেছেন হত্যার মধ্য দিয়ে। প্রকৃতঅর্থে জিয়াউর রহমান রাজনীতি করেননি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। আর জাতির পিতার রাজনীতি শুরু হয়েছে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে। জিয়ার পর জেনারেল এরশাদ, তিনিও ক্ষমতায় বসলেন সামরিক শাসন জারি করে। জনগণকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা খাটাতে লাগলেন। জেনারেল এরশাদ স্বৈরশাসক হয়ে মেরে কেটে দেশ চালাতে লাগলেন। অথচ বঙ্গবন্ধু আইয়ুুব খানের মার্শাল ল’ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। যার জন্য এক সময় জেনারেল এরশাদের কাছ থেকে জনগণ তাদের ক্ষমতা কেড়ে নিল। বাংলাদেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করেন শেখ হাসিনা। গত ২৮ বছর যাবত শেখ হাসিনাও তাঁর বাবার মতো বাংলাদেশের জনগণকে ভালবেসে রাজনীতি করছেন। বাংলার জনগণ জিয়াউর রহমানের স্বৈরশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসুরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। যার জন্য ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার হাতে দল পরিচালনার নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনা বাংলার জনগণের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেননি। সকল কষ্ট বুকের মধ্যে চাপা দিয়ে বাবার মতো জনগণের ভাগ্য-উন্নয়নের কাজে লেগে গেলেন। তিনি তার জীবন বাজি রেখে জনগণের কল্যাণে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তো বাংলার জনগণ কখনোই তাদের প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিতে ডাকেননি। এমনকি তিনি নিজেও মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানের সেনা ব্যারাক থেকে ফিরেননি। খালেদা জিয়া কেবলই তার স্বামীর অস্ত্র ঠেকিয়ে কেড়ে নেয়া ক্ষমতা ভোগ করার লালসায় রাজনীতি করতে এসেছেন। বিএনপির রাজনীতি মানেই সন্ত্রাস আর দুর্নীতি। বিএনপি কখনই জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করে না, এরা নিজ স্বার্থে রাজনীতির নামে সন্ত্রাস করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচালের নামে যে সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, সেটা কখনোই কোন সুস্থ রাজনীতি হিসেবে গণ্য নয়। বিএনপির কাছে প্রশ্নÑ আপনারা যে গাড়িগুলো পুড়িয়ে দিলেন, মানুষগুলোকে পুড়িয়ে হত্যা করলেন, আহত করলেন, তাদের কী দোষ ছিল? এমন তো হতে পারে, ঐ গাড়িটি মালিকের শেষ সম্বল। ঐ গাড়িটির আয় দিয়ে তার সংসার চলে, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালায়। তাহলে গাড়িটি পুড়িয়ে দেবার পর তার অবস্থা কি হলো? যে মানুষগুলোকে (ড্রাইভার, হেলপার, পথচারী) পুড়িয়ে মারলেন তাদের দোষ কি? আপনাদের (বিএনপি) মতে তাদের দোষ কি নৌকায় ভোট দেয়া? এটা তাদের দোষ নয়। জনগণ মনে করে শেখ হাসিনা সরকার থাকলে তারা ভাল থাকে, তাই তারা শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়। বিএনপির উচিত শেখ হাসিনার মতো জনগণের আস্থা অর্জন করা, ভালবাসা অর্জন করা। জনগণ ভোট দেয় না বলে, ভালবাসে না বলে যদি তাদের মেরে ফেলেন তাহলে রাজনীতি করবেন কাদের নিয়ে? শেখ হাসিনা রাজনীতি করেন জনগণের জন্য, জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করার জন্য। তিনি বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছেন। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশকে একটি প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করিয়েছেন। শেখ হাসিনার মেয়ে বিশ্বের অবহেলিত প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধী মানুষকে দেশের বোঝা নয় সম্পদে পরিণত করছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার ছেলেরা দুর্নীতি করে, টাকা আত্মসাত করে বিদেশে পাচার করছে। খালেদা জিয়া নিজেও এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যার জন্য তার পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। এতিম শিশুরা যাতে মনে না করতে পারে তাদের বাবা-মা নেই সেজন্য শেখ হাসিনা এতিমখানাগুলোতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছেন। মূলত মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বিরোধিতা করেছিল তারাই পরবর্তীতে পাকিস্তানী জামায়াতী ইসলামের একটি শাখা হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতী ইসলাম নামে শাখা খোলে। এরা ছিল রাজাকার। এরা তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য ইসলামকে বিক্রি করে। তাদের সঙ্গে যুক্ত বিএনপিও। ইসলামে তো মানুষ মারার কোন নিয়ম নেই, কিন্তু তারা কেন ক্ষমতার লোভে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। রাজনীতি তো মানুষের জন্য, মানুষ যদি মেরে ফেলেন তাহলে রাজনীতি করবেন কাদের নিয়ে। রাজনীতি মানুষের জন্য, রাজনীতি জনগণের জন্য, রাজনীতি করেন দেশরতœ শেখ হাসিনা। জনগণও তাই শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে যেমনটা ছিল তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। আগুনে পুড়িয়ে মেরে রাজনীতি করা যায় না, রাজনীতি করতে হবে শেখ হাসিনার মতো জনগণকে ভালবেসে, জনগণের ভালবাসা নিয়ে। লেখক : সভাপতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
×