ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা বন্ধ না হওয়ার নেপথ্যে

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা বন্ধ না হওয়ার নেপথ্যে

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যে গত বুধবার এক স্কুলে ঢুকে সে স্কুলেরই সাবেক ছাত্র নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা করে। এটি সেদেশের স্কুলগুলোর চলতি বছরে বন্দুকের গুলিতে হতাহত হওয়ার ১৮তম ঘটনা। ২০১৮ সালের আগেও বহুবার বিভিন্ন স্কুলে এসল্ট রাইফেলের গুলিতে অনেক নিরপরাধ শিশু ও শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরেছে কিন্তু কোন প্রতিকার হয়নি। বারাক ওবামা চেয়েছিলেন, এমন একটি আইন পাস করতে, যাতে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বন্দুক, পিস্তল বা কোন ধরনের মারণাস্ত্র সহজেই হস্তগত করতে না পারে। তিনি এ বিষয়ে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তার উদ্যোগ ভেস্তে যায়। প্রধানত রিপাবলিকানরাই অস্ত্র আইনে বিধিনিষেধের বিপক্ষে বাধার প্রাচীর তুলে দেয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারা কেন জন নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত কল্যাণকর এই আইনটি পাস করতে দিল না, তার নেপথ্যে কী কারণ বিদ্যমান তা নিয়ে সকলের মধ্যে গভীর কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা আদৌ কোন দিন বন্ধ হবে কি না, তা একটি জাজ্বল্যমান প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। Ñইন্ডিপেন্ডেন্ট এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা আবশ্যক। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল রাইফেল এ্যাসোসিয়েশন বা এনআরএ নামে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীদের এক শক্তিশালী সংগঠন আছে, যারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার বিরুদ্ধে যাতে কংগ্রেসে কোন বিল না ওঠে বা আইন পাশ না হয় সেজন্য কোটি কোটি ডলার বিভিন্ন কংগ্রেস সদস্যদের দিয়ে থাকে। এমনকি তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও তার নির্বাচনে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দিয়েছিল, যার পরিমাণ ৩০ মিলিয়ন ডলারের মতো। কংগ্রেস ও সিনেট সদস্যরা যে তহবিল থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকে, তখন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হলেও তারা আর জনপ্রতিনিধি থাকেন না তারা হয়ে যান কায়েমী গোষ্ঠীর প্রতিনিধি। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ‘বন্দুক সহিংসতা প্রতিরোধ’ আন্দোলনের সহ-সভাপতি ক্রিস্টিন ব্রাউন বলেন, এনআরএ টাকা দিয়ে কংগ্রেসের উভয় দলের আইন প্রণেতাদের মুখ এমনভাবে বন্ধ করে রেখেছে যে, তারা কোনভাবেই বন্দুক বিক্রেতাদের স্বার্থের পরিপন্থী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। এখন দেশের প্রতিটি মানুষ চায়, যত্রতত্র বন্দুক বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হোক। শুধু তারাই চায় না যারা এসব অস্ত্র তৈরি করে। আরও বেশি পরিমাণে বন্দুক বিক্রি করতে চায়। ক্রিস্টিন ব্রাউন বলেন, ১৮৭১ সালে এনআরএ’র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রাইফেল শূটিংকে উৎসাহিত করে এর বৈজ্ঞানিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। বর্তমানে এটি বন্দুক প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে বিশাল অর্থ নিয়ে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয শীর্ষ পদে আসীন ব্যক্তিবর্গ ও আইন প্রণেতাদের মধ্যে লবিং করে বেড়ায়। এজন্য তারা ১৯৭৭ সালে পলিটিক্যাল এ্যাকশন কমিটি (পিএসি) নামে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির কর্মপন্থা অনুযায়ী তারা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন শ্রেণী বা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সে অনুযায়ী অর্থ বিলি বণ্টন করে থাকে। এসব শ্রেণী বিন্যাস এ-প্লাস থেকে ইংরেজী ‘আই লেটার’ পর্যন্ত হতে পারে। বর্তমানে সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককোনেল এ প্লাস ক্যাটাগরির নেতা হিসেবে পেয়েছেন ১৩ লাখ ডলার, অপরদিকে ২০১৬ সালে আরেক রিপাবলিকান স্পীকার পল রায়ান এ প্লাস ক্যাটাগরিতে থেকেও পেয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৭ ডলার। বর্তমান এ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস পদাধিকার বলে এ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং এ পর্যন্ত তিনি কত পেয়েছেন তা জানা যায়নি। অপরদিকে এনআরএ এবং পিএসির ক্যাটাগরি তালিকায় ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার ও ফ্লোরিডার বিল নেলসন উভয়েই ‘এ’ শ্রেণীভুক্ত বলে জানা গেছে। কাজেই মার্কিন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে যে কাউকে তাদের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করার জন্য প্রস্তুত থাকে। এজন্য তারা লবিং-এর জন্য এনআরএ-কে কত অর্থ দেয় তা জানা না গেলেও কেবল এনআরএ প্রতিবছর ২৫০ মিলিয়ন ডলার তদবির করার জন্য ব্যয় করে থাকে। নির্বাচনে ত্রিশ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে জয়লাভের পরপর ট্রাম্প আটলান্টায় এনআরএ’র জাতীয় কনভেনশনে যোগ দিয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আপনাদের সহযোগিতায় নির্বাচিত একমাত্র প্রেসিডেন্ট আজ এখানে উপস্থিত, আপনারা আমার মাধ্যমে এবং আমি আপনাদের মাধ্যমে বিকশিত হব। তখন থেকে ট্রাম্প আত্মরক্ষার নামে বন্দুক ক্রয় ও বহন করার পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা গোপনে আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও তাতে সাইলেন্সার লাগানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। কিন্তু ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা সব বিধিনিষেধ তুলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল কলেজসহ যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি সেগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছেন। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র কোম্পানির শেয়ার বাজার উর্ধমুখী এবং সে দেশের নাগরিকের আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়ে সরকারী নিষেধাজ্ঞা জারি হবে এ আশঙ্কায় দলে দলে অস্ত্র সংগ্রহ করছে।
×