ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যিনি প্রথম শহীদ হন তিনি হলেন মোহাম্মদ রফিক। ওই সময়ে তিনি মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজের আইকম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাদের আসল বাড়ি ছিল সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল গ্রামে। তিনি ছিলেন মরহুম আব্দুল লতিফের জ্যেষ্ঠপুত্র। মায়ের নাম রাফিজা খানম। ঘটনার সময় শহীদ রফিকের বয়স ছিল অনুর্ধ ২০। শহীদ হওয়ার আগে তার বিবাহের প্রস্তুতি চলছিল। শহীদ দিবস সংখ্যা ১৯৫৪’র সাপ্তাহিক সৈনিক থেকে জানা যায় তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য রমনায় একত্রিত হন। পুলিশের বেদম লাঠিচার্জ এবং টিয়ারগ্যাসের কারণে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে আশ্রয় নেয়ার সময় শহীদ রফিক তাদের সঙ্গে ছিলেন। তখন সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছিল। শহীদ রফিক এ সময় পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অন্যদের সঙ্গে সোচ্চার ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলির আঘাতে তার মাথা উড়ে যায়। তিনি মাটিতে পড়ে তখনই মারা যান। ১৪ মার্চ ১৯৫২ তারিখে দৈনিক আজাদে সরকারী তথ্য বিবরণী থেকে যে খবর ছাপা হয় সেই অনুসারে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুল্লাহর উপস্থিতিতে আজিমপুর মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুল গফুর তার জানাজা পড়ান। শহীদ রফিককে দাফন করার হয় সংগোপনে আত্মীয়স্বজনের অজ্ঞাতে আজিমপুর গোরস্তানের অসংরক্ষিত এলাকায়। কিন্তু কোন মহল এই ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত কবরখানা সংরক্ষণের জন্য এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে তার কবর ভেঙ্গে ফেলে নতুন কবরস্থান তৈরি করা হয় সেখানে। কিন্তু আজ তার কবরের কোন চিহ্নমাত্র নেই। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। ১৯৫৪ সালের শহীদ সংখ্যা সাপ্তাহিক সৈনিকের উদ্ঘাটিত তথ্য থেকে জানা যায়Ñ শহীদ রফিকের পিতা ছেলের জন্য বিবাহ ঠিক করে ছেলের খোঁজে ঢাকা এসেছিলেন ঘটনার তিনদিন পর। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার ছেলের শহীদ হওয়ার খবর নিয়ে গ্রামে ফিরে যান। অন্য এক খবরে বলা হয় ’৫১ সালের নবেম্বর মাসে পিতামাতার পিড়াপীড়িতে রফিকের বিয়ের কথাবার্তা পাকা করা হয় নিজ গ্রামের নাসিরউদ্দিন আহমেদের কন্যা পানুর সঙ্গে। তার পিতা বিয়ের দিন-তারিখ ধার্য করার জন্য ’৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে যান এবং রফিক ঢাকায় থেকে যান। রফিক মাঝে মাঝেই ভগ্নিপতি মোবারক আলী খানের হাজী ওসমানগনি রোডের বুক বাইন্ডিংয়ের কারখানায় যাতায়াত করত। মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধের কারণে সেদিন একুশের মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক।
×