ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের বারি

গোবর থেকে শুষ্ক রিসাইক্লিং সার

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

গোবর থেকে শুষ্ক রিসাইক্লিং সার

তরল গোবর সার হল্যান্ড বা জার্মানির কৃষিতে অপরিহার্য। কিন্তু ঐ সার যেমন দুর্গন্ধ, তেমনই তার পরিবহন থেকে শুরু করে অপসারণ পর্যন্ত খরচের অন্ত নেই। কিন্তু তরল সার থেকে যদি শুকনো, আকরিক, রিসাইক্লিং সার তৈরি করা যায়? জার্মানিতে মাঠে এই তরল গোবর সার দেবার মুশকিল হলো এই যে, বহু দূর থেকে ট্যাংকে করে সেই সার আনতে হয়, কেননা জার্মানিতে গরুবাছুরের খামারের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। স্টুটগার্টের এক গবেষক ও তাঁর সহযোগীরা তরল সার পরিবহনের সমস্যার এক সহজ সমাধান বের করেছেন। ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারফেসিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজির ড. জেনিফার বিলবাও জানালেন, ‘তরল গোবর সারে প্রচুর পানি থাকে। সেই পানি বয়ে নিয়ে যাওয়ার খরচ আছে। অপরদিকে অনেক এলাকার মাটিতে নিউট্রিয়েন্টের প্রয়োজন। কাজেই আমাদের আইডিয়াটা ছিল, তরল সার থেকে নিউট্রিয়েন্টগুলো বের করে, শুধু সেগুলোকেই অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।’ ল্যাবরেটরিতে তারা সেটা ইতোমধ্যেই পরীক্ষা করে দেখেছেন। তরল সারে কিছুটা অম্ল দিয়ে পানি থেকে নিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর পদার্থগুলো আলাদা করা হয়। তারপর পানিটা ছেঁকে নিউট্রিয়েন্টগুলো বের করে নেয়া হয়। বাকি পানি থেকেও মূল্যবান ফসফরাস ও ফসফেট ইত্যাদি ছেঁকে বের করা হয়। অ্যামোনিয়া হিসেবে যে নাইট্রোজেন পাওয়া যায়, তা অ্যামোনিয়াম সালফেট সারে পরিণত করা হয়। সেটা ঠিক কিভাবে করা হয়, সেটাই হলো ব্যবসার চাবিকাঠি। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়াটা থেকে বের হয় স্বচ্ছ একটি লিকুইড ও একটি গন্ধবিহীন, মিহি পাউডার। ড. বিলবাও বললেন, ‘আমরা তরল সার থেকে নানা পণ্য উৎপাদন করেছি, যেমন এ্যামোনিয়াম সালফেট, যা কিনা একটা নাইট্রিক সার। এছাড়া আছে ফসফেট ও সবশেষে এই সব আকরিক পদার্থ, যা আমরা গ্র্যানুলেট হিসেবে তৈরি করি, কেননা তা মাঠে ছড়ানো আরও সহজ হয়।’ রিসাইক্লিং সার কতটা কার্যকর? প্রক্রিয়াটা চাষীদের পক্ষে স্বভাবতই ভাল। কিন্তু এই রিসাইক্লিং সারের ক্ষেত্রেও কি সেকথা প্রযোজ্য? সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেছে হোহেনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের হটহাউস তথা নার্সারিতে। এখানে ওই কৃত্রিম সার ও তার কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। সেখানকার কৃষি বিজ্ঞানী আন্ড্রেয়া এহমান জানালেন, ‘আমরা এখানে বিভিন্ন ধরনের গাছে তরল সার থেকে পাওয়া ফসফেট সার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছিÑ যেমন এক্ষেত্রে রাইগ্রাস, যা এক ধরনের ঘাস। প্রথম টবটিতে কোন সার দেওয়া হয়নি। কিন্তু অন্য দুটি টবের ঘাসগুলো প্রায় একই পরিমাণ বেড়েছে, যদিও তাদের একটিতে তরল সার দেয়া হয়েছে ও অপরটিতে তরল সার থেকে পাওয়া রাসায়নিক ফসফেট।’ কিন্তু কৃষি তো আর নার্সারি বা হটহাউসে হয় না, চাষের কাজ হয় চাষের ক্ষেতে। আন্ড্রেয়া এহমান বললেন, ‘আমরা সাইলোর ভুট্টা আর শীতের গম শস্য নিয়ে মাঠে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছিÑ প্রথমত এখানে হোহেনহাইমে, দ্বিতীয়ত স্পেনে, আমাদের প্রকল্প সহযোগীদের সঙ্গে, যেখানকার আবহাওয়া সম্পূর্ণ আলাদ। এক্ষেত্রেও আমরা দেখাতে পেরেছি যে, তরল সার থেকে নিষ্কাশিত রিসাইক্লিং সার কৃষিক্ষেত্রেও আকরিক সারের মতোই সমান কার্যকরি।’ এ পদ্ধতিতে খরচ কমবে, দুর্গন্ধ কমবে, মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে নাইট্রেটের পরিমাণ কমবে। কাজেই লাভ ছাড়া কোন লোকসান নেই। কাজেই গরু-বাছুরের খামারগুলোর গোবর থেকে শুকনো আকরিক সার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হতে দৃশ্যত আর খুব বেশি বাকি নেই। ড. বিলবাও জানালেন, ‘শুধুমাত্র সার বেচে আপাতত এই প্রক্রিয়ার খরচ ওঠে না। কিন্তু খামারচাষীদের ঐ তরল সার অপসারণের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় করতে হয়, সেকথা ভাবলে আমরা ইতিমধ্যেই বলতে পারি যে, খামারে তরল সার রিসাইক্লিং যন্ত্র বসানোটা লাভজনক হতে পারে।’ সূত্র : ডয়েচ ভেলে, বিবিসি
×