ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর ক্যান্সার

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শিশুর ক্যান্সার

বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় আড়াই লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে বছরে এ সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এদের মধ্যে ১০ শতাংশের কম আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা সেবার আওতায় আসছে। বাকি ৯০ শতাংশই থাকছে যথাযথ চিকিৎসার বাইরে। এদের মধ্যে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুই বেশি। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ১০টি হাসপাতালে শিশুক্যান্সার বিভাগ থাকলেও সেবা পাওয়া যায় মাত্র তিনটিতে। শিশুদের বেশি হচ্ছে রক্ত ও ব্রেন ক্যান্সার। এ ছাড়া কোলন, লিভার ও অস্থি (বোন) ক্যান্সারেও আক্রান্ত হচ্ছে তারা। যদিও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রকৃত ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ আক্রান্ত অনেকেই হাসপাতালে আসছে না। অনেকে শেষ সময়ে হাসপাতালে এলেও যথাযথ চিকিৎসা পায় না। তাই এ পর্যন্ত কত শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে, তারও সঠিক হিসাব নেই। এমন অবস্থায় সোমবার পালিত হয়ে গেল বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শিশু-কিশোরদের কাছাকাছি, সেবা নিয়ে আমরা আছি।’ চিকিৎসকরা বলছেন, খাদ্য গ্রহণের কারণে ক্যান্সার বেড়ে যাওয়ার ঘটনা। অতিরিক্ত মাত্রায় ফাস্টফুড গ্রহণ, কোমল পানীয় পান করা, শাক-সবজি কম খাওয়াসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে শিশুরা বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকের বংশগত কারণেও ক্যান্সার হচ্ছে। যেহেতু শিশু ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তাই এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ জরুরী হয়ে পড়েছে। এ কথা সত্য, সারাদেশেই শিশু ক্যান্সার চিকিৎসায় সঙ্কট রয়েছে। রয়েছে চিকিৎসকের স্বল্পতাও। জানা গেছে, সারা দেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন তিন অধ্যাপক। সরকারী হাসপাতালে কোন অধ্যাপক নেই। এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। শিশুদের ক্যান্সার প্রতিরোধে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কারণ দেশে মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর। অথচ ৫-১০ বছর বয়সী একজন শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ক্যান্সার নিয়ে এমন আতঙ্কের মধ্যে একটি প্রতারণার কথা উঠে আসছে পত্র-পত্রিকায়। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার তৈরি একটি স্প্রে দিয়েই হবে একাধিক জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা! এর জন্য কোন ডাক্তার বা কোন টেস্টেরও প্রয়োজন হবে না। কিডনি, লিভার, হার্ট, জরায়ু, ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ শরীরে সব অসুখের সমাধান মেলে শুধু এই স্প্রে দিয়েই। এর নাম ‘বায়ো স্প্রে প্লাস’। বলা হয়েছে, প্রতিদিন এই তরলটি দু’বার ব্যবহারে সুস্থ থাকে শরীর। তবে যারা এটি ব্যবহার করছেন তারা বলছেন- এর ফলে শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। বেড়ে গেছে অন্য অসুখের মাত্রাও। এক্ষেত্রে ভুয়া ছাড়পত্রের লোগোও ব্যবহার করে প্রতারণামূলক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটা চক্র। এই স্প্রেটি চোরাই পথে আসছে আবার বিক্রিও হচ্ছে গোপনে। সচেতন এবং উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি এটি বিশ^াস করবে না, তাই শহরের মানুষের চেয়ে গ্রামের মানুষকেই টার্গেট করেছে এই প্রতারক শ্রেণী। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুকৌশলে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এটি বিক্রি করা হচ্ছে। এক মাসের এই একটি স্প্রের দাম রাখা হচ্ছে সাত হাজার টাকা। এটা যে এক ধরনের প্রতারণা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জটিল ও ব্যয়বহুল এই রোগটি নিয়ে রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে এই ধরনের প্রতারণা সত্যিই দুঃখজনক।
×